স্কাউট দিবস: স্থানীয় পর্যায়ে আগ্রহ বাড়ানোর তাগিদ

সৌগত বসু, ঢাকা
Thumbnail image

রাইসুল ইসলাম। রাজধানী ঢাকার একটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র ও রোভার স্কাউটের একজন সদস্য। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গত বুধবার থেকে তাঁকে সকাল ৮ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘরমুখী যাত্রীদের সহায়তা করতে দেখা যায়। স্টেশনে স্কাউটদের জন্য একটি আলাদা বুথ করা হয়েছে। সেখানে কাজ করছে রাইসুলের মতো ২৪ জন। 

দেশে এখন প্রায় ২৫ লাখ স্কাউট সদস্য আছে। স্কাউটের রয়েছে তিনটি ভাগ—কাব স্কাউটস, স্কাউটস, রোভার স্কাউট। চলতি বছর ‘স্মার্ট সিটিজেন স্মার্ট স্কাউটিং’—প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার তৃতীয়বারের মতো পালিত হতে যাচ্ছে ‘বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস-২০২৪ ’। 

আজ সোমবার দেশব্যাপী এই দিবস পালন করবেন বর্তমান ও প্রাক্তন স্কাউট সদস্য, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীরা। স্কাউটের ১৩টি অঞ্চল আছে। এবারের স্কাউট দিবস দুই ভাগে ভাগ করে পালনের কথা জানিয়েছেন স্কাউট সংশ্লিষ্টরা। 

বাংলাদেশ স্কাউটসের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) উনু চিং আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার রোজা ও ঈদের কারণে জাতীয়ভাবে দিবসটি দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৮ এপ্রিল সদর দপ্তরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া, বিভাগ অনুযায়ী অনুষ্ঠান থাকবে। অনলাইন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।’ 

উনু চিং আরও বলেন, ‘ঈদের পর ১৮ এপ্রিল মূল অনুষ্ঠানের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ‎মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সেদিন উপস্থিত থাকবেন। আর ৮ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি বিভাগীয় পর্যায়ে পালন করা হবে।’ 

বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৮ এপ্রিল স্কাউটিংয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। সেই হিসেব ধরে ২০২২ সাল থেকে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। ১৯৭৪ সালে বিশ্ব স্কাউটস সংস্থার ১০৫ তম সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ স্কাউটস সমিতি। বাংলাদেশ বিশ্ব স্কাউট সংস্থায় পঞ্চম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন সময় জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে স্কাউট সদস্যরা অংশগ্রহণ করে থাকে। 

রাইসুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, স্কুল থেকেই তিনি স্কাউটে যোগদান করেছেন। প্রথমে কাব স্কাউট, এরপর স্কাউট এবং বর্তমানে তিনি রোভার স্কাউটের সদস্য। তাঁর দলের নাম, শাজাহানপুর ওপেন স্কাউট গ্রুপ। এই দলটি ঈদ উপলক্ষে স্টেশনে যাত্রীদের সেবা দিচ্ছে। দুই শিফটে ১২ জন করে দায়িত্ব পালন করেন এই দলর সদস্যরা। 

স্কাউট কী ধরনের কাজ করে এমন এক প্রশ্নে রাইসুল বলেন, ‘ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির পর সহায়তা, যাত্রীসেবা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা এমন কাজে স্কাউট যুক্ত থাকে।’ রাইসুলের সঙ্গে থাকা মো. শাকিল জানান, স্কাউটিং তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে শিখিয়েছে। পড়াশোনার চাপ সামলে নিলে স্কাউটিং অনেক উপকারে আসে। 

স্কাউট সদস্যদের কার্যক্রম ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি শোনা গিয়েছিল। সেসময় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালীন রাজধানীর রাস্তায় সর্বসাধারণকে ট্রাফিক আইন মেনে রাস্তা চলতে কাজ করেছিল প্রায় ১ হাজার ৮০০ রোভার স্কাউটের সদস্য। 

গত বছর জানুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ স্কাউট করার কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণ পায় সে বিষয়ে জোর দেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে এখনো স্কাউট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে না। প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক সংকটে উৎসাহের ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। 

বাংলাদেশ স্কাউটের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও প্রাক্তন সংস্থাপন সচিব মো. আব্দুস সালাম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্কুলগুলোকে আরও বেশি যুক্ত করতে হবে। যদি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ঠিকভাবে শুরু করা যায় তবে এটা বাড়বে। সরকার এই বিষয়ে অনেক সহযোগিতা করছে।’ 

আব্দুস সালাম খান আরও বলেন, ‘স্কাউট সম্প্রসারণে পোশাক দরকার। তবে খুব বেশি স্কুল বা কলেজে ড্রেস দেওয়া যায় না। দিতে গেলে টাকা লাগবে। আবার অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল নয় যে, তাঁরা নিজেরা পোশাক বানিয়ে নেবে। তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ বা আগ্রহ থাকলে এটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত