সাংবাদিকতার নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরলেন সম্পাদকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৪, ১৫: ১৬
আপডেট : ০৪ মে ২০২৪, ১৭: ৩৫

বাংলাদেশের পরিবেশ সাংবাদিকতায় নানা চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরলেন দেশের প্রথিতযশা সম্পাদকেরা। তাঁরা বলেন, সমগ্র পৃথিবীতে যে সংকট চলছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট পরিবেশ বিপর্যয়। এগুলো মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। কিন্তু এই সংকট নিয়ে লিখতে হলে প্রভাবশালীদের রক্তচক্ষুর মুখোমুখি হতে হয়।

আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটি আয়োজন করে সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক পিনাকী রায়।

পিনাকী রায় বলেন, ‘চামড়াশিল্পের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীকে আমরা মেরে ফেলেছি। নদীর রক্ষায় সরকার অনেক সময় প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তার বাস্তবায়ন হয় না। দেশে কতগুলো নদী আছে, তা-ও সরকারিভাবে স্বীকৃত নয়। অনেক নদী খাল হয়ে গেছে। সরকার একটি নদীও রক্ষা করতে পারেনি।’ 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘পরিবেশ সুরক্ষার জন্য যে সাংবাদিকতা, সেই সাংবাদিকতাকে আমরা প্রণোদনা, উৎসাহ, সমর্থন ও সুরক্ষা দিতে চাই। এখানে কোনো বিরোধের জায়গা আমি দেখি না। তবে হ্যাঁ, ক্ষেত্রবিশেষে তৃণমূলে বিভিন্ন ধরনের ব্যত্যয় ঘটে। সেই ব্যত্যয়গুলোকে আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা তুলে ধরবেন। সরকারের অবস্থান পরিবেশ সুরক্ষার পক্ষে।’

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন, শুধু পরিবেশ সুরক্ষা নয়, মুক্ত গণমাধ্যম, গণমাধ্যমের সুরক্ষা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার। 

সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি ও সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বর্তমান অবস্থা আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পথ দিন দিন আরও নিম্নমুখী হচ্ছে। বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও গোষ্ঠীর চাপে সুস্থ সাংবাদিকতার পথ ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। সাংবাদিকেরা কাজ করতে পারছেন না।’ 

এ কে আজাদ আরও বলেন, ‘সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। এই যখন অবস্থা, তখন সাংবাদিকদের একটি অংশ সেলফ সেন্সরশিপে চলে গিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রশ্ন হলো, সাংবাদিকতা কি অপরাধ? জনস্বার্থে তথ্য অনুসন্ধান এবং তা প্রকাশ করতে গিয়ে কেন সাংবাদিকেরা “অপরাধী” হিসেবে চিহ্নিত হবেন?’

সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘সমগ্র পৃথিবীতে যে সংকট চলছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকট পরিবেশ বিপর্যয়। এগুলো মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। বাংলাদেশে পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হলে অনেক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। কারণ, পরিবেশ ধ্বংসকারী অনেকে গণমাধ্যমের মালিক। ঢাকার চারপাশে যারা দখলকারী, তাদের প্রায় সবারই মিডিয়া রয়েছে। আবার আইনপ্রণেতারাও পরিবেশদূষণের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং পরিবেশ নিয়ে কাজ করতে হলে নানা চ্যালেঞ্জ আসে। পরিবেশ নিয়ে লেখা অনেক কঠিন।’ 

দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুন বলেন, ‘পরিবেশ নিয়ে আমাদের মধ্যে সচেতনতা ও আগ্রহ কম। কারণ, বিষয়টি জনপ্রিয় না। আবার পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে টেকনিক্যাল অনেক বিষয় জানতে হয়। সচেতনতার জায়গা থেকে কথা বলার সুযোগ কম।’

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে একটি জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করি। কিন্তু তাদের বক্তব্য সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেন সাংবাদিকেরা। আবার পরিবেশ নিয়ে সাংবাদিকতা করে অনেক সাংবাদিক ডিজিটাল অ্যাক্টের মামলার শিকার হচ্ছেন।

সমাপনী বক্তব্যে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘আমাদের দেশে ৯টি আইন আছে, যা স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রভাবিত করে। কিন্তু সাংবাদিকদের সহায়ক কোনো আইন নেই।’

পরিবেশ নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করলে কোনো সাংবাদিক হয়রানির শিকার হবেন না—এ জন্য সরকারি একটা আইন অথবা আদেশ জারি করার আহ্বান জানান তিনি। মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘পরিবেশ সাংবাদিকতা করে আমরা সরকারের সহায়ক হতে চাই।’ 

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ তুলে মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘সাংবাদিকেরাই ১০টি বড় আর্থিক অপরাধ তুলে ধরেছেন। এগুলোর অনুসন্ধান বাংলাদেশ ব্যাংকই করেছে। এসব অপরাধে সামগ্রিক ইমপ্যাক্ট ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার করিমসহ অনেকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত