প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহম্মদ ইউনূস বলেছেন, এক হয়ে কাজ করলে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া সম্ভব। আজ শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা জানি আপনার কোনো দোষ ছাড়াই কঠোর শাস্তি পেতে, নিজেদের থেকে অনেক বড় শক্তির মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে, যখন আমরা একত্রিত হই, যখন আমরা এক হয়ে কাজ করি, তখন আমাদের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করার ক্ষমতা আছে যেমনটি আমরা ১০০ দিন আগে বাংলাদেশে করেছি। এই কনভেনশনটি ঠিক সেই সম্পর্কে-ঐক্যের শক্তি, ভাগ করা উদ্দেশ্যের শক্তি।

সম্মেলনে আগত অতিথিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সত্যিকারের আনন্দ এখানে এমন একটি শহরে যেটি সবেমাত্র এক শ দিন আগে একটি অনন্য রাজনৈতিক উত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। গত ষোলো বছর ধরে দেশ শাসনকারী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন ঘটাতে এটি ছিল ছাত্রদের নেতৃত্বে বিপ্লব। আমি আমাদের আন্তর্জাতিক অতিথিদের একটি সদ্য উদীয়মান দেশে স্বাগত জানাই, নিজেকে নতুন বাংলাদেশ বলে অভিহিত করে পুরোনো বাংলাদেশ থেকে যে দূরত্ব স্থাপন করতে চায় তা তুলে ধরতে। শত দিন আগে প্রায় ১,৫০০ ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ বিক্ষোভকারী পুরোনো শাসনের হাতে নিহত হয়, প্রায় ২০,০০০ আহত হয়। এই আন্তর্জাতিক সমাবেশের মাধ্যমে আসুন আমরা তাদের সকলকে শ্রদ্ধা জানাই যারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যারা সারা জীবনের জন্য তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, চোখ এবং অনেক শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন এবং যারা এখন তাদের জীবনের সঙ্গে লড়াই করছে।

প্রধান উপদেষ্টা ঢাকায় আগত অতিথিদের জুলাই আন্দোলনের সময়ে করা’ স্ট্রিট আর্ট’ গুলো ঘুরে দেখার আহ্বান জানান।

হোটেল সোনারগাঁওয়ে চলছে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলন। বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এতে ৮০ টিরও বেশি দেশ থেকে ২০০ জনের বেশি আলোচক, ৩০০ জন প্রতিনিধিসহ ৮০০ শোর অংশগ্রহণকারী রয়েছেন।

এবারের থিম নির্ধারণ করা হয়েছে ‘এ ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড’। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এ সম্মেলন।

সম্মেলনে ভিডিও বার্তা দেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক বলেন, সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ এবার তৃতীয়বারের মতো বার্ষিক বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের আয়োজন করেছে। বিগত বছরগুলোতে এ সম্মেলন আয়োজন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা বাধা দেওয়া হয়েছিল। তবে এ বছর আমরা অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি।

সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান বলেন, এই সম্মেলন থেকে আমরা গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারসহ বৈশ্বিক বিষয়ে জানতে চাই, কথা বলতে চাই। এই সম্মেলনের এজেন্ডা জনগণের জন্য, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। সব ধরনের সমস্যা ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে চাই। পৃথিবীব্যাপী জনগণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন, দারিদ্র্য নিয়ে কথা বলার জন্যই আমাদের এই সম্মেলন।