Ajker Patrika

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান ও ডিবির হারুনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ৩৬
Thumbnail image

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয় বর্হির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের সত্যতা পাওয়ায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।  

আজ রোববার বিকেলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ২৭ জুন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের দাবি জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান ।

দুদক চেয়ারম্যান বরাবর সালাহ উদ্দিন রিগ্যানের পাঠানো লিখিত আবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে থাকা সম্পদের বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।
 
১৬ জুন ‘মিয়া সাহেবের যত সম্পদ’ শিরোনামে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর চার দিন পর ২০ জুন ‘এবার আলোচনায় আছাদুজ্জামান মিয়ার বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে অভিযোগ অনুসন্ধানের আবেদন জানান আইনজীবী রিগ্যান। আবেদনে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে জাতীয় দৈনিকের পাতাজুড়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও অনুসন্ধানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’ 

তিনি ওই আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, ‘জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করে এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেখানে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন, সেখানে দুদক নিষ্ক্রিয়। অতএব, এ বিষয়ে যথাযথ অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’

তিনি চিঠিতে আরও বলেন, ‘দুদক এই বিষয়ে অনুসন্ধানে উদ্যোগী না হলে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে। তাতেও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট করা হবে।’

দুদকের একটি সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ ওঠেছে দুদক সেটি যাচাই–বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিচার–বিশ্লেষণ করেছে। যাচাই–বাছাইয়ে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। আগামী সপ্তাহে কমিশনের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জে নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ নামে বিলাসবহুল প্রমোদাগার। জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। রিসোর্টটিতে শত কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে ধারণা স্থানীয়দের। 

২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং রিসোর্ট উদ্বোধন উভয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের আলোচিত-সমালোচিত কর্মকর্তা হারুনের প্রতিষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার। তিনি হলি ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। রিসোর্টটিতে হারুনের পরিবারের ৫ থেকে ৭ একর জায়গা রয়েছে। বাকি অন্তত ৩৫ একর জায়গা ছিল অন্যদের। অন্য জমির মালিকদের দাম দেবেন বলে হারুন রিসোর্টের জন্য জায়গা দখলে নেন। তবে কেউই জমির দাম পুরোটা পাননি। জায়গার দাম না পাওয়ায় এখনো অন্তত ১০ থেকে ১২ জন তাঁদের জমি রেজিস্ট্রি করে দেননি। তাঁদেরই একজন মিঠামইন সদর ইউনিয়নের গিরীশপুর গ্রামের দিলীপ বণিক। 

এলাকাবাসী বলছেন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আশীর্বাদ এবং সহযোগিতায় চাকরি পাওয়া থেকে শুরু করে পুলিশের বিভিন্ন উচ্চ পদ পেয়েছেন। প্রতিদান হিসেবে হারুন তাঁর রিসোর্টের নাম দেন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’। জমি দখলে এটি একটি কৌশল বলে মনে করেন এলাকাবাসী। 

রিসোর্টে ডুপ্লেক্স কটেজ, কালচারাল সেন্টার, আউটডোরসহ নানা রকম কারুকার্যসংবলিত পাথরের বিভিন্ন সামগ্রী রয়েছে। আছে একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁ, শিশুপার্ক, ওয়াচ টাওয়ার, লেকসহ নানা কিছু। 

সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, চলচ্চিত্র জগতের তারকা এবং ভিআইপিরা বিলাসবহুল রিসোর্টটিতে সময় কাটিয়েছেন বলে জানা গেছে। 

গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে রিসোর্টটিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত