সরকারি চাকরি
শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও গোয়েন্দা সংস্থার যাচাইয়ের পর রাজনৈতিক কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের পরও নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে অনেক চাকরিপ্রার্থীর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর গঠিত সংস্কার কমিশন পুলিশ ভেরিফিকেশনের এই নিয়ম বাতিলের সুপারিশের কথা ভাবছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো সেই আগের পথেই হাঁটছে। সরকারি চাকরির নিয়োগে দলীয় সরকারের থেকেও কঠোর অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার। বারবার যাচাইয়ে এই চক্করে ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন ২৩০ জন।
নিয়োগবঞ্চিতদের দাবি, বেশির ভাগেরই নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টার কারণে। নিয়োগের দাবিতে তাঁরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছেন। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, ৪৩তম বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন পর্যালোচনা করা হবে। নতুন করে অনেকে গেজেটভুক্ত হতে পারেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। তাঁদের মধ্যে ক্যাডার পদে ২ হাজার ১৬৩ জন নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। গত ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে গেজেটভুক্ত করে সরকার। সুপারিশের পরেও বাদ পড়েন ৯৯ জন। আগের গেজেট স্থগিত করে গত ৩০ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮৯৬ জন নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। এই দফায় বাদ পড়েন ১৬৮ জন। প্রথম দফায় বাদ পড়া ৯৯ জনের মধ্যে ৩৭ জন দ্বিতীয় দফায় গেজেটভুক্ত হয়েছেন। ফলে ৪৩তম বিসিএসে মোট বাদ পড়েছেন ২৩০ জন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দফায় যে ৯৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্যে ৫৪ জন বাদ পড়েছিলেন। তাঁদের অনেকের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট এসেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
দ্বিতীয় দফার গেজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু সাধারণ ক্যাডার থেকেই বাদ পড়েছেন ৬৬ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৯ জন, করে ১০ জন, পুলিশে ৯ জন; পররাষ্ট্র, শুল্ক ও আবগারি, সমবায় ও খাদ্যে ৩ জন করে; নিরীক্ষা ও হিসাব এবং তথ্যে ২ জন করে এবং রেলওয়ে ও পরিসংখ্যান ক্যাডারে একজন করে বাদ পড়েছেন।
বাদ পড়া প্রার্থীরা গত মঙ্গল ও বুধবার সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদনও দিয়েছেন তাঁরা।
দ্বিতীয় দফায় বাদ পড়া অন্তত অর্ধেক প্রার্থীর দাবি, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়নি। কারণ তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কেউ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এসব প্রার্থী বাদ পড়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
রাজনৈতিক কারণে বাদ পড়েছেন বলে ধারণা করছেন ৫০-৬০ জন প্রার্থী। তাঁদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রথম গেজেটের মাধ্যমে তাঁরা গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন। তখনো তো গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়েই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বাইরে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিরোধী অবস্থান থাকার কারণেও কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে বেশির ভাগ প্রার্থী বাদ পড়েছেন বলে ওই সূত্র দাবি করে।
৪৩তম বিসিএসে গেজেটভুক্তদের দ্বিতীয় দফায় চারটি এজেন্সির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। চারটি সংস্থার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২৮ থেকে ৪২তম ১৫টি বিসিএসে বাদ পড়া ২৫৯ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে গত ১৪ আগস্ট নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত সরকারের সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল।
ভেরিফিকেশনে কী কী যাচাই করা হয়
বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক্-যাচাই ফরমে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্যও চাওয়া হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর এসব যাচাই করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য যাচাইয়ের কথা না থাকলেও বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করছে। যদিও ফৌজদারি অপরাধ করে না থাকলে কাউকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগবঞ্চিত করা যায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গঠন হওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সব জায়গা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছিল। কমিশনগুলো এখনো সুপারিশ চূড়ান্ত না করলেও সরকার সেই পথে হাঁটছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান দলীয় সরকারের চেয়ে কঠোর, যদিও তাদের দলীয় কোনো পরিচয় নেই।
৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা আবেদন করেও নিয়োগ না পেলে বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইবেন। সরকার নিজ থেকে সেই কারণ না জানালে কেউ কেউ মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
বাদ পড়া একজন প্রার্থী বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শত শত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি এমন করা হয়, এর থেকে বড় বৈষম্য আর হতে পারে না। বাবা, চাচা, মামা কে কোন দল করেছে, সেটি দেখে কাউকে নিয়োগ না দেওয়া অন্যায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ভেরিফিকেশনের সময় চাকরি নিশ্চিত করতে অনেকেই নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভ্যুত্থানে সরকার পতনে এখন তা তাঁদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমান গতকাল বুধবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যালোচনা করা হবে। চারটি সংস্থার তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার আলোকেই গেজেট করা হয়েছে। আবেদন যৌক্তিক হলে আমরা বিবেচনা করব, আগেও এমন নজির আছে। এক প্রশ্নে এপিডি বলেন, প্রার্থীদের শুধু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, সার্বিক বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আনা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার কথা বললেও এর মাধ্যমে বিসিএসের চাকরি আটকে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ‘এটা অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত’ বলেছেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের একটি সংস্কার কমিশন বলেছিল পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হবে। কারণ এর মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া অনেককে বঞ্চিত করা হয়। এখন তারা এটি করছে, এটা তো বঞ্চনার পর্যায়ে চলে গেল। নৈতিকভাবে এটাকে সমর্থন করা যায় না। কী ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে, সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, কোনো অপরাধের খবর আছে কি না, এগুলো তো পরিষ্কার করতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এটা করা হয়েছে, অন্যায় হয়েছে; এটি সংবিধানের সঙ্গে যায় না।’
শহীদ খান আরও বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে এদের নিয়োগ না দিলে কী কারণে নিয়োগ দেওয়া হয়নি; শুধু প্রার্থীদের না, নাগরিকদেরও জানান অধিকার আছে। এটা হতে পারে না, এটা অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, সংবিধান ও আইনের লংঘন এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না।’
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ ভেরিফিকেশন ও গোয়েন্দা সংস্থার যাচাইয়ের পর রাজনৈতিক কারণে সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশের পরও নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে অনেক চাকরিপ্রার্থীর। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর গঠিত সংস্কার কমিশন পুলিশ ভেরিফিকেশনের এই নিয়ম বাতিলের সুপারিশের কথা ভাবছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো সেই আগের পথেই হাঁটছে। সরকারি চাকরির নিয়োগে দলীয় সরকারের থেকেও কঠোর অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার। বারবার যাচাইয়ে এই চক্করে ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন ২৩০ জন।
নিয়োগবঞ্চিতদের দাবি, বেশির ভাগেরই নিয়োগ আটকে দেওয়া হয়েছে পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টার কারণে। নিয়োগের দাবিতে তাঁরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছেন। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, ৪৩তম বিসিএসের গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন পর্যালোচনা করা হবে। নতুন করে অনেকে গেজেটভুক্ত হতে পারেন।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে ২ হাজার ৮০৫ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। তাঁদের মধ্যে ক্যাডার পদে ২ হাজার ১৬৩ জন নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন। গত ১৫ অক্টোবর ২ হাজার ৬৪ জনকে গেজেটভুক্ত করে সরকার। সুপারিশের পরেও বাদ পড়েন ৯৯ জন। আগের গেজেট স্থগিত করে গত ৩০ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮৯৬ জন নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ হয়। এই দফায় বাদ পড়েন ১৬৮ জন। প্রথম দফায় বাদ পড়া ৯৯ জনের মধ্যে ৩৭ জন দ্বিতীয় দফায় গেজেটভুক্ত হয়েছেন। ফলে ৪৩তম বিসিএসে মোট বাদ পড়েছেন ২৩০ জন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দফায় যে ৯৯ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার তথ্যে ৫৪ জন বাদ পড়েছিলেন। তাঁদের অনেকের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট এসেছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।
দ্বিতীয় দফার গেজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু সাধারণ ক্যাডার থেকেই বাদ পড়েছেন ৬৬ জন। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে ২৯ জন, করে ১০ জন, পুলিশে ৯ জন; পররাষ্ট্র, শুল্ক ও আবগারি, সমবায় ও খাদ্যে ৩ জন করে; নিরীক্ষা ও হিসাব এবং তথ্যে ২ জন করে এবং রেলওয়ে ও পরিসংখ্যান ক্যাডারে একজন করে বাদ পড়েছেন।
বাদ পড়া প্রার্থীরা গত মঙ্গল ও বুধবার সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করে নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে আবেদনও দিয়েছেন তাঁরা।
দ্বিতীয় দফায় বাদ পড়া অন্তত অর্ধেক প্রার্থীর দাবি, রাজনৈতিক কারণে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়নি। কারণ তাঁরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কেউ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এসব প্রার্থী বাদ পড়ার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।
রাজনৈতিক কারণে বাদ পড়েছেন বলে ধারণা করছেন ৫০-৬০ জন প্রার্থী। তাঁদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রথম গেজেটের মাধ্যমে তাঁরা গেজেটভুক্ত হয়েছিলেন। তখনো তো গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়েই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বাইরে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে বিরোধী অবস্থান থাকার কারণেও কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আলোকে বেশির ভাগ প্রার্থী বাদ পড়েছেন বলে ওই সূত্র দাবি করে।
৪৩তম বিসিএসে গেজেটভুক্তদের দ্বিতীয় দফায় চারটি এজেন্সির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। চারটি সংস্থার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২৮ থেকে ৪২তম ১৫টি বিসিএসে বাদ পড়া ২৫৯ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে গত ১৪ আগস্ট নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত সরকারের সময় বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছিল।
ভেরিফিকেশনে কী কী যাচাই করা হয়
বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একজন প্রার্থীর প্রাক্-যাচাই ফরমে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হয়। সাধারণ তথ্যের পাশাপাশি তিনি কোনো মামলায় গ্রেপ্তার, অভিযুক্ত বা দণ্ডিত হয়েছেন কি না, এই তথ্যও চাওয়া হয়। উত্তীর্ণ হওয়ার পর এসব যাচাই করে প্রতিবেদন দেয় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। এর বাইরে অন্য কোনো তথ্য যাচাইয়ের কথা না থাকলেও বছরের পর বছর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রার্থীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করছে। যদিও ফৌজদারি অপরাধ করে না থাকলে কাউকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগবঞ্চিত করা যায় না।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে গঠন হওয়া পুলিশ সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সব জায়গা থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার সুপারিশ করবে বলে জানিয়েছিল। কমিশনগুলো এখনো সুপারিশ চূড়ান্ত না করলেও সরকার সেই পথে হাঁটছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান দলীয় সরকারের চেয়ে কঠোর, যদিও তাদের দলীয় কোনো পরিচয় নেই।
৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা আবেদন করেও নিয়োগ না পেলে বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইবেন। সরকার নিজ থেকে সেই কারণ না জানালে কেউ কেউ মামলার প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
বাদ পড়া একজন প্রার্থী বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শত শত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি এমন করা হয়, এর থেকে বড় বৈষম্য আর হতে পারে না। বাবা, চাচা, মামা কে কোন দল করেছে, সেটি দেখে কাউকে নিয়োগ না দেওয়া অন্যায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ভেরিফিকেশনের সময় চাকরি নিশ্চিত করতে অনেকেই নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য পুলিশকে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভ্যুত্থানে সরকার পতনে এখন তা তাঁদের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমান গতকাল বুধবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাদ পড়া প্রার্থীদের আবেদন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পর্যালোচনা করা হবে। চারটি সংস্থার তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে তার আলোকেই গেজেট করা হয়েছে। আবেদন যৌক্তিক হলে আমরা বিবেচনা করব, আগেও এমন নজির আছে। এক প্রশ্নে এপিডি বলেন, প্রার্থীদের শুধু রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নয়, সার্বিক বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আনা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার কথা বললেও এর মাধ্যমে বিসিএসের চাকরি আটকে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ‘এটা অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত’ বলেছেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের একটি সংস্কার কমিশন বলেছিল পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়া হবে। কারণ এর মাধ্যমে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া অনেককে বঞ্চিত করা হয়। এখন তারা এটি করছে, এটা তো বঞ্চনার পর্যায়ে চলে গেল। নৈতিকভাবে এটাকে সমর্থন করা যায় না। কী ধরনের পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়েছে, সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা আছে কি না, কোনো অপরাধের খবর আছে কি না, এগুলো তো পরিষ্কার করতে হবে। বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে এটা করা হয়েছে, অন্যায় হয়েছে; এটি সংবিধানের সঙ্গে যায় না।’
শহীদ খান আরও বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে এদের নিয়োগ না দিলে কী কারণে নিয়োগ দেওয়া হয়নি; শুধু প্রার্থীদের না, নাগরিকদেরও জানান অধিকার আছে। এটা হতে পারে না, এটা অস্বাভাবিক, অনভিপ্রেত, সংবিধান ও আইনের লংঘন এবং নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না।’
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম ব্যবহার করে কোনো তদবির করা হলে তা আমলে না নিয়ে তাঁর একান্ত সচিবকে জানাতে বলেছেন তিনি। আজ শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে বিবৃতি দেন তিনি।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন জনগণ কতটা সংস্কার চান তার ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার ব্রিটিশ এমপি রূপা হকের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই মন্তব্য করেন। তবে সেই সঙ্গে দুটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথাও বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
৫ ঘণ্টা আগেভারতের ভোপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং স্টেট জুডিশিয়াল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য অধস্তন আদালতের ৫০ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশিক্ষণ) আবুল হাসানাতের গত ৩০ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে
৬ ঘণ্টা আগেগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘সেখানে ছিল ভুয়া সংসদ, ভুয়া সংসদ সদস্য, এবং ভুয়া স্পিকার।’
৭ ঘণ্টা আগে