বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
দেশের মানুষের ব্যক্তিগত গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে দেদার। এর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে উঠেছে ১ হাজারের মতো অবৈধ ডিজিটাল হাট। এসব গোপন হাটে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য (এনআইডি) ও মোবাইল ফোনের কথোপকথনের (কল ডেটা রেকর্ড–সিডিআর) যাবতীয় রেকর্ড লেনদেন করা হচ্ছে। এমনকি ফোন ব্যবহারকারী কখন-কোথায় আসছেন-যাচ্ছেন, সে রকম ‘জীবন্ত’ তথ্যেরও হাতবদল হচ্ছে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তদন্তে এসব শনাক্ত হয়েছে।
এনটিএমসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এনটিএমসি থেকে তথ্য পাওয়া ৪২টি সংস্থার কেউ কেউ নাগরিকদের এসব স্পর্শকাতর তথ্য গোপন ডিজিটাল বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব কাজে দুটি সংস্থার সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ওই দুই সংস্থায় একজন পুলিশ সুপারসহ চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একটি সংস্থা দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
জানতে চাইলে এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পন্থায় তথ্য হস্তান্তরের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে গোপন তথ্য কেনাবেচার গ্রুপগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে বৈঠকও করেছে এনটিএমসি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো নাগরিকের তথ্য বেহাত হওয়ার কারণে তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। কেউ তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের নথিপত্র হাতিয়েও নিতে পারে। এমনকি এসব নিয়ে পারিবারিকভাবে অশান্তিও হতে পারে।
দেশের সব মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টেলিফোনে যোগাযোগের যাবতীয় তথ্যের ভান্ডার হলো ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসি। সব আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্ত সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এনটিএমসি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে থাকে। এসব তথ্য সরবরাহের জন্য ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম বা এনআইপি’ নামের একটি প্ল্যাটফরম রয়েছে। প্রতিটি সংস্থা তাদের নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সেই প্ল্যাটফরমে ঢুকে তথ্য নিয়ে থাকে। তবে কোন সংস্থা কোন তথ্য নিচ্ছে, তার ‘লগ’ থেকে যায় এনটিএমসিতে। এতে করে কোন সংস্থা কার তথ্য নিচ্ছে, তা সহজে জানতে পারে এনটিএমসি।
এনটিএমসির পক্ষ থেকে গত ২৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এনটিএমসির সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), মোবাইল নম্বরের সিডিআরসহ গোপনীয় তথ্য টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এই অনুসন্ধানে নেমে এনটিএমসি জানতে পারে, টেলিগ্রাম অ্যাপের ৪৯টি গ্রুপে এনআইডি ও মোবাইলের তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে। এসব গ্রুপে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া ২২টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে ৫ হাজার সদস্য। সবচেয়ে বেশি সদস্য ফেসবুকের ৭২৫টি গ্রুপে। এতে ৩২ লাখ সদস্য রয়েছে। এসব গ্রুপে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও এনআইডির তথ্য কেনাবেচা হয়। অনলাইনে এসব চক্রের পরিচিত নাম ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ গ্রুপ। যে কেউ চাইলে তাদের মাধ্যমে এসব গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক গতকাল আজকের পত্রিকাকে জানান, কিছুদিন আগে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁর ভাইয়ের মোবাইল ফোনের দুই মাসের কললিস্ট সংগ্রহ করেন। ওই যুবক বলেন, চাইলে যে কারও কললিস্ট ও এসএমএসের তথ্য পাওয়া যায়।
এনটিএমসির চিঠিতে বলা হয়, টেলিগ্রাম অ্যাপের তথ্য কেনাবেচার খোঁজ করতে গিয়ে তারা জানতে পারে, দুটি আইডি থেকে গত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল—এক মাসে অনেক তথ্য হাতানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। এই দুটি আইডির একটি ব্যবহার করেন অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বা এটিইউর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন, অন্যটি র্যাব-৬-এর কর্মকর্তা তারেক আমান বান্না। এনটিএমসির পক্ষ থেকে তাঁদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই দুটি সংস্থার তথ্য নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
এনটিএমসির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে এটিইউর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিনকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
তবে এটিইউর প্রধান, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংবেদনশীল ও গোপনীয় এসব তথ্য হস্তান্তরে কোনোভাবেই ফারহানা ইয়াসমিন জড়িত নন। তারপরও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। জানার চেষ্টা চলছে, কীভাবে কী হয়েছে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।
অন্যদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তদন্তের পরই সব পরিষ্কার হবে।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য নেওয়ার জন্য এনটিএমসি থেকে কর্মকর্তাদের নামে আইডি তৈরি করা হলেও তাঁরা সেটা ব্যবহার করেন না। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আইডি কর্মকর্তারা তুলে দেন অধীনস্থ কনস্টেবলদের হাতে। তাঁরাই টাকা নিয়ে তথ্য কেনাবেচা করেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান (জোহা) এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে বলেন, তুলনামূলক ছোট কর্মকর্তাদের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং থাকে না। অর্থের লোভে তাঁরা ব্যক্তিগত এসব তথ্য বাইরে বিক্রি করে দিতে পারেন।
এর সমাধান হিসেবে এই প্রযুক্তিবিদ মনে করেন, এনটিএমসি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে পারে। যেখানে সব তথ্য থাকবে। শুধু ইউনিটের প্রধানদেরই এই সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার থাকবে।
এনটিএমসির কর্মকর্তারা জানান, তথ্য ফাঁস নিয়ে তাঁরা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে ১৩ মে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এনটিএমসির পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো, এনআইডির সব তথ্য একটি সার্ভারে রাখা, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আইডি বাতিল করে নতুন আইডি করা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয় এমন ক্ষেত্রে সব তথ্য না দেওয়া এবং টেলিফোনের সব তথ্য শুধু এনটিএমসি থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকা। সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এনটিএমসিকে ‘একক দায়িত্বে’ রাখার কথাও বলা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভাবে নাগরিকের সব তথ্য বাইরে চলে গেলে মানুষের নাগরিক ও ব্যক্তিজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কেউ তথ্য নিতে পারবেন না। তদন্তের প্রয়োজনেই কেবল এই তথ্য দেওয়ার কথা। সেটা কড়াকড়ি করলেই কেবল এর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
(পত্রিকায় ছাপা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্নার মন্তব্যটি অনলাইন সংস্করণে সংশোধন করা হয়েছে।)
দেশের মানুষের ব্যক্তিগত গোপন ও স্পর্শকাতর তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে দেদার। এর জন্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে উঠেছে ১ হাজারের মতো অবৈধ ডিজিটাল হাট। এসব গোপন হাটে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য (এনআইডি) ও মোবাইল ফোনের কথোপকথনের (কল ডেটা রেকর্ড–সিডিআর) যাবতীয় রেকর্ড লেনদেন করা হচ্ছে। এমনকি ফোন ব্যবহারকারী কখন-কোথায় আসছেন-যাচ্ছেন, সে রকম ‘জীবন্ত’ তথ্যেরও হাতবদল হচ্ছে। ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তদন্তে এসব শনাক্ত হয়েছে।
এনটিএমসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ এনটিএমসি থেকে তথ্য পাওয়া ৪২টি সংস্থার কেউ কেউ নাগরিকদের এসব স্পর্শকাতর তথ্য গোপন ডিজিটাল বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব কাজে দুটি সংস্থার সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ওই দুই সংস্থায় একজন পুলিশ সুপারসহ চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে একটি সংস্থা দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
জানতে চাইলে এনটিএমসির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ পন্থায় তথ্য হস্তান্তরের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে গোপন তথ্য কেনাবেচার গ্রুপগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে বৈঠকও করেছে এনটিএমসি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো নাগরিকের তথ্য বেহাত হওয়ার কারণে তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে। কেউ তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্যের নথিপত্র হাতিয়েও নিতে পারে। এমনকি এসব নিয়ে পারিবারিকভাবে অশান্তিও হতে পারে।
দেশের সব মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং টেলিফোনে যোগাযোগের যাবতীয় তথ্যের ভান্ডার হলো ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার বা এনটিএমসি। সব আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্ত সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা এনটিএমসি থেকে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে থাকে। এসব তথ্য সরবরাহের জন্য ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম বা এনআইপি’ নামের একটি প্ল্যাটফরম রয়েছে। প্রতিটি সংস্থা তাদের নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সেই প্ল্যাটফরমে ঢুকে তথ্য নিয়ে থাকে। তবে কোন সংস্থা কোন তথ্য নিচ্ছে, তার ‘লগ’ থেকে যায় এনটিএমসিতে। এতে করে কোন সংস্থা কার তথ্য নিচ্ছে, তা সহজে জানতে পারে এনটিএমসি।
এনটিএমসির পক্ষ থেকে গত ২৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এনটিএমসির সিস্টেম ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), মোবাইল নম্বরের সিডিআরসহ গোপনীয় তথ্য টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, এই অনুসন্ধানে নেমে এনটিএমসি জানতে পারে, টেলিগ্রাম অ্যাপের ৪৯টি গ্রুপে এনআইডি ও মোবাইলের তথ্য কেনাবেচা হচ্ছে। এসব গ্রুপে ৩০ হাজার সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া ২২টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে। সেখানে ৫ হাজার সদস্য। সবচেয়ে বেশি সদস্য ফেসবুকের ৭২৫টি গ্রুপে। এতে ৩২ লাখ সদস্য রয়েছে। এসব গ্রুপে টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও এনআইডির তথ্য কেনাবেচা হয়। অনলাইনে এসব চক্রের পরিচিত নাম ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ গ্রুপ। যে কেউ চাইলে তাদের মাধ্যমে এসব গোপন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক গতকাল আজকের পত্রিকাকে জানান, কিছুদিন আগে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁর ভাইয়ের মোবাইল ফোনের দুই মাসের কললিস্ট সংগ্রহ করেন। ওই যুবক বলেন, চাইলে যে কারও কললিস্ট ও এসএমএসের তথ্য পাওয়া যায়।
এনটিএমসির চিঠিতে বলা হয়, টেলিগ্রাম অ্যাপের তথ্য কেনাবেচার খোঁজ করতে গিয়ে তারা জানতে পারে, দুটি আইডি থেকে গত ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল—এক মাসে অনেক তথ্য হাতানো হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। এই দুটি আইডির একটি ব্যবহার করেন অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট বা এটিইউর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিন, অন্যটি র্যাব-৬-এর কর্মকর্তা তারেক আমান বান্না। এনটিএমসির পক্ষ থেকে তাঁদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই দুটি সংস্থার তথ্য নেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
এনটিএমসির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে এটিইউর পুলিশ সুপার ফারহানা ইয়াসমিনকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
তবে এটিইউর প্রধান, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এস এম রুহুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংবেদনশীল ও গোপনীয় এসব তথ্য হস্তান্তরে কোনোভাবেই ফারহানা ইয়াসমিন জড়িত নন। তারপরও তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। জানার চেষ্টা চলছে, কীভাবে কী হয়েছে। প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।
অন্যদিকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তদন্তের পরই সব পরিষ্কার হবে।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তথ্য নেওয়ার জন্য এনটিএমসি থেকে কর্মকর্তাদের নামে আইডি তৈরি করা হলেও তাঁরা সেটা ব্যবহার করেন না। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের আইডি কর্মকর্তারা তুলে দেন অধীনস্থ কনস্টেবলদের হাতে। তাঁরাই টাকা নিয়ে তথ্য কেনাবেচা করেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান (জোহা) এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে বলেন, তুলনামূলক ছোট কর্মকর্তাদের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তাঁদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও মনিটরিং থাকে না। অর্থের লোভে তাঁরা ব্যক্তিগত এসব তথ্য বাইরে বিক্রি করে দিতে পারেন।
এর সমাধান হিসেবে এই প্রযুক্তিবিদ মনে করেন, এনটিএমসি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সফটওয়্যার তৈরি করতে পারে। যেখানে সব তথ্য থাকবে। শুধু ইউনিটের প্রধানদেরই এই সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার থাকবে।
এনটিএমসির কর্মকর্তারা জানান, তথ্য ফাঁস নিয়ে তাঁরা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে ১৩ মে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে এনটিএমসির পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো হলো, এনআইডির সব তথ্য একটি সার্ভারে রাখা, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার আইডি বাতিল করে নতুন আইডি করা, স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয় এমন ক্ষেত্রে সব তথ্য না দেওয়া এবং টেলিফোনের সব তথ্য শুধু এনটিএমসি থেকে সংগ্রহ করার সুযোগ থাকা। সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এনটিএমসিকে ‘একক দায়িত্বে’ রাখার কথাও বলা হয়।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এভাবে নাগরিকের সব তথ্য বাইরে চলে গেলে মানুষের নাগরিক ও ব্যক্তিজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, নিজেদের খেয়ালখুশিমতো কেউ তথ্য নিতে পারবেন না। তদন্তের প্রয়োজনেই কেবল এই তথ্য দেওয়ার কথা। সেটা কড়াকড়ি করলেই কেবল এর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
(পত্রিকায় ছাপা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬-এ কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তারেক আমান বান্নার মন্তব্যটি অনলাইন সংস্করণে সংশোধন করা হয়েছে।)
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন (জেআরসি) বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। ২৩ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ জনগণসহ বিচারক, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মচারীদের কাছে মতামত চেয়েছে কমি
৮ ঘণ্টা আগেফৌজদারি মামলায় কোনো আসামি আদালত থেকে অব্যাহতি পেলেও তিনি পুরোপুরি বিপদমুক্ত হন না। তার বিপদ কিছুটা থেকেই যায়। তবে ফৌজদারি মামলায় চার্জ গঠনের পর খালাস পেলে আসামি বিপদমুক্ত হন। একটি ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা আদালত।
৯ ঘণ্টা আগেঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক রাজনীতি ও মানবাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে।
৯ ঘণ্টা আগেনবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। নিরীহ কারও নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০ ঘণ্টা আগে