কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর বেআইনি বলপ্রয়োগের নিন্দা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৪, ১০: ২১
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৪, ১১: ২৭

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর বেআইনি বলপ্রয়োগের প্রমাণ পেয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনকারীদের ডাকা সারা দেশে চলমান ‘বাংলা-ব্লকেডের’ সময় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ আন্দোলনকারীদের ওপর বেআইনি বল প্রয়োগ করেছে এবং তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও সংস্থাটির ক্রাইসিস এভিডেন্স ল্যাব বিশ্লেষিত ও প্রমাণিত সাক্ষীর সাক্ষ্য, ভিডিও এবং ফটোগ্রাফিক প্রমাণ শিক্ষার্থী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের বেআইনি বল প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য প্রমাণ করে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যে সহিংসতা হয়েছে তা বহু বছরের সহিংসতার ধারাবাহিকতা। এই সহিসংতা ক্ষমতাসীন দলের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে সম্পৃক্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) সদস্যরা ঘটিয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা এবং সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত দুই দিনে অন্তত ছয়জন নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক গবেষক তকবীর হুদা বলেছেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সারা দেশের অন্যান্য ক্যাম্পাসে ছাত্র আবু সাঈদের হত্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানায়। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন ও নিজস্ব সংবিধানের অধীনে প্রতিশ্রুতি অনুসারে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করতে হবে এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের আরও ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে হবে।’

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম মারধর ও হামলার বিষয়টি উল্লেখ করেছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রলীগের কর্মীরা কীভাবে নির্যাতন চালিয়েছেন, তা তুলে ধরেছে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায়।

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের নিহত হওয়ার বিষয়ে অ্যামনেস্টি বলছে, স্যাটেলাইট ইমেজারি সিস্টেম ও জিওলোকেট সিস্টেম ব্যবহার করে তারা দেখেছে সাঈদের মারা যাওয়ার আগে গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব ছিল ১৫ মিটার। এ ছাড়া, সাঈদ পুলিশের সামনে দৃশ্যত কোনো শারীরিক হুমকি হাজির করেনি। সাঈদের ডেথ সার্টিফিকেটে বলা হয়েছে, তাঁকে হাসপাতালে ‘মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে’।

ডেরিক পাউন্ডার নামে একজন স্বাধীন ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট সাঈদের বুকে ক্ষতের ছবি পরীক্ষা করে দেখেছেন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন, ‘সাঈদের বুকের ক্ষতগুলো ছররা গুলির (বার্ডশট) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার সারা দেশে সংঘর্ষে ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে। বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ–যুবলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক। এর প্রতিবাদে বুধবার নিহতদের উদ্দেশে গায়েবানা জানাজা ও প্রতীকী কফিন মিছিল কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ক্যাম্পাসগুলোতে কোথাও শিক্ষার্থীদের দাঁড়াতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে শুধু ঢাকাতেই অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এর পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত