দ্রব্যমূল্য নিয়ে সংসদে উত্তাপ: মোকাব্বির খান দায়িত্ব নিলে পদ ছাড়তে রাজি বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ১২: ৪৭
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩, ১৩: ০৩

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির পদত্যাগ দাবি করেছেন গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখানে একজন তো আমাকে পদত্যাগ করতে বললেন। খুব ভালো কথা বলছেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব উনি (মোকাব্বির) দায়িত্ব নিলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে উনারে দায়িত্বটা দিতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই আমার।’

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এর আগে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্র ১০ জন সদস্য ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন। তাঁরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেন। তবে, কণ্ঠভোটে তাঁদের প্রস্তাব নাকচ হয় এবং মন্ত্রীর প্রস্তাবিত অর্থ মঞ্জুর হয়।

ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। তাঁরা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রীর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বক্তব্য দেওয়ার সময় সমালোচনার উত্তর দেন।

ব্যবসার থেকে অনেক আগেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বারবার একটি কথা উঠে আসছে আমি ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ীরা আমার দ্বারা সুবিধা পাচ্ছেন। যাঁরা এটা বলছেন তাঁদের উদ্দেশে একটি কথাই বলব, তাঁদের রাজনীতির অভিজ্ঞতা কত বছরের তা জানি না। আমি কিন্তু ৫৬ বছর ধরে রাজনীতি করি। আমি ব্যবসা করি আজকে ৪০-৪২ বছর। কিন্তু ঘুরেফিরে কেউ বলেন না আমি রাজনীতিবিদ। বলেন আমি ব্যবসায়ী, সুযোগটা আপনি ব্যবসায়ীদের দিচ্ছেন।’

চাইলে জেল-জরিমানাসহ বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়। এটা ঠিক বড় বড় গ্রুপগুলো একসঙ্গে অনেক বেশি ব্যবসা করে। আমাদের লক্ষ্য রাখা দরকার-আমরা জেলে ভরলাম, জরিমানা করলাম। সেটা হয়তো করা সম্ভব। কিন্তু তাতে হঠাৎ করে যে ক্রাইসিসটা তৈরি হবে, সেটা সইতে তো আমাদের কষ্ট হবে। এ জন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে নিয়মের মধ্যে থেকে চেষ্টা করি।’

টিপু মুনশি বলেন, ‘কথাটা হলো দাম বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিন্তু বারবার বলছেন মানুষ কষ্টে আছেন। মানুষকে বলছেন সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য। আজকে আমরা কি আমাদের জন্য এই অবস্থায় এসেছি? বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। সেটা কিন্তু আমাদের হিসাবের মধ্যে আনতে হবে।’

টিপু মুনশি বলেন, ‘অনেক কথা আসছে। বলা যখন শুরু হয় ডানে-বামে সব চলে আসে। ডিম, সেটার খবর তো আমি জানি না। ডিমের বাড়া বা কমা যে মন্ত্রণালয় আছে তারা ঠিক করে দেয়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘দাম বেড়েছে কোনো সন্দেহ নেই। পেঁয়াজের কথা বলা হয়েছে। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেছিলাম কৃষকেরা যেন এমন একটি দাম পায় তারা উৎপাদনে উৎসাহিত হয়। পেঁয়াজে আমাদের বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ টন ঘাটতি রয়েছে। কৃষকেরা বেটার প্রাইজ হলে উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হবে। আমাদের এই পদক্ষেপে ঘাটতি কিন্তু অর্ধেকে নেমে আসছে। তবে এটাও ঠিক কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা হওয়া উচিত নয়। এ জন্য আমরা আমদানির ব্যবস্থা করেছি। কৃষকদের ন্যায্য মূল্য দিতে আমরা চাইছিলাম না আমদানি করতে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা আমদানি করেছি। ভারতের আমদানি পেঁয়াজের কেজি এখন ৪০-৪৫ টাকা। আজকে আমাদের দেশিটা ৬৫ টাকা। এটা আরও কমা উচিত বলে মনে করি। আমরা চেষ্টা করছি। ১০-১৫ দিনের মধ্যে এটা ৫০ টাকার মধ্যে চলে আসছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সবকিছু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে না। তরপরও দায় আমি নিয়ে বলছি আমরা সবৈবভাবে চেষ্টা করছি কী করা যায়।’

মূল্যস্ফীতি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দেশে মূল্যস্ফীতি কমে গেছে বলে এখানে বলা হয়েছে। কিন্তু সেসব দেশে যখন ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল তখন আমাদের ৮ শতাংশ ছিল সেটাও কিন্তু বলা উচিত। সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে ভালো কিছু থাকলে সেটা বললে আমরা উৎসাহিত হই। এই দুরবস্থার মধ্যেও আমরা প্রায় ৫৮ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করেছি। আমাদের রপ্তানি কিন্তু বেড়েই চলেছে। এটাও কিন্তু বলা দরকার।’

টিপু মুনশি বলেন, চিনির দামটা আমি নিজেও উপলব্ধি করি। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করছি। আগেও বলেছি এটার উিউটি স্টাকচারটা যদি কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এর দাম ১০০ টাকার মধ্যে চলে আসবে। সেটা হয়তো উনি করবেন। এর আগেও তিনি করেছিলেন। গত এক/দেড় মাসের মধ্যে আমরা ২০ টাকা তেলের দাম কমিয়েছি। তবে এটা ঠিক সব সময় ১০০ ভাগ সফল হই তা নয়। স্বীকার করে নিচ্ছি অনেক সময় বাস্তবায়নটা ধীর গতিতে হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত