সামনে আসছেন সচিবালয়ের বঞ্চিত কর্মকর্তারা

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ৩৩
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ২৩: ২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে প্রশাসনে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন ভিন্নমতের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এমন কর্মকর্তাও আছেন, যিনি গত দেড় দশকে একটি পদোন্নতিও পাননি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা সামনে আসতে শুরু করেছেন। 

গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অবসরে যাওয়া বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা এবং প্রশাসনে বর্তমানে কর্মরত পদোন্নতিবঞ্চিত অন্তত ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। সেখানে সভাপতিত্ব করেন বিসিএস ১৯৮৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ১৩তম ব্যাচের পদোন্নতিবঞ্চিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাহবুবুর রহমান। বৈঠকে পদোন্নতি বঞ্চিত করার হিসাব এবার কড়ায়-গন্ডায় আদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন প্রশাসনের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখন থেকে তাঁদের পরামর্শ ছাড়া কোনো আদেশ (প্রজ্ঞাপন) জারি করা চলবে না।

সভায় বক্তব্য দেন অবসরে যাওয়া বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা ড. আব্দুস সবুর, ৮৪ ব্যাচের ওয়াহিদ জামান, ৮৫ ব্যাচের জাকির হোসেন কামাল, ১১ ব্যাচের এহসানুল হক, ১৩ ব্যাচের মাহফুজুর রহমান, ২০ ব্যাচের মির্জা আলী আশরাফ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রটোকল অফিসার মো. ফরিদুল ইসলাম, ১৫ ব্যাচের কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস সুরুতুজ্জামান, ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম, ২৪ ব্যাচের নুর জাহান খানম, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মহাসচিব তোয়াহা মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি বিএনপিপন্থী বলে গত ১৬ বছরে কোনো পদোন্নতি পাননি। অথচ তাঁর ব্যাচমেট কর্মকর্তাদের অন্তত ২০ জন বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব হয়েছেন এক বছর আগেই। 

ক্ষোভপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে পারি বলে ওএসডি থাকতে হয়নি। আমার সরাসরি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপসচিব আবু নাসার উদ্দিন ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা; যিনি আমার ১৪ বছর পর চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। শুধু তিনিই নন, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তা শুধু সরকার-সমর্থক না হওয়ায় পদোন্নতি পাননি। বুকে কষ্ট নিয়ে সরাসরি জুনিয়রের অধীনে কাজ করছেন বছরের পর বছর।’

১১তম ব্যাচের কর্মকর্তা এহসানুল হক বলেন, ‘আজ পাওয়া না পাওয়ার হিসাবের দিন নয়, আজ হচ্ছে মিলনমেলা। যে সাথিদের বছরের পর বছর দেখিনি, যারা বুকভরা বেদনা দিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে। যাদের কথা বলার কিংবা বসার কোনো জায়গা সচিবালয়ে ছিল না, তাদের মুখগুলো দেখতে এসেছি। আজ আমরা একটু হালকা হওয়ার জন্য মিলিত হয়েছি। পাওয়ার হিসাব পরে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘যাঁরা বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাঁদের নাম, পদবি, কতবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তার ডেটাবেইস আমাদের কাছে আছে। প্রতি সপ্তাহে আমরা তালিকা রিভিউ করি। কেউ মনে করবেন না, আপনারা বঞ্চিত বললেই তা আমরা মেনে নেব না। যাঁরা সুবিধাভোগী তাঁদের বলছি, আপনার বিবেককে প্রশ্ন করুন, গত ১৫ বছর আপনার ভূমিকা কী ছিল? আপনি আক্রান্ত হলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না।’

বঞ্চিত কর্মকর্তারা গতকাল সকাল ১০টার মধ্যে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তাঁরা জনপ্রশাসনসচিবের কক্ষে প্রবেশ করে বসে পড়েন। এরপর তাঁরা যান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরে। সেখানে তাঁরা সচিবের রুমে ঢুকে সচিবকে না পেয়ে বেরিয়ে আবার জনপ্রশাসনসচিবের দপ্তরে যান। 

এসময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসনসচিব অফিসে ছিলেন না। এরপর তাঁরা সচিবালয়ের লাইব্রেরিতে সভার আয়োজন করেন। সভায় কর্মচারী নেতাদের মধ্যে চাকরিচ্যুতদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া এবং মন্ত্রী-সচিবের দপ্তরের সব প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও), ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) এবং অফিস স্টাফদের বদলির দাবি জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত