রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা এসেছে, চলবে কত দিন

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ২২: ২৫
আপডেট : ১২ জুন ২০২৩, ১৪: ১৭

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে সাড়ে ২৬ হাজার টন কয়লা। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ অর্থায়নে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট আংশিক সক্ষমতায় চললে এ কয়লা দিয়ে সাড়ে সাত দিন চালানো যাবে। আর ইউনিটটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালালে চলবে মাত্রা সাড়ে চার দিনেরও কম। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে এমনটাই জানিয়েছেন। 

কয়লা আমদানির ব্যাপারে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সর্বশেষ কয়লার যে চালান চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে, সেটি ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার জাহাজে। ইন্দোনেশিয়া থেকে চীনের পতাকাবাহী জাহাজে করে এসেছে এটি। তবে মোংলা বন্দরে এত বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ কারণে এর মধ্যে থেকে সাড়ে ২৬ হাজার টন কয়লা লাইটারেজ জাহাজে করে মোংলা বন্দরে আনা হয়েছে। বাকি কয়লাও কিছুদিনের মধ্যে মোংলায় আনা হবে।

আজকে মোংলা বন্দরে আসা কয়লা দিয়ে কত দিন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু রাখা যাবে জানতে চাইলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাঈদ একরাম উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাচ্ছি ৩৫০-৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতায়। এই উৎপাদন সক্ষমতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালালে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার টন কয়লা লাগে। সেই হিসাবে আজকে আনা কয়লা দিয়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ দিন চলবে।’ 

রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট। এটিকে পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে প্রতিদিন কয়লা লাগবে প্রায় ৬ হাজার টন। সে হিসাবে আজকে আনা সাড়ে ২৬ হাজার টন কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় সাড়ে ৪ দিনেরও কম সময় চালানো যাবে। 

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল), যার বহুল প্রচলিত নাম রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, কয়লার পর্যাপ্ত মজুত না থাকার কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটটি এখন ৩৪০-৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতায় চলছে। আর রামপালের ৬৬০ মেগাওয়াটের দ্বিতীয় ইউনিট এখনো উৎপাদনে আসেনি। 

কয়লার আমদানি বিল বকেয়া থাকায় সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ কয়লার দিতে অস্বীকার করলে গত ২৪ এপ্রিল থেকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ ছিল দীর্ঘ ২৩ দিন। আংশিক বিল পরিশোধ করে কয়লা সরবরাহ আবার শুরু হলে গত ১৬ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে উৎপাদন ফের শুরু হয়।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘প্রথম ইউনিট আংশিক সক্ষমতায় যেভাবে চালানো হচ্ছে তাতে নতুন করে আনা ৫০ হাজার টন কয়লা দিয়ে প্রায় ১৪ দিন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা যাবে। তবে আমাদের আগের কিছু কয়লা আছে। একই সঙ্গে চলতি মাসের ১৮ তারিখ আরেকটা ৫০ হাজার টনের কয়লাবাহী জাহাজ চলে আসবে। এসব মিলিয়ে আমরা আশা করছি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখা যাবে।’ 

জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের পর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র আবার বন্ধ হয়ে যাবে কি না জানতে চাইলে সাঈদ একরাম উল্লাহ বলেন, ‘এটা নির্ভর করছে সরকার কয়লা আমদানি করার জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলে কি না, তার ওপর। এখন আমাদের পাইপলাইনে যে কয়লা আছে, সেটি দিয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চালু রাখা যাবে। জুলাইয়ের পর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে চাইলে নতুন ঋণপত্র খুলতে হবে।’ 

সাঈদ একরাম উল্লাহ জানান, আজকে আনা কয়লা আমদানি করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আর কয়লা সরবরাহ করছে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরা।

প্রসঙ্গত, তীব্র গরম ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের মধ্যে কয়লা-সংকটের কারণে ৫ জুন পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ৯ জুন চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ডলার-সংকটের কারণে কয়লা আমদানিও কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ সম্পর্কিত আরও খবর পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত