আজকের পত্রিকা ডেস্ক

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি দেয়াল ভেঙে গোপন কারাগারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, একটি দরজা নতুন করে ইট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে। পেছনে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে ছিল তা স্পষ্ট। ভেতরে দেখা যায়, একটি সরু করিডর, যার ডান ও বাম পাশে অনেকগুলো ছোট কুঠুরি। কুঠুরিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই এই গোপন কারাগারটি সম্ভবত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না—সেখানে বন্দী থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যদের স্মৃতি হয়তো অজানাই থেকে যেত! আহমেদ বিন কাসেম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক ছিলেন। এই বন্দীশালায় তাঁকে ৮ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
কারাগারে থাকার সময় তাঁর চোখ প্রায় সব সময়ই বাঁধা থাকত। তাই তিনি বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দের ভিত্তিতে তাঁর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। তিনি উড়োজাহাজ উঠানামার শব্দ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের কাছে এক বন্দীশালায় পৌঁছান। মূল ভবনের পেছনে তাঁরা একটি ছোট, কঠোর পাহারায় ঘেরা জানালাবিহীন কংক্রিটের অবকাঠামো খুঁজে পান। সেখানেই বন্দীদের রাখা হতো।
এটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তকারীরা কাসেমের মতো শত শত ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসব ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, আরও অনেককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে ওই কারাগারসহ অন্যান্য গোপন কারাগার চালাতেন মূলত এলিট কাউন্টার–টেররিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাঁরা সরাসরি হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন, অনুমতি বা নির্দেশের মাধ্যমে করিয়েছিলেন।’ তবে হাসিনার দলের লোকদের দাবি, তাঁদের অজান্তে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর কোনো দায় তাঁরা নেবেন না। সামরিক বাহিনী একাই কাজ করেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যরা মুক্তি পেয়েছেন ৭ মাসের বেশি সময় হলো, তবে এখনো তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁদের যারা গোপন কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো নিরাপত্তা বাহিনীতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এবং অনেকে এখনো মুক্ত।
আহমেদ বিন কাসেম জানান, এখন টুপি ও মাস্ক ছাড়া তিনি কখনই বাড়ির বাইরে যান না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতে হয়।’ কিছুদিন আগে তিনি বিবিসির দলটিকে সেই জায়গাটি দেখাতে নিয়ে যান, যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ভারী ধাতব দরজা ঠেলে, মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা পেরিয়ে তিনি ‘তাঁর’ ঘরে প্রবেশ করেন। এই কুঠুরিতেই আট বছর বন্দী ছিলেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’ সেখানে কোনো জানালা ছিল না, প্রাকৃতিক আলো আসার কোনো পথ ছিল না। ভেতরে থাকলে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না। চল্লিশের কোঠায় থাকা আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম এর আগেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকে সেই ছোট্ট কুঠুরির ভেতরটা বিস্তারিত দেখালেন, যেখানে তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ঘরটি এত ছোট যে—একজন গড় উচ্চতার মানুষের পক্ষেও সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা, ইট ও কংক্রিটের টুকরা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করার জন্য এটি ছিল শেষ চেষ্টা।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বিবিসির সঙ্গে ওই বন্দীশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি একটি বন্দিশালা। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশে ৫০০,৬০০, ৭০০ টিরও বেশি কুঠুরি রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, এটি ব্যাপক ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
আহমেদ বিন কাসেম তাঁর সেলের হালকা নীল রঙের টাইলসের কথাও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। মেঝেতে ভাঙা টাইলসের টুকরোগুলো পড়ে ছিল। আর এর সাহায্যেই তদন্তকারীরা এই বিশেষ ঘরটি খুঁজে পান। নিচতলার সেলগুলোর তুলনায় এটি বেশ বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। একপাশে একটি নিচু টয়লেট রয়েছে।
সেই কষ্টের স্মৃতিচারণ করতে করতে আহমেদ বিন কাসেম ঘরের চারপাশে হেঁটে হেঁটে দেখান এবং বন্দী জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তা তুলে ধরেন। গ্রীষ্মকালে সেখানে অসহ্য গরম লাগত। তিনি মেঝেতে কুঁকড়ে বসে দরজার নিচের দিকে মুখ রাখতেন কিছুটা বাতাস পাওয়ার আশায়। তিনি বলেন, ‘মনে হতো মৃত্যুর চেয়েও দুঃসহ।’
নিজের দুঃসহ স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করানোর বিষয়টিকে অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আহমেদ বিন কাসেম মনে করেন, বিশ্বের মানুষের দেখা উচিত, কী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সাহায্য ও সমর্থন করেছে, সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখনো তাদের পদে বহাল আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (এখানকার) গল্প তুলে ধরা দরকার এবং যারা ফিরে আসেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যা কিছু করার আছে তা করতে হবে।’
বিবিসির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁকে ঢাকার প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখন মনে করছেন, এ ধরনের আরও অনেক কেন্দ্র ছিল। আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি র্যাবের হেফাজতেই ছিলেন। তদন্তকারীরা এখন সন্দেহ করছেন, প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি শাখা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাঁকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আহমেদ বিন কাসেম ছাড়াও বিবিসি এমন বন্দীশালায় আটক থাকা আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংযোগ ছিল না। অনেকের অভিযোগ, তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসি এই ভুক্তভোগীদের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও, প্রায় সবাই বলেছেন—তাঁরা আতঙ্কিত যে, একদিন রাস্তায় বা বাসে তাঁদের নিপীড়নকারীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন, যখনই আমি গাড়িতে উঠি বা বাড়িতে একা থাকি, তখন আমি যেখানে ছিলাম সেই কথা ভেবে ভয় লাগে। আমি ভাবি, আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, আদৌ আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল কিনা।’
রাসেল জানান, তাঁর নাক ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতে এখনো ব্যথা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে অনেক মারধর করেছে।’ রাসেল জানান, গত জুলাইয়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে একদল লোক তাঁর কাছে আসে। তাঁরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং তাঁকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে।
এরপর তৎক্ষণাৎ তাঁকে একটি ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়, মুখ ঢাকা হয় এবং চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভবনে নিয়ে একটি কামরায় রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা পর একজন একজন করে লোকজন আসতে শুরু করে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আপনি কে? আপনি কী করেন?’ এরপর শুরু হয় মারধর।
রাসেল আরও বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ছিল ভীতিকর। আমার মনে হয়েছিল, আমি আর কখনোই বের হতে পারব না।’ রাসেল এখন তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং চেয়ারে বসে তিনি তাঁর বন্দী জীবনের কয়েক সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করছিলেন, যেন তাঁর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!
রাসেলও মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রনেতা ছিলেন এবং তাঁর বাবা ছিলেন ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিদেশে থাকা তাঁর ভাই প্রায়শই হাসিনার সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
রাসেল জানান, তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি বন্দিশালা পরিদর্শন করতে দেখার পর তিনি ধারণা করছেন, তাঁকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
এটি প্রায় প্রকাশ্যই ছিল যে, হাসিনা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। সাবেক বন্দী, বিরোধী দল এবং তদন্তকারীদের মতে, তাঁর সমালোচনা করলে ‘গুম’ হয়ে যেতে হতো। তবে কত মানুষ গুম হয়েছেন তার মোট সংখ্যা কখনোই স্পষ্ট হবে না হয়তো।
একটি বাংলাদেশি এনজিও ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনা রেকর্ড করছে। তারা কমপক্ষে ৭০৯ জন ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং আরও অনেকে এগিয়ে আসছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। তবে এটি মোট সংখ্যা নয়, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
আহমেদ বিন কাসেমের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমেই প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বন্দিশালার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের, এমনকি শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করার জন্য মামলার নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্দী থাকলেও ভুক্তভোগীদের বর্ণনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব গুমের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কাউকে জোরপূর্বক গুম করা হয়ে থাকে, তবে তা হাসিনা—যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন—বা তাঁর মন্ত্রিসভার কারও নির্দেশে করা হয়নি।
আরাফাত বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো আটক ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক গতিবিধির ফলাফল হতে পারে। আমার মনে হয় না, আওয়ামী লীগ বা সরকারের কাছে এসব লোকদের গোপনে আটক রাখার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আছে।’
সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, এসব কারাগারে বন্দী থাকা ব্যক্তিরাই এসব গুমে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছিলেন এবং তাঁরা শুধু তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা বলেছিলেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছিল।’
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তাঁদের জীবন এখনো বিপন্ন। চৌধুরী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি, এমনকি বাজারেও যাননি। চৌধুরীকে যারা আটকে রেখেছিল, তারা তাঁকে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেছিল।
ইকবাল চৌধুরী জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘যদি তুমি কখনো বলো তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছিল বা কী ঘটেছিল, এবং যদি তোমাকে আবার ধরা হয় তবে তোমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না। তুমি এই পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে!’
চৌধুরী বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং মারধর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক শকের কারণে আমার একটি আঙুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমি পায়ের শক্তি হারিয়েছি, শারীরিক শক্তি হারিয়েছি।’ তিনি অন্যদের শারীরিক নির্যাতনের শব্দ, বয়স্ক পুরুষদের আর্তনাদ ও ব্যথায় কান্নার শব্দ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ভয় পাচ্ছি।’
আয়নাঘরের আরেক ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ। তিনিও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবনের দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা আমাকে এমন এক জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করেছিল যেখানে কোনো মানুষের থাকা সম্ভব নয়।’
রহমতুল্লাহ জানান, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে র্যাব কর্মকর্তারা—যাদের মধ্যে কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন, কেউ সাদা পোশাকে—তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। তিনি পাশের শহরে বাবুর্চির কাজ করতেন এবং একই সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতবিরোধী এবং ইসলাম সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
একটি কলম ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি তাঁর সেলের নকশা আঁকেন, যার মধ্যে খোলা ড্রেনটিও রয়েছে, যা তিনি মলত্যাগের জন্য ব্যবহার করতেন।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেও আমার খারাপ লাগে। সেখানে ঠিকমতো শোয়ার জায়গাও ছিল না, তাই আমাকে কুঁকড়ে শুতে হতো। শুয়ে পা মেলে দিতে পারতাম না।’
বিবিসি মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার নামে আরও দুই সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই সেই মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করতে হবে। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।’
নিজেকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কংক্রিটের সেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হওয়া উচিত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ হতে পারে। কিন্তু রহমতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। এই ভয় আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে।’

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি দেয়াল ভেঙে গোপন কারাগারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, একটি দরজা নতুন করে ইট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে। পেছনে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে ছিল তা স্পষ্ট। ভেতরে দেখা যায়, একটি সরু করিডর, যার ডান ও বাম পাশে অনেকগুলো ছোট কুঠুরি। কুঠুরিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই এই গোপন কারাগারটি সম্ভবত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না—সেখানে বন্দী থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যদের স্মৃতি হয়তো অজানাই থেকে যেত! আহমেদ বিন কাসেম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক ছিলেন। এই বন্দীশালায় তাঁকে ৮ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
কারাগারে থাকার সময় তাঁর চোখ প্রায় সব সময়ই বাঁধা থাকত। তাই তিনি বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দের ভিত্তিতে তাঁর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। তিনি উড়োজাহাজ উঠানামার শব্দ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের কাছে এক বন্দীশালায় পৌঁছান। মূল ভবনের পেছনে তাঁরা একটি ছোট, কঠোর পাহারায় ঘেরা জানালাবিহীন কংক্রিটের অবকাঠামো খুঁজে পান। সেখানেই বন্দীদের রাখা হতো।
এটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তকারীরা কাসেমের মতো শত শত ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসব ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, আরও অনেককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে ওই কারাগারসহ অন্যান্য গোপন কারাগার চালাতেন মূলত এলিট কাউন্টার–টেররিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাঁরা সরাসরি হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন, অনুমতি বা নির্দেশের মাধ্যমে করিয়েছিলেন।’ তবে হাসিনার দলের লোকদের দাবি, তাঁদের অজান্তে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর কোনো দায় তাঁরা নেবেন না। সামরিক বাহিনী একাই কাজ করেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যরা মুক্তি পেয়েছেন ৭ মাসের বেশি সময় হলো, তবে এখনো তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁদের যারা গোপন কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো নিরাপত্তা বাহিনীতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এবং অনেকে এখনো মুক্ত।
আহমেদ বিন কাসেম জানান, এখন টুপি ও মাস্ক ছাড়া তিনি কখনই বাড়ির বাইরে যান না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতে হয়।’ কিছুদিন আগে তিনি বিবিসির দলটিকে সেই জায়গাটি দেখাতে নিয়ে যান, যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ভারী ধাতব দরজা ঠেলে, মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা পেরিয়ে তিনি ‘তাঁর’ ঘরে প্রবেশ করেন। এই কুঠুরিতেই আট বছর বন্দী ছিলেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’ সেখানে কোনো জানালা ছিল না, প্রাকৃতিক আলো আসার কোনো পথ ছিল না। ভেতরে থাকলে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না। চল্লিশের কোঠায় থাকা আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম এর আগেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকে সেই ছোট্ট কুঠুরির ভেতরটা বিস্তারিত দেখালেন, যেখানে তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ঘরটি এত ছোট যে—একজন গড় উচ্চতার মানুষের পক্ষেও সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা, ইট ও কংক্রিটের টুকরা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করার জন্য এটি ছিল শেষ চেষ্টা।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বিবিসির সঙ্গে ওই বন্দীশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি একটি বন্দিশালা। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশে ৫০০,৬০০, ৭০০ টিরও বেশি কুঠুরি রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, এটি ব্যাপক ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
আহমেদ বিন কাসেম তাঁর সেলের হালকা নীল রঙের টাইলসের কথাও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। মেঝেতে ভাঙা টাইলসের টুকরোগুলো পড়ে ছিল। আর এর সাহায্যেই তদন্তকারীরা এই বিশেষ ঘরটি খুঁজে পান। নিচতলার সেলগুলোর তুলনায় এটি বেশ বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। একপাশে একটি নিচু টয়লেট রয়েছে।
সেই কষ্টের স্মৃতিচারণ করতে করতে আহমেদ বিন কাসেম ঘরের চারপাশে হেঁটে হেঁটে দেখান এবং বন্দী জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তা তুলে ধরেন। গ্রীষ্মকালে সেখানে অসহ্য গরম লাগত। তিনি মেঝেতে কুঁকড়ে বসে দরজার নিচের দিকে মুখ রাখতেন কিছুটা বাতাস পাওয়ার আশায়। তিনি বলেন, ‘মনে হতো মৃত্যুর চেয়েও দুঃসহ।’
নিজের দুঃসহ স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করানোর বিষয়টিকে অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আহমেদ বিন কাসেম মনে করেন, বিশ্বের মানুষের দেখা উচিত, কী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সাহায্য ও সমর্থন করেছে, সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখনো তাদের পদে বহাল আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (এখানকার) গল্প তুলে ধরা দরকার এবং যারা ফিরে আসেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যা কিছু করার আছে তা করতে হবে।’
বিবিসির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁকে ঢাকার প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখন মনে করছেন, এ ধরনের আরও অনেক কেন্দ্র ছিল। আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি র্যাবের হেফাজতেই ছিলেন। তদন্তকারীরা এখন সন্দেহ করছেন, প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি শাখা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাঁকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আহমেদ বিন কাসেম ছাড়াও বিবিসি এমন বন্দীশালায় আটক থাকা আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংযোগ ছিল না। অনেকের অভিযোগ, তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসি এই ভুক্তভোগীদের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও, প্রায় সবাই বলেছেন—তাঁরা আতঙ্কিত যে, একদিন রাস্তায় বা বাসে তাঁদের নিপীড়নকারীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন, যখনই আমি গাড়িতে উঠি বা বাড়িতে একা থাকি, তখন আমি যেখানে ছিলাম সেই কথা ভেবে ভয় লাগে। আমি ভাবি, আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, আদৌ আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল কিনা।’
রাসেল জানান, তাঁর নাক ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতে এখনো ব্যথা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে অনেক মারধর করেছে।’ রাসেল জানান, গত জুলাইয়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে একদল লোক তাঁর কাছে আসে। তাঁরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং তাঁকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে।
এরপর তৎক্ষণাৎ তাঁকে একটি ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়, মুখ ঢাকা হয় এবং চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভবনে নিয়ে একটি কামরায় রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা পর একজন একজন করে লোকজন আসতে শুরু করে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আপনি কে? আপনি কী করেন?’ এরপর শুরু হয় মারধর।
রাসেল আরও বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ছিল ভীতিকর। আমার মনে হয়েছিল, আমি আর কখনোই বের হতে পারব না।’ রাসেল এখন তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং চেয়ারে বসে তিনি তাঁর বন্দী জীবনের কয়েক সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করছিলেন, যেন তাঁর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!
রাসেলও মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রনেতা ছিলেন এবং তাঁর বাবা ছিলেন ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিদেশে থাকা তাঁর ভাই প্রায়শই হাসিনার সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
রাসেল জানান, তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি বন্দিশালা পরিদর্শন করতে দেখার পর তিনি ধারণা করছেন, তাঁকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
এটি প্রায় প্রকাশ্যই ছিল যে, হাসিনা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। সাবেক বন্দী, বিরোধী দল এবং তদন্তকারীদের মতে, তাঁর সমালোচনা করলে ‘গুম’ হয়ে যেতে হতো। তবে কত মানুষ গুম হয়েছেন তার মোট সংখ্যা কখনোই স্পষ্ট হবে না হয়তো।
একটি বাংলাদেশি এনজিও ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনা রেকর্ড করছে। তারা কমপক্ষে ৭০৯ জন ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং আরও অনেকে এগিয়ে আসছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। তবে এটি মোট সংখ্যা নয়, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
আহমেদ বিন কাসেমের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমেই প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বন্দিশালার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের, এমনকি শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করার জন্য মামলার নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্দী থাকলেও ভুক্তভোগীদের বর্ণনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব গুমের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কাউকে জোরপূর্বক গুম করা হয়ে থাকে, তবে তা হাসিনা—যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন—বা তাঁর মন্ত্রিসভার কারও নির্দেশে করা হয়নি।
আরাফাত বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো আটক ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক গতিবিধির ফলাফল হতে পারে। আমার মনে হয় না, আওয়ামী লীগ বা সরকারের কাছে এসব লোকদের গোপনে আটক রাখার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আছে।’
সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, এসব কারাগারে বন্দী থাকা ব্যক্তিরাই এসব গুমে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছিলেন এবং তাঁরা শুধু তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা বলেছিলেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছিল।’
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তাঁদের জীবন এখনো বিপন্ন। চৌধুরী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি, এমনকি বাজারেও যাননি। চৌধুরীকে যারা আটকে রেখেছিল, তারা তাঁকে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেছিল।
ইকবাল চৌধুরী জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘যদি তুমি কখনো বলো তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছিল বা কী ঘটেছিল, এবং যদি তোমাকে আবার ধরা হয় তবে তোমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না। তুমি এই পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে!’
চৌধুরী বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং মারধর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক শকের কারণে আমার একটি আঙুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমি পায়ের শক্তি হারিয়েছি, শারীরিক শক্তি হারিয়েছি।’ তিনি অন্যদের শারীরিক নির্যাতনের শব্দ, বয়স্ক পুরুষদের আর্তনাদ ও ব্যথায় কান্নার শব্দ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ভয় পাচ্ছি।’
আয়নাঘরের আরেক ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ। তিনিও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবনের দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা আমাকে এমন এক জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করেছিল যেখানে কোনো মানুষের থাকা সম্ভব নয়।’
রহমতুল্লাহ জানান, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে র্যাব কর্মকর্তারা—যাদের মধ্যে কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন, কেউ সাদা পোশাকে—তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। তিনি পাশের শহরে বাবুর্চির কাজ করতেন এবং একই সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতবিরোধী এবং ইসলাম সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
একটি কলম ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি তাঁর সেলের নকশা আঁকেন, যার মধ্যে খোলা ড্রেনটিও রয়েছে, যা তিনি মলত্যাগের জন্য ব্যবহার করতেন।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেও আমার খারাপ লাগে। সেখানে ঠিকমতো শোয়ার জায়গাও ছিল না, তাই আমাকে কুঁকড়ে শুতে হতো। শুয়ে পা মেলে দিতে পারতাম না।’
বিবিসি মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার নামে আরও দুই সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই সেই মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করতে হবে। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।’
নিজেকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কংক্রিটের সেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হওয়া উচিত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ হতে পারে। কিন্তু রহমতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। এই ভয় আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৮ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১১ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেশাহরিয়ার হাসান, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারাসহ জুলাই যোদ্ধারা। সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন হাল। নির্বাচনের ট্রেন চলা শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে সবাইকে। পরিস্থিতি ঠিক করতে এখনই দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং নাশকতার আশঙ্কার মধ্যে এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে ভাব নেমে এসেছে। তফসিলের পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তাও কমে গেছে।
সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। গত শনিবার পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে দেশের সব রেঞ্জের ডিআইজি ও মহানগর পুলিশের কমিশনারদের বৈঠকেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো প্রার্থী অনিরাপদ বোধ করলে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বৈঠকেও চোরাগোপ্তা হামলা ও জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রসঙ্গে ওঠে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, যাতে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও কার্যকর করা যায়। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।’
এদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্তি থাকলেও ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান সব রাজনৈতিক দল আবার এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও এসেছে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদউল্লাহর গণসংযোগের সময় গুলিতে একজন নিহত ও প্রার্থীসহ দুজন আহত হন। অবশ্য সেখানে হত্যার লক্ষ্য ছিলেন সন্ত্রাসী সরোয়ার। এরপর ২৭ নভেম্বর পাবনা-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলের গণসংযোগকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষ হয়। এর পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, কয়েক দিন ধরে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরির একটি চেষ্টা চলছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
ওসমান হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা হিসেবে দেখছেন রাজনীতিকদের অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, কোথায় কোথায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি, কোথায় শক্ত প্রার্থী রয়েছেন—এসব জায়গায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এমন ঘটনা যেকোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা চ্যানেলকে সক্রিয় করতে হবে এবং অন্য কাজের চেয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে শনিবার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে কমিটি করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট-২ শুরুর ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এদিকে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য পুলিশ নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলেছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পেশাদার সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার আলোকে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ চিহ্নিত করা এবং অস্ত্রের পেছনে থাকা অর্থের জোগানদাতাদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, লুণ্ঠিত ১ হাজার ৩৩৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০০টি পিস্তল রয়েছে।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কার পাশাপাশি লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কোনো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অভিযানে এসব বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের দাবি করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ও জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে প্রার্থীদের এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনের সময় যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং নির্বাচনকে শঙ্কামুক্ত রাখতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। প্রার্থীদের ঠিক কোন জায়গায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজনৈতিক নেতারাসহ জুলাই যোদ্ধারা। সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলেও এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সময়মতো কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন হাল। নির্বাচনের ট্রেন চলা শুরু হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে সবাইকে। পরিস্থিতি ঠিক করতে এখনই দৃশ্যমান ও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তাঁরা।
ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে মেডিকেল বোর্ড।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে চোরাগোপ্তা হামলা, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার এবং নাশকতার আশঙ্কার মধ্যে এ ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে থমথমে ভাব নেমে এসেছে। তফসিলের পর যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল, তাও কমে গেছে।
সূত্র বলেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে মাঠপর্যায় থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। গত শনিবার পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে দেশের সব রেঞ্জের ডিআইজি ও মহানগর পুলিশের কমিশনারদের বৈঠকেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে পরামর্শ এসেছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং কোনো প্রার্থী অনিরাপদ বোধ করলে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই বৈঠকেও চোরাগোপ্তা হামলা ও জামিনে মুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের প্রসঙ্গে ওঠে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি, যাতে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও কার্যকর করা যায়। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার শঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।’
এদিকে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভক্তি থাকলেও ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় প্রধান সব রাজনৈতিক দল আবার এক কাতারে দাঁড়িয়েছে। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও এসেছে। ওই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদউল্লাহর গণসংযোগের সময় গুলিতে একজন নিহত ও প্রার্থীসহ দুজন আহত হন। অবশ্য সেখানে হত্যার লক্ষ্য ছিলেন সন্ত্রাসী সরোয়ার। এরপর ২৭ নভেম্বর পাবনা-৪ আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী আবু তালেব মণ্ডলের গণসংযোগকে কেন্দ্র করে হামলা ও সংঘর্ষ হয়। এর পেছনে স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধকে দায়ী করা হচ্ছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ভিন্ন। তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে। এই ঘটনার পর কোনো কোনো দল থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, কয়েক দিন ধরে বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরির একটি চেষ্টা চলছে। তবে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নির্বাচনের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নির্বাচন যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
ওসমান হাদির ওপর হামলাকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার একটি সুপরিকল্পিত চেষ্টা হিসেবে দেখছেন রাজনীতিকদের অনেকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই একটি পক্ষ নির্বাচন ঠেকানোর হুমকি দিয়ে আসছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারও ঘটনাটিকে নির্বাচনবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করা হবে না। জনগণের নিরাপত্তা ও প্রার্থীদের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, কোথায় কোথায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও শত্রুতা বেশি, কোথায় শক্ত প্রার্থী রয়েছেন—এসব জায়গায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এমন ঘটনা যেকোনোভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দা চ্যানেলকে সক্রিয় করতে হবে এবং অন্য কাজের চেয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এদিকে প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে শনিবার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে কমিটি করা হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট-২ শুরুর ঘোষণাও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এদিকে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের জন্য পুলিশ নিরাপত্তা প্রটোকল দেবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র বলেছে, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতে আওয়ামী লীগের শাসনামলে যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে অস্ত্র ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি পেশাদার সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার আলোকে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহপথ চিহ্নিত করা এবং অস্ত্রের পেছনে থাকা অর্থের জোগানদাতাদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে জোর দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, লুণ্ঠিত ১ হাজার ৩৩৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০০টি পিস্তল রয়েছে।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, সীমান্ত দিয়ে দেশে অস্ত্র প্রবেশের আশঙ্কার পাশাপাশি লুট হওয়া অস্ত্রগুলো কোনো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না, সেটিও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। অভিযানে এসব বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।
নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনা
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের দাবি করেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা ও জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নতুন করে সাজানো হচ্ছে। যেকোনো মূল্যে প্রার্থীদের এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, নির্বাচনের সময় যেকোনো ঝুঁকি মোকাবিলা করতে এবং নির্বাচনকে শঙ্কামুক্ত রাখতে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রার্থীদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি বলেন, প্রার্থীদের সঙ্গে সশস্ত্র প্রহরী থাকবে এবং গোয়েন্দা সংস্থা সম্ভাব্য ঝুঁকি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সতর্ক করবে। প্রার্থীদের ঠিক কোন জায়গায় যাওয়া নিরাপদ বা ঝুঁকিপূর্ণ সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৮ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১১ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
শুধু শান্ত নন, সুদানের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওই ঘাঁটিতে হামলায় সেনাবাহিনীর আরও তিন সৈনিক এবং দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন। সবার বাড়িতে এখন মাতম চলছে। তাঁদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও প্রতিবেশীদের কেউ।
২০১৮ সালে সৈনিক পদে যোগ দেওয়া শান্ত গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শান্তর স্ত্রী এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাটমাধাই ডারারপাড়ে শান্ত মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা, সেখানে কান্নার কোনো শব্দ নেই। শান্তর মা সাহেরা বেগম বিছানায় বসে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। কথা নেই, কান্নাও নেই। ছেলের নাম উচ্চারণ করলেই চোখ ভিজে ওঠে সাহেরা বেগম এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের। লাশ দেশে এলে বাবার কবরের পাশে দাফনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এখন তাঁরা লাশ আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। শান্তর ভাই সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘যাওয়ার সময় মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নিয়েছিল। কেউ ভাবেনি, সেটিই হবে তার শেষ দেখা। এমন মৃত্যু আমাদের কল্পনার বাইরে।’
শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর) এবং সৈনিকদের মধ্যে মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), শামীম রেজা (রাজবাড়ী), শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা) নিহত হন।
এ ঘটনায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা); সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী) আহত হয়েছেন বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
হামলায় নিহত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকের আবহ চলছে বাড়িতে। জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর পাই। এরপর ভোরে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন করে নিশ্চিত করেন।’ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার স্বামীর ছবি আর তিন বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে আছেন। বৃদ্ধ বাবা হজরত আলী রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শুনছি, বোমা ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে। এ দুঃখ কেমনে সহ্য করমু?’
হামলায় নিহত মমিনুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। তাঁর বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। মমিনুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার বিকেলে ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেন মমিনুল। কয়েক ঘণ্টা পরই আসে মৃত্যুর খবর। প্রতিবেশীরা জানান, খবর শোনার পর স্ত্রী ও মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো মানুষ ছিল। আল্লাহ হয়তো তাকে ভালোবাসেন বলেই শহীদের মৃত্যু দিয়েছেন।’
ড্রোন হামলায় নিহত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের আমলাগাছি গ্রামের সবুজ মিয়া ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। এক বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে মা, স্ত্রীসহ স্বজনেরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
হামলায় নিহত রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে শামীম রেজা ছিলেন তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই ভাই আর নেই। গত শুক্রবার তিনি বাড়িতে ভিডিও কলে শেষবার কথা বলেছিলেন।’
শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে ৭ মাস আগে বিদেশে গেছে। শুক্রবারও কথা বলেছি। শামীম তখন বলল, আব্বু তুমি ভালো থেকো আমি ডিউটিতে যাব। আমার ছেলেকে এনে দাও তোমরা।’
নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা নিহত হওয়ার খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ ছিলেন সবার বড়। ২০০৬ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর দুই ভাইও সেনাবাহিনীর সদস্য।
মাসুদ রানার স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি বলেন, ‘তিনি আমার মেয়েকে এতিম করে চলে গেলেন। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। আজ তিনি নেই ভাবতেই পারছি না।’
ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, তাঁদের মধ্যে সৈনিক মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আহত অন্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করা হয়েছে, তাঁরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
আন্তোনিও গুতেরেসের শোক
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আমি গভীর সমবেদনা জানাতে ফোন করেছি। আমি এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত।’
হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূসও শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি আহত সেনাসদস্যদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার এবং নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।

সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
শুধু শান্ত নন, সুদানের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ওই ঘাঁটিতে হামলায় সেনাবাহিনীর আরও তিন সৈনিক এবং দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন। সবার বাড়িতে এখন মাতম চলছে। তাঁদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না স্বজন ও প্রতিবেশীদের কেউ।
২০১৮ সালে সৈনিক পদে যোগ দেওয়া শান্ত গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। শান্তর স্ত্রী এখন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাটমাধাই ডারারপাড়ে শান্ত মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা, সেখানে কান্নার কোনো শব্দ নেই। শান্তর মা সাহেরা বেগম বিছানায় বসে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। কথা নেই, কান্নাও নেই। ছেলের নাম উচ্চারণ করলেই চোখ ভিজে ওঠে সাহেরা বেগম এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্বজনদের। লাশ দেশে এলে বাবার কবরের পাশে দাফনের পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। এখন তাঁরা লাশ আসার অপেক্ষায় রয়েছেন। শান্তর ভাই সোহাগ মন্ডল বলেন, ‘যাওয়ার সময় মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নিয়েছিল। কেউ ভাবেনি, সেটিই হবে তার শেষ দেখা। এমন মৃত্যু আমাদের কল্পনার বাইরে।’
শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী। এতে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মধ্যে করপোরাল মো. মাসুদ রানা (নাটোর) এবং সৈনিকদের মধ্যে মো. মমিনুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম), শামীম রেজা (রাজবাড়ী), শান্ত মন্ডল (কুড়িগ্রাম), মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (কিশোরগঞ্জ) এবং লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া (গাইবান্ধা) নিহত হন।
এ ঘটনায় লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান (কুষ্টিয়া), সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন (দিনাজপুর), করপোরাল আফরোজা পারভিন ইতি (ঢাকা), ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম (বরগুনা); সৈনিক মো. মেজবাউল কবির (কুড়িগ্রাম), মোসা. উম্মে হানি আক্তার (রংপুর), চুমকি আক্তার (মানিকগঞ্জ) ও মো. মানাজির আহসান (নোয়াখালী) আহত হয়েছেন বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
হামলায় নিহত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকের আবহ চলছে বাড়িতে। জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে সহকর্মীদের কাছ থেকে খবর পাই। এরপর ভোরে সেনাবাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন করে নিশ্চিত করেন।’ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার স্বামীর ছবি আর তিন বছরের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে আছেন। বৃদ্ধ বাবা হজরত আলী রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি শুনছি, বোমা ফালাইয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে। এ দুঃখ কেমনে সহ্য করমু?’
হামলায় নিহত মমিনুল ইসলামের বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের পারুলেরপাড় গ্রামে। তাঁর বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর। মমিনুলের পরিবারের সদস্যরা জানান, শনিবার বিকেলে ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেন মমিনুল। কয়েক ঘণ্টা পরই আসে মৃত্যুর খবর। প্রতিবেশীরা জানান, খবর শোনার পর স্ত্রী ও মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। বাবা আব্দুল করিম বলেন, ‘আমার ছেলে ভালো মানুষ ছিল। আল্লাহ হয়তো তাকে ভালোবাসেন বলেই শহীদের মৃত্যু দিয়েছেন।’
ড্রোন হামলায় নিহত গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের আমলাগাছি গ্রামের সবুজ মিয়া ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন। এক বছর আগে বিয়ে করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে মা, স্ত্রীসহ স্বজনেরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
হামলায় নিহত রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে শামীম রেজা ছিলেন তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকে আমরা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই ভাই আর নেই। গত শুক্রবার তিনি বাড়িতে ভিডিও কলে শেষবার কথা বলেছিলেন।’
শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে ৭ মাস আগে বিদেশে গেছে। শুক্রবারও কথা বলেছি। শামীম তখন বলল, আব্বু তুমি ভালো থেকো আমি ডিউটিতে যাব। আমার ছেলেকে এনে দাও তোমরা।’
নাটোরের লালপুর উপজেলার আরবাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ রানা নিহত হওয়ার খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মাসুদ ছিলেন সবার বড়। ২০০৬ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তাঁর দুই ভাইও সেনাবাহিনীর সদস্য।
মাসুদ রানার স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি বলেন, ‘তিনি আমার মেয়েকে এতিম করে চলে গেলেন। বাকি জীবন আমরা কীভাবে কাটাব? গতকালও আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছিলেন। আজ তিনি নেই ভাবতেই পারছি না।’
ড্রোন হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, তাঁদের মধ্যে সৈনিক মেজবাউল কবিরের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। আহত অন্যদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে স্থানান্তর করা হয়েছে, তাঁরা সবাই শঙ্কামুক্ত।
আন্তোনিও গুতেরেসের শোক
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। গুতেরেস প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘আমি গভীর সমবেদনা জানাতে ফোন করেছি। আমি এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত।’
হামলার ঘটনায় জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূসও শান্তিরক্ষীদের মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি আহত সেনাসদস্যদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার এবং নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানান।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১১ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিকল্পিতভাবে একযোগে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আর এই দুই বাহিনীর মূল শক্তি ছিল স্বাধীনতাবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাদের সহায়তা করেছিল ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। কোনো দেশই তাদের ফেরত দিচ্ছে না।
ট্রাইব্যনালের ১৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন হত্যাযজ্ঞের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ও মুঈনুদ্দীন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।
জামায়াতের এই দুই ছাত্র নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করে তারা।
‘ফ্যাসিস্ট’ জামায়াত
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছিল। আদালত বলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামী একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসাবে কাজ করেছে। ‘কিলিং স্কোয়াড’ আল বদরের নিয়ন্ত্রণ জামায়াতের হাতেই ছিল।
রায়ে বলা হয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত মহাপরিকল্পনার আলোকেই সে সময় আল বদর বাহিনীকে নামানো হয়। বাঙালি জাতিকে প্যারালাইজড করতে তারা বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিহীন করতে চেয়েছিল।
একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ‘সন্তানের জন্য সেলিনা পারভীন প্রাণ ভিক্ষা চান, তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে, যাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারীরা তাকে ছাড়েনি। বেয়নেট দিয়ে তাকে তাতক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় বলে প্রসিকিউশনের ২২ নম্বর সাক্ষী জানিয়েছেন। সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন মা। ভীতিকর আক্রমণ কেবল সেলিনা পারভীনের ওপরই করা হয় নাই। বরং মাতৃত্বের ওপরও হয়েছে। এটা বরং মাতৃহন্তাও। অবর্ণনীয় এই নিষ্ঠুরতা মানবতার বিবেককে আঘাত করেছে।’
এর আগে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মুঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ায় ওই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।
রায়ে বলা হয়, ‘এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো।’

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী। পরিকল্পিতভাবে একযোগে বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল। আর এই দুই বাহিনীর মূল শক্তি ছিল স্বাধীনতাবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর তখনকার সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাদের সহায়তা করেছিল ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীরা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় জন শিক্ষক, ছয় জন সাংবাদিক ও তিনজন চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ছাত্রসংঘের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ও আলবদর কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। পলাতক আশরাফুজ্জামান বর্তমানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে, আর মুঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্যে। কোনো দেশই তাদের ফেরত দিচ্ছে না।
ট্রাইব্যনালের ১৫৪ পৃষ্ঠার রায়ে উঠে এসেছে, কীভাবে আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন ১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আল বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন হত্যাযজ্ঞের ‘চিফ এক্সিকিউটর’ ও মুঈনুদ্দীন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামানের নাখালপাড়ার বাসা থেকে উদ্ধার করা ব্যক্তিগত দিনপঞ্জিতে হত্যার পরিকল্পনা ও একটি তালিকাও পাওয়া যায়।
জামায়াতের এই দুই ছাত্র নেতা ও তাদের সহযোগীদের হাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাট্যকার মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ড. সিরাজুল হক খান, ড. আবুল খায়ের, ড. ফয়জুল মহিউদ্দিন, অধ্যাপক রাশিদুল হাসান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা ও ড. সন্তোষ ভট্টাচার্য।

সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন, সৈয়দ নাজমুল হক, এএনএম গোলাম মুস্তাফা, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, শহীদুল্লাহ কায়সার এবং চিকিৎসক মো. মর্তুজা, মো. ফজলে রাব্বি ও আলিম চৌধুরীকেও হত্যার পর গুম করে তারা।
‘ফ্যাসিস্ট’ জামায়াত
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছিল। আদালত বলেছিল, সেই সময় জামায়াতে ইসলামী একটি ফ্যাসিস্ট সংগঠন হিসাবে কাজ করেছে। ‘কিলিং স্কোয়াড’ আল বদরের নিয়ন্ত্রণ জামায়াতের হাতেই ছিল।
রায়ে বলা হয়, এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ফ্যাসিস্ট জামায়াতে ইসলামীর সংগঠিত মহাপরিকল্পনার আলোকেই সে সময় আল বদর বাহিনীকে নামানো হয়। বাঙালি জাতিকে প্যারালাইজড করতে তারা বুদ্ধিজীবী-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিহীন করতে চেয়েছিল।
একাত্তরের ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক শিলালিপির সম্পাদক সেলিনা পারভীনকে অপহরণের পর হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ‘সন্তানের জন্য সেলিনা পারভীন প্রাণ ভিক্ষা চান, তাকে ছেড়ে দিতে বলেন। তার ছোট একটি ছেলে রয়েছে, যাকে দেখাশুনা করার আর কেউ নেই। কিন্তু নিষ্ঠুর হত্যাকারীরা তাকে ছাড়েনি। বেয়নেট দিয়ে তাকে তাতক্ষণিকভাবে হত্যা করা হয় বলে প্রসিকিউশনের ২২ নম্বর সাক্ষী জানিয়েছেন। সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন মা। ভীতিকর আক্রমণ কেবল সেলিনা পারভীনের ওপরই করা হয় নাই। বরং মাতৃত্বের ওপরও হয়েছে। এটা বরং মাতৃহন্তাও। অবর্ণনীয় এই নিষ্ঠুরতা মানবতার বিবেককে আঘাত করেছে।’
এর আগে জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযমের যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে দলটিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। জিয়াউর রহমান ও এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ প্রহরায় মুঈনুদ্দীনকে দেশে আসার সুযোগ করে দেয়ায় ওই দুই সামরিক শাসককেও ধিক্কার জানানো হয়েছে রায়ের পর্যবেক্ষণে।
রায়ে বলা হয়, ‘এটা জাতির বড় একটি বিরাট লজ্জা (গ্রেট শেম) যে, জিয়া ও এরশাদ তাকে গ্রামের বাড়িতে যেতে দিয়েছেন। আত্মগোপনে গিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া এই আসামিকে সে সময় পুলিশি নিরাপত্তাও দেয়া হয়। বিচারের মুখোমুখি করার পরিবর্তে তাকে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি দিয়ে সম্মান দেয়া হলো।’

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৮ ঘণ্টা আগে
প্রেস উইং জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।
১৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।
আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।
ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।
আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।
আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।
ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করা হলেও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনা দৃশ্যপট বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনায় সম্ভাব্য প্রার্থীসহ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহের বদলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
৮ ঘণ্টা আগে
সুদান থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ভিডিও কলে পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু রাতেই দেশটির আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় নিহত হন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক শান্ত মন্ডল। কুড়িগ্রামে শান্তদের বাড়িতে এখন চলছে শুধুই মাতম।
৮ ঘণ্টা আগে
আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
১১ ঘণ্টা আগে