বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় আর একের পর এক সহিংসতা-প্রাণহানি। ‘সবচেয়ে বড় ভোটের উৎসব’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার এ দুটিই যেন বারবার বড় হয়ে উঠছে। এই শঙ্কার মধ্যেই আজ রোববার চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে দেশের ৮৪২টি ইউনিয়নে। এ আগের দিন গতকাল শনিবার মাগুরায় ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন একজন। এ ছাড়া ভোলা ও নীলফামারীতে শুক্রবার রাতে হামলায় আহত হয়েছেন ৩২ জন। 

চতুর্থ ধাপের ইউপি ভোট ২৩ ডিসেম্বর হওয়ার কথা থাকলেও পরে ভোট গ্রহণের দিন আরও তিন দিন পিছিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইউপি ছাড়াও আজ তিনটি পৌরসভায়ও ভোট গ্রহণ হচ্ছে। পৌরসভা তিনটি হচ্ছে পাবনার আটঘরিয়া, নরসিংদীর রায়পুরা ও কক্সবাজারের টেকনাফ।

এরই মধ্যে ছয় ধাপে ইউপি ভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্যে তিন ধাপের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ২৮ নভেম্বর ১ হাজার ৩টি ইউপি, দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর ৮৪৮ টি, প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপিতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করেছে ইসি। পঞ্চম ধাপে ৭০৭ ইউপিতে আগামী ৫ জানুয়ারি এবং ষষ্ঠ ধাপে ২১৯টি ইউপিতে ভোট গ্রহণ হবে ৩১ জানুয়ারি। 

চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্যপদে ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্যপদে ১৩৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই ধাপে মোট ২৯৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে তৃতীয় ধাপে ৫৬৯ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৩৬০ জন এবং প্রথম ধাপে ১৩৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রিক সহিংসতায় ৯০ থেকে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ভোটের দিনের সহিংসতার হিসাব ধরলে প্রথম ধাপে তিনজন, দ্বিতীয় ধাপে ৭ ও তৃতীয় ধাপে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। 

মাগুরায় নিহত একজন
মাগুরার শালিখা উপজেলার সাবলাট গ্রামে গতকাল নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা একজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তির নাম শরিফুল মোল্যা (৪৫)। 
নিহত শরিফুলের ভাতিজা ওমর আলী মোল্লা বলেন, উপজেলার তালখড়ী ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনে তাঁরা নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী সিরাজউদ্দিন মোল্লাকে সমর্থন দেন। এ নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী শামসুর রহমানের সমর্থকেরা তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তাঁর চাচা শরিফুল মোল্লা বাড়ির পাশে দোকানে গেলে প্রতিপক্ষের ৪০-৫০ জন রামদা, চায়নিজ কুড়াল ও রডের শাবল নিয়ে হামলা চালায়। তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়ে অন্যরাও আহত হন। যশোর হাসপাতালে নেওয়ার পথে শরিফুল মোল্লা মারা যান। 

দুই জেলায় আহত ৩২ 
ভোলার তজুমদ্দিনের সোনপুর ইউনিয়নের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোনাপুর ৩ নম্বর ফরেস্ট অফিসসংলগ্ন এলাকায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মেজবাহ উদ্দিন ফারুক পালোয়ান (ফুটবল) ও আরিফ তালুকদারের (মোরগ) সমর্থকদের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটে। 

নীলফামারীর সৈয়দপুরের কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে হামলায় আহত হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ওই এলাকার সদস্য প্রার্থী নুরন নবী সরকার (৪০) ও তাঁর কর্মী রবিউল ইসলাম (৪২)। শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ইউনিয়নের গুয়াবাড়ি এলাকায় প্রতিপক্ষের লোকজন এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন নুরন নবী।