শ্রমিক স্বস্তিতে না থাকলে দেশ স্বস্তিতে থাকবে না, সংসদে জাপার এমপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ২২
Thumbnail image

জাতীয় সংসদে তৈরি পোশাকশ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেছেন, যে শিল্পে কাজ করে একজন শ্রমিক ৩০ দিন খেতে পারে না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারে না; ২০ দিনের মাথায় বেতন শেষ হয়ে যায়, সেই শিল্পের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। 

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে শামীম হায়দার এসব কথা বলেন। 

পোশাক কারখানার মালিকদের উদ্দেশে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘একদিকে মালিকপক্ষের স্বার্থ, গার্মেন্টসশ্রমিকদের বেতন অনেক বাড়ালে বেশ কিছু গার্মেন্টস ড্রপ আউট হবে। ২৫ বছর ধরে আপনি লাভ করেছেন, দুই বছর ঝুঁকি নিতে পারবেন না? ২৫ বছরের লাভে বাড়ি করেছেন তিনটা, চারটা, পাঁচটা। দেশে-বিদেশে ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছেন। শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দর–কষাকষি করে মূল্য বাড়াতে হবে। শ্রমিক স্বস্তিতে না থাকলে দেশ স্বস্তিতে থাকবে না।’ 

পোশাকশ্রমিকদের উন্নয়ন করার দাবি জানিয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা গার্মেন্টসমালিকদের চকচকে বাড়ি দেখি, কারখানাও চকচকে দেখছি। গার্মেন্টসশ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখছি না। সকালে যখন হাঁটি, তখন দেখি হাজার হাজার মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে, সবাই লিকলিকে। কারও স্বাস্থ্য ভালো না, খেতে পারে না ঠিকমতো। ডিম খায় না সপ্তাহে এক দিনও, ডালভাত খায়।’ 

দলটির আরেক সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আজকে গার্মেন্টসশিল্প খুব মুশকিলে আছে। সারা দিন কাজ করে নিজের খরচটুকু উপার্জন করা না গেলে, সেই কাজটার সার্থকতা থাকে না। সেটা জোর করে কাজ করার শামিল হয়। এদিকে সরকার ও গার্মেন্টসমালিকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। 

পোশাকশ্রমিকদের প্রতি মালিকপক্ষ যত্নশীল নয় বলে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘আইনি কাঠামোতে আছে তিন দিনের বেশি হাসপাতালে থাকলে তাঁরা (মালিক) দেখবেন কিন্তু সেটা দেখেন না। আজকে তাঁদের (শ্রমিক) সেই পরিবেশও নেই, পরিবহনও নাই। বাচ্চাদের দেখার জন্য ডে কেয়ার  সেন্টার নেই। হাসপাতাল নেই। বেতনভাতা কম। অনেক সমস্যায় জর্জরিত শ্রমিকেরা। এ দিকটা খেয়াল করা দরকার। মালিকেরা টাকার পাহাড় গড়বে আর শ্রমিকেরা প্রয়োজনমতো অর্থ পাবে না তা মানবিক না। মানবিকভাবে দেখলে তাঁদের স্বার্থগুলো পূরণ করতে পারি।’ 

আরেক সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, কিছু কিছু গার্মেন্টসমালিকের অনেক টাকা। তাঁরা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। শ্রমিকদের অনেক কষ্ট, তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে মালিকদের ফুরাবে না। 

এদিকে আজ জাতীয় সংসদে শ্রম আইনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল–২০২৩ পাস হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তার ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি পাস হয়। 

বিলে বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মোট সংখ্যা ৩ হাজার পর্যন্ত হলে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। আর মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগের সম্মতি লাগবে।  

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদন লাগে। এখন সেটিকে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। 

২০০৬ সালে দেশে প্রথম শ্রম আইন করা হয়। এরপর আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়। এই আইনটি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু পর্যবেক্ষণ ও উদ্বেগ ছিল। সরকার চলতি মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে এই আইনটি আবার সংশোধন করল। 

বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৮ দিন বাড়িয়ে ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো মালিক তাঁর প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোনো নারীকে তাঁর সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারবেন না বা কোনো নারী ওই সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না। 

বিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য হয় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রেও সেভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সরাসরি আপিল বিভাগে। 

বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট সংখ্যা ৩ হাজার পর্যন্ত হলে শতকরা ২০ ভাগ এবং ৩ হাজারের বেশি হলে শতকরা ১৫ ভাগ ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে তা নিবন্ধনের অধিকারী হবে না। একই মালিকের অধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান যদি একই শিল্প পরিচালনার উদ্দেশ্যে একে অপরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান যেখানেই স্থাপিত হোক না কেন, তা একটি প্রতিষ্ঠান বলেই গণ্য হবে। 

এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোনো নির্ধারিত এলাকায় একই প্রকারের কোনো নির্ধারিত শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন—এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়। 

বিদ্যমান আইনে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে সেখানকার মোট শ্রমিকের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এর সদস্য হতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিক সদস্য হলে ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন মিলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত