কোটাবিরোধী আন্দোলন: শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ, বাড়ছে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০: ৪৫
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০: ৪৬

সরকারি চাকরিতে ছয় বছর আগে বাতিল করা কোটা গত মাসে পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আদালত। এর প্রতিবাদে ও কোটা বাতিল চেয়ে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত বলেছেন, ‘আন্দোলন হচ্ছে হোক। রাজপথে আন্দোলন করে কি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?’

আদালতের এ মন্তব্যের পর গতকাল ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। আরও গতি পায় তাঁদের আন্দোলন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। 

আন্দোলনের নেতারা বলছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি হিসেবে আগামী শনি ও রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা অবরোধ শেষে শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং রোববার সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা দেন

আন্দোলনকারীরা। একই সঙ্গে আজ শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে কোটা বাতিলের পক্ষে প্রচারণা করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। 
সব ধরনের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে জানিয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকের মতো আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছি। তবে দাবি আদায় করে আমরা ঘরে ফিরব।’ 

রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা দুপুর ১২টার দিকে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসাইন মুন্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। শিক্ষার্থীরা আজ থেকে আরও বেশি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন।’ 

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। 

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় গাড়ির টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান তাঁরা। প্রায় ৩ ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধের ফলে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও খয়রাবাদ সেতু প্রান্তে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। 

বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন, যানবাহন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

বিকেল ৪টার দিকে খুলনার জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে অচল হয়ে পড়ে খুলনা-সাতক্ষীরা, যশোর-খুলনা, বাগেরহাট-খুলনা সড়ক। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠী নয়।’ আরেক শিক্ষার্থী মুহিবুল্লাহ বলেন, আপিল বিভাগ আজকে ছাত্রসমাজের সঙ্গে টালবাহানা করেছেন। 

বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। আজ শুক্রবারও তাঁরা কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের মুখপাত্র আমানুল্লাহ আমান বলেন, ১ শতাংশের কম জনসংখ্যার জন্য ৩০ শতাংশ কোটা অন্যায্য। 
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। এই রাষ্ট্রের জন্মের পেছনে সমতাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।’ 

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। দাবি মানা না হলে রেলপথ অবরোধেরও ঘোষণা দেন তাঁরা। অবরোধের ৩ ঘণ্টা পর কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে অবরোধ প্রত্যাহার করেন তাঁরা। 

বেলা ১১টা থেকে শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়ক অবরোধ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারবে। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে আমরা অ্যাকশনে যাব।’ 

এদিকে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রেলপথ অবরোধ করেছেন ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শেষে ঢাকা থেকে জামালপুরগামী আন্তনগর জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেন ২ ঘণ্টা আটকে রাখেন তাঁরা। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক দীপক পাল জানান, শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে ২ ঘণ্টা রেল চলাচল ব্যাহত হয়। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত