দেশে পোশাক খাতে শ্রমিক ৫০ লাখের বেশি, ৫৫ শতাংশই নারী: সংসদে শ্রম প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৪, ২১: ৪০

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানায় ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৩৯৭ জন শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ৫২.২৮ শতাংশ নারী শ্রমিক। অর্থাৎ নারী শ্রমিক ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৯ জন। 

বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী নিট সেক্টরে ১৭ লাখ ২৫৫ শ্রমিক রয়েছে। যার ৬২ শতাংশ অর্থাৎ ১০ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭ জন নারী। সব মিলিয়ে দেশে তৈরি পোশাক খাতে মোট ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন শ্রমিক রয়েছে। যার ৫৫.৫৭ শতাংশ অর্থাৎ ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬১৬ জন নারী শ্রমিক। 

আজ রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে শ্রম প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২২ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী তৈরি পোশাক খাতে মোট লোকবল ৪৩ লাখ ১৬ হাজার। যার ৩৭.৫১ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ লাখ ১৯ হাজার জন নারী শ্রমিক। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুলের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বের ২১০টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে। এসব দেশগুলোর মধ্যে ৮২ টির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সব থেকে বেশি বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে চীনের সঙ্গে। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ হাজার ১৪৯ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

২০২২-২৩ অর্থ বছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ হাজার ২৩৯ দশমিক ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। 

নাটোর-১ আসনের আবুল কালামের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জানান, সার্কভুক্ত দেশগুলির মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ ছাড়া অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। 

তিনি বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে ২০১১-১২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬৭০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এ ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়ে দুই হাজার ৩৬২ দশমিক ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে এসব দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি ৫ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ১০৩ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হয়েছে। 

সংরক্ষিত আসনের শাম্মী আহমেদের প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সাত হাজার ১৬০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে তামাক ও মদ জাতীয় পণ্য ছাড়া সকল পণ্যে শুল্কমুক্তি সুবিধা লাভ করায় ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি লাঘব হচ্ছে এবং ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ প্রথমবারের মতো ২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। 

চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৪৬.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের তৈরি পোশাক বিদেশে রপ্তানি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০.২৭ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে (২০২৩-২৪) জুলাই-মে সময়ে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় রয়েছে ৪৩.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব, বৈশ্বিক মহামারি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার আমেরিকা ও ইউরোপে মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি কারণে রপ্তানি আয় অর্জনে শ্লথ গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশ্ব বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে পণ্যের demand side এ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বাংলাদেশে Supply side হিসেবে রপ্তানি খাতে বিশ্ব বাজারের চাহিদা পূরণে পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের চাহিদা বিশ্ববাজারে কমে যাওয়ার কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। তবে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, স্পেন, কানাডা, জাপান প্রভৃতি দেশে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় অর্জনে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। 

গত এক যুগের মধ্যে গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সব থেকে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ অর্থ বছরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। সরকারি দলের মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এ তথ্য জানান। প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী ২০১১-১২ অর্থ বছরে, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ৮.৬৯ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৬.৭৮ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৭.৩৫ শতাংশ, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ৬.৪১ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ৫.৯২ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫.৪৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫.৮৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫.৪৮ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫.৬৫ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৫.৫৬ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৬.১৫ শতাংশ এবং ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৯.০২ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল। 

ভোলা-৩ আসনের নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে মে পর্যন্ত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৫১ হাজার ৫৪২ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। এ সময়ে সেবা খাতের রপ্তানি আয়ের পরিমান ৫ হাজার ৮৩ দশমিক ৩৬ মিলিয়ন ডলার।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত