Ajker Patrika

করোনায় উপেক্ষিত রানা প্লাজার শ্রমিকদের শারীরিক-মানসিক অবস্থার অবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
করোনায় উপেক্ষিত রানা প্লাজার শ্রমিকদের শারীরিক-মানসিক অবস্থার অবনতি

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই এখনো ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। চলতি বছরে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। আর্থিকভাবেও অস্বচ্ছল তাঁরা। করোনাকালে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার কেনার পয়সাটুকুও ছিল না।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নয় বছর পূর্তি উপলক্ষে বেঁচে যাওয়া ২০০ জনের ওপর একশন এইড বাংলাদেশ পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

ফোনে চালানো এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ ছিলেন নারী শ্রমিক, বাকি ৩০ শতাংশ পুরুষ। আজ সোমবার জরিপ প্রতিবেদন তুলে ধরে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের অফিসার-কমিউনিকেশন ম্যানেজার গোলাম মোহতামীম নাঈম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান। 

জরিপে দেখা গেছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা শ্রমিকদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ কোমর, মাথা, হাত-পা ও পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। 

২০১৩ সাল থেকে রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে একশন এইড। তাদের এ বছরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পরিচালিত জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পর্যায়ক্রমে উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। 

জরিপে আরও উঠে এসেছে, ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে। গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, তাঁদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। 

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলেছেন, শারীরিক অক্ষমতার কারণে কাজ করতে পারেন না। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘন ঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘ সময় একই ধরনের কাজ করার অক্ষমতার কথা বলেছেন শ্রমিকেরা।

জরিপ অনুসারে, ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ আবার গার্মেন্টসে ফিরে গেছেন এবং ৮ শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছেন। অনেকেই তাঁদের পেশা পরিবর্তন করে গৃহকর্ম, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, বিক্রয় ও গাড়ি চালানোর মতো পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন। 

জরিপে দেখা গেছে, শ্রমিকদের বেশিরভাগের আয় করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা নিয়মিত বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা সন্তানের সঠিক যত্ন নিতে পারেননি। ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশকে মহামারি চলাকালীন তাঁদের পরিবারের খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ করতে হয়েছে। 

জরিপে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের পারিবারিক আয় ৫ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে পারিবারিক আয় রয়েছে। ৩৫ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের মাসিক ব্যয় ১০ হাজার টাকার বেশি এবং ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকারও বেশি; যার অধিকাংশই খরচ হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়, বাসা ভাড়া, সন্তানের শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে। 

একশন এইড মনে করে, এই শ্রমিকদের উন্নয়নে সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবার এগিয়ে আসা উচিত। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি। 

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত