ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাসস, নয়াদিল্লি
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ১১: ১৩

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) গতকাল নয়াদিল্লিতে সফররত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই আহ্বান জানান।

বিনিয়োগের জন্য সব প্রতিবেশী দেশকে অগ্রাধিকার দেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা (ভারতীয় ব্যবসায়ীরা) বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আমরা আপনাদের স্বাগত জানাই।’

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বাংলাদেশ ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সিইওদের বলেন, তাঁরা এটা ব্যবহার করতে পারেন এবং সেখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া সিইওরাও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সালমান বলেন, বাংলাদেশে যাঁরা ব্যবসা করছেন, তাঁরা তাঁদের ব্যবসা সম্প্রসারণে আগ্রহী।

সিআইআইয়ের পক্ষে সিইওরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তাঁরা এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কাজ করতে চান। বিশেষ করে কৃষি, আইটি ও লজিস্টিক সেক্টরে যৌথভাবে কাজ করার উপায় খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা।

সিইওরা ভারতের বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে আইটি খাতে তাঁদের সাফল্য তুলে ধরেন এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে বাংলাদেশে সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে চান।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা নিজ দেশে বিরাজমান সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করেন।

সিইওরা নন-ট্যারিফ বাধা সম্পর্কেও কিছু বিষয় উত্থাপন করলে এই বিষয়ে সালমান বলেন, তাদের (সিআইআই) এই প্রক্রিয়াটি সহজ করার জন্য তাদের (ভারত) সরকারকে বলতে বলা হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান। অন্যদের মধ্যে অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বাণিজ্যমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম, মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুস্তাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ উপস্থিত ছিলেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরীসহ কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বৈঠকে অংশ নেন।

এ ছাড়া আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পুরী, সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, অ্যাপোলো হসপিটালস এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপারসন শোবানা কামিনেনি, ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত মাধব বৈদ্য, ডাবর ইন্ডিয়া লিমিটেডের সিইও মোহিত মালহোত্রা, অমৃত সিমেন্ট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার বাগলা, আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সিইও (এনার্জি) দীপক অমিতাভ, সাংখ্য ল্যাবসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং সিওও বিশ্বকুমার কয়ারগাড্ডে, সিটিও এবং তেজস নেটওয়ার্কস লিমিটেডের (টাটা গ্রুপ কোম্পানি) প্রতিষ্ঠাতা ড. কুমার শিবরাজন, সিআইআইয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল মারুত সেনগুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল বিকেলে নয়াদিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট (স্থানীয় সময়) বেলা সাড়ে ৩টায় নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর আগে ফ্লাইটটি বেলা ২টা ৩ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।

ভারতের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। পরে সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। এ ছাড়া একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক দশকে শক্তিশালী আঞ্চলিক অংশীদারত্বের অংশ হিসেবে বেশ কিছু আন্তসীমান্ত উদ্যোগ চালু করা হয়েছে।

আজ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

একই দিন দুই প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক এবং প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনার জন্য হায়দরাবাদ হাউসে যাবেন। উভয়েই সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বিবৃতি দেবেন। হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন তিনি।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তাঁর সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করবেন। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে পালাম বিমানবন্দর থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হবেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত