Ajker Patrika

কার দোষে ৬ গুণ টাকা দিয়েও অনিশ্চয়তায় ৩১ হাজার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ২৩: ০৫
কার দোষে ৬ গুণ টাকা দিয়েও অনিশ্চয়তায় ৩১ হাজার মানুষ

কোটা পূরণ হওয়ায় গত ১ মার্চেই মালয়েশিয়া জানিয়ে দিয়েছে, ৩১ মের পর আর কোনো অভিবাসী শ্রমিক নেওয়া হবে না। মাঝে তিন মাস কেটে গেছে। আজ শুক্রবার শেষ দিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে ভিড় করছেন মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের কাছে পাসপোর্ট-ভিসা আছে। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সি টিকিট দিতে পারছে না। 

অথচ এই মানুষগুলোর কাছ থেকে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সরকারনির্ধারিত খরচের চেয়ে ছয়-সাত গুণ টাকা নিয়েছে। এতগুলো মানুষের দায় এখন কেউ নিচ্ছে না। সরকার দুষছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে, আবার এজেন্সিগুলো দুষছে সরকারকে। জমি বেচে, ঋণ করে টাকা জমা দেওয়া হাজার হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। 

সিন্ডিকেট করে অনিয়মের কারণে চার বছর স্থগিত রাখার পর ২০২২ সালের আগস্টে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভিসা উন্মুক্ত করে মালয়েশিয়া। দুই দেশের সরকারের চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকপ্রতি খরচ নির্ধারণ করা হয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠা ভেরাইটের এক জরিপে দেখা গেছে, শ্রমিকপ্রতি প্রকৃত খরচ পড়েছে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে সিন্ডিকেট অতিরিক্ত ১০০ কোটি ডলার হাতিয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির হয়েও হাজারো মানুষ মালয়েশিয়াগামী ফ্লাইটের টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারেননি। এজেন্সি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা টু মালয়েশিয়ায় চাহিদা অনুপাতে ফ্লাইট না থাকায় ভিসা থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে শুক্রবারে (৩১ মে) পর বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশ থেকে কোনো কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। 

জানা গেছে, শুক্রবার শেষ দিনে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫০০ জন কর্মীর। তাঁরা কে কোন ফ্লাইটে, কোন বিমানে যাবেন, তা আগে থেকে ঠিক করা আছে। এর বাইরে আরও ৩১ হাজার ৭০১ জন বাংলাদেশি কর্মী চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ার যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু টিকিট জটিলতায় তাঁরা বিপদে পড়েছেন। 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন। 

এর জন্য সরকারকেই দুষছে এজেন্সিগুলো। সরকারের উদাসীনতায় এই সংকট তৈরি হয়েছে জানিয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে মালয়েশিয়ায় লোক যেতে হবে ৫০-৬০ হাজার লোক। এটা নিয়ে সরকারের উদাসীনতার কারণে কোনো প্রস্তুতি নেই, আলোচনা নেই। এটা আমাদের মালয়েশিয়াগামী প্রবাসী শ্রমিকদের দুর্ভাগ্য!’ 

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সরকার বেঁধে দেওয়া খরচের কয়েক গুণ টাকা নিলেও তাদের অবহেলায় বহু মানুষ এখন বিপদে পড়েছেন। সময় আর হাতে না থাকায় উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই হাজার হাজার মানুষ এখন বিমানবন্দরে ভিড় করছেন। 

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষারত কয়েকজন জানান, তাঁদের মধ্যে অনেকে তিন দিন ধরে অপেক্ষা করছেন। অধিকাংশই উড়োজাহাজের টিকিট এখনো হাতে পাননি। যে রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়েছেন, তারাও এখন আর ফোন ধরছে না। 

অনেকে জমি বন্ধক রেখে এবং ব্যাংক ও ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এজেন্সিকে টাকা দিয়েছেন। এজেন্সি থেকে বলার পর তাঁরা বিমানবন্দরে এসেছেন। কিন্তু টিকিট দিতে নানা টালবাহানা করছে, কেউ কেউ ফোনই ধরছে না। 

বিমানবন্দরে হাজির হওয়া আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন, তাঁরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সময় বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি করেছেন। তাঁরা বলছেন, পাঁচ থেকে সাত লাখ করে টাকা তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়েছেন। এখন যেতে না পারলে বিপদে পড়বেন। কোম্পানিগুলো তাঁদের দেওয়া টাকা ফেরত দেবে কি না, সেই সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। 

মালয়েশিয়াগামী যাত্রীদের ভিড় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘দুই দিন ধরে মালয়েশিয়াগামী অনেক যাত্রীর চাপ রয়েছে। বাড়তি এই চাপ সামলাতে নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ 

এত আগে বিষয়টি জানানোর পরও কেন এখন এতগুলো মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে—এ ব্যাপারে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কতসংখ্যক মানুষ যেতে পারেনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) কাছে সেই তালিকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা দেয়নি। 

তবে সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেছেন, মালয়েশিয়া সরকার অনেক আগেই বলেছে, ৩১ মের মধ্যে লোক পাঠানো শেষ করতে হবে। সার্বিক ব্যবস্থাপনা শেষ সময়ে এসে কেন করা হলো? 

জানতে চাইলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যা হচ্ছে, তা দুর্বৃত্তপনা। এখানে সিন্ডিকেটের জয়জয়কার। এটা কোনো নিয়ম হতে পারে না। ভিসার মেয়াদ থাকার পরেও ওই দেশে ঢুকতে পারবে না। দুই দেশের এখানে দায় রয়েছে। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’ 

এ ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট জয় হয়েছে, হেরেছে প্রবাসী শ্রমিকেরা। অথচ এই প্রবাসী শ্রমিকদের টাকায় দেশ চলে। আমরা চাই সরকার এ ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন করে প্রকৃত সত্য খতিয়ে দেখুক, সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।’ 

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর চক্রে শুরুতে ছিল ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি। পরে ধাপে ধাপে মোট ১০০ বেসরকারি এজেন্সি এতে যুক্ত হয়। পরে যুক্ত হয় সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল)। গত এক যুগে তিনবারের বেশি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক ভিসা চালু হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের অনিয়মের কারণে বারবার বন্ধ হয়েছে। 

এদিকে সরকারের অভিবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিমান বাংলাদেশ একটি অতিরিক্ত ঢাকা-কুয়ালালামপুর ফ্লাইট পরিচালনা করবে। সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকা ছাড়ার কথা। এই ফ্লাইটে মোট ২৭১ জন যাত্রী বহন করা যাবে।

এদিকে আজ শেষ সময় হওয়ায় বাংলাদেশসহ অন্তত ১৫টি দেশ থেকে হাজার হাজার কর্মী মালয়েশিয়া প্রবেশ করছেন। হঠাৎ এত মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর। সেখানে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষেরও এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি ছিল না। ফলে মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ১২
মেজর সাদিক ও স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।
মেজর সাদিক ও স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিন।

মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া জাফরিনকে গুলশান থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের এক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

সুমাইয়ার স্বামী মেজর সাদিকুল হকের বিরুদ্ধে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে কোর্ট-মার্শাল গঠন করেছে সেনাবাহিনী।

আদালতে গুলশান থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের এসআই মোক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সুমাইয়া জাফরিনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন ডিবি পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক মামুন।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ এপ্রিল সকালে গুলশান-১-এর জব্বার টাওয়ারের পাশে ৩০-৩৫ জন নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ব্যানারে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। আসামিরা দেশের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাঁরা দেশবিরোধী স্লোগান দেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। কয়েকজন পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশ ওই দিনই গুলশান থানায় মামলা করে।

আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয়ভাবে তদন্তে জানা যায়, সুমাইয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ জোগানদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা। তিনি সক্রিয়ভাবে দেশবিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। আসামি নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়। তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত সদস্যদের অর্থ জোগান দিয়ে থাকেন বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এই আসামি সারা দেশের আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মীদের সুসংগঠিত করে দেশের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে এ মামলায় আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন গ্রেপ্তার দেখানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পরে আদালত তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণের ঘটনায় ভাটারা থানায় করা মামলায় গত ৬ আগস্ট সুমাইয়া জাফরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৭ আগস্ট তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড হয়। রিমান্ড শেষে ১২ আগস্ট সুমাইয়া জাফরিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

১৭৫ থেকে ২০০ পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইইউ: ইসি সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে বিভিন্ন পর্যায়ে ১৭৫ থেকে ২০০ জন পর্যবেক্ষক পাঠাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।

আখতার আহমেদ বলেন, ‘আমাকে যেটা ধারণা দেওয়া হয়েছে—বিভিন্ন সময়ে ১৭৫ থেকে ২০০ জনের মতো আসবেন। এখন কে আগে আসবেন, তাঁদের সংখ্যা কত, তাঁরা কী কী দেখবেন, তাঁদের সঙ্গে পরবর্তীতে কেউ জয়েন করবেন কি না—এই সম্পর্কে কোনো প্রস্তাবনা এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।’

গত সোমবার চুক্তি হয়েছে জানিয়ে সচিব আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে একটা ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তির আওতায় আমরা তাঁদের ফ্যাসিলিটিজ প্রোভাইড করব। তাঁদের যাতায়াত, চলাফেরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাঁদের লোকাল প্রটোকল কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানতে হবে।’

এখন পর্যন্ত ইইউ ও তুরস্ক থেকে পর্যবেক্ষক দল আসবে নিশ্চিত হয়েছে বলে জানান সচিব।

প্রার্থীর নিরাপত্তায় অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন অনুমতি নিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে কি না—সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয় এটা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে। তাঁরা ভালো মনে করেছেন এবং আমরা সবাই এ বিষয়ে একমত।’

কীভাবে প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব—এ বিষয়ে জানতে চাইলে আখতার আহমেদ বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্নটা করলে বোধ হয় আমার জন্য ভালো হয়। আমার সঙ্গে উনার এ ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি। কাজেই, আমি এর ব্যাখ্যা দিতে গেলে অপব্যাখ্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যেটা আমি করতে চাই না।’

নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হতে পারে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এটার ব্যাপারেও আমি কোনো মন্তব্য করব না। নিরাপত্তার বিষয়টা কখনো ভীতি হয়? আমি আপনাকে পাল্টা প্রশ্ন করি। নিরাপত্তার বিষয়টা নিশ্চিত করলে আবার ভীতি সঞ্চার হবে, এটা কোনো কথা হতে পারে? এটি তো সবারই চেষ্টা করা উচিত।’

আখতার আহমেদ আরও বলেন, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়ার বিষয়টা যখন প্রাসঙ্গিক হবে, তখন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ রিয়াজ হামিদউল্লাহকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ উদ্বেগের কথা জানায়।

আজ বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে রিয়াজ হামিদুল্লাহকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তাঁকে তলব করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিএম) বি শ্যাম।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনারকে তলব করা হয়েছে। এ সময় ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে হাইকমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছে, ঢাকায় কিছু ‘চরমপন্থী উপাদান’ প্রকাশ্যে ঢাকায় ভারতীয় মিশনের আশেপাশে একটি নিরাপত্তা সংকট তৈরি করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, এই ধরনের হুমকি কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিক—এমনটাই প্রত্যাশিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়ে ‘চরমপন্থী উপাদানগুলো’র মাধ্যমে যে ‘মিথ্যা বয়ান’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে, ভারত তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে। এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার এই উদ্বেগজনক ঘটনাগুলোর কোনো পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেনি বা ভারত সরকারের সঙ্গে কোনো অর্থবহ প্রমাণ দেয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে ওঠা ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, যা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক এবং মানুষে-মানুষে উদ্যোগের মাধ্যমে আরও জোরদার হয়েছে। এই সম্পর্কের ভিত্তিতেই নয়াদিল্লি বারবার বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে মত দিয়েছে। ভারত সরকার ধারাবাহিক আহ্বান জানিয়েছে, একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশে যেন অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে, বাংলাদেশ সরকার তাদের কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা বজায় রেখে সেদেশে অবস্থিত ভারতীয় মিশন এবং অন্যান্য বিদেশি পোস্টগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

উল্লেখ্য, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে, এই তলবের মূল কারণ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতার ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্য বলে উল্লেখ করা হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে সে প্রসঙ্গ আনা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যাত্রীদের মালপত্রের নিরাপত্তায় শাহজালালে বডি ক্যামেরা পরবেন ট্রাফিক স্টাফরা

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৫৪
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের মালপত্রের (ব্যাগেজ) নিরাপত্তা নিশ্চিতে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট (জিএইচএ) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠানটি ব্যাগেজ পরিবহনপ্রক্রিয়ায় নিয়োজিত ট্রাফিক স্টাফদের জন্য বডি ক্যামেরা সংযোজন করেছে।

এই বডি ক্যামেরা ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমানের হোল্ড থেকে শুরু করে ব্যাগেজ বেল্ট হয়ে যাত্রীর হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের আওতায় আসবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের পাশাপাশি যেসব আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনসের জন্য প্রতিষ্ঠানটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেয়, তাদের ক্ষেত্রেও এই ব্যবস্থা কার্যকর থাকবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানায়, বডি ক্যামেরা সংযোজনের ফলে ব্যাগেজ চুরি, হারানো কিংবা ক্ষতির অভিযোগ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে যাচাই করা সম্ভব হবে। কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা শনাক্ত করে দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করা যাবে।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের আস্থা ও সন্তুষ্টি আরও সুদৃঢ় হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ও সেবার একটি অভিন্ন কাঠামো প্রতিষ্ঠায় এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং যাত্রীকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তব উদাহরণ হিসেবে বডি ক্যামেরা উদ্যোগটি বিবেচিত হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তা, সেবা ও আস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যকর ও আধুনিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত