ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমোন গিলমোর এখন ঢাকা সফর করছেন। মঙ্গলবার তিনি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক পর তিনি বলেন, ‘তাঁরা নির্বাচনের আগে ও পরের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে।’ 

গিলমোর সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁরা শুধু নির্বাচনের দিন নয়, নির্বাচনের আগে ও পরের পরিস্থিতিও বিবেচনায় রাখেন। এর মধ্যে রয়েছে অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ, রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিতে পারছে কি না, গণমাধ্যমের অবস্থা, নির্বাচনের সামগ্রিক ব্যবস্থায় নজর রাখবে।’ 

নির্বাচন প্রাক-পর্যবেক্ষণ মিশনের সফরের উল্লেখ করে ইমোন গিলমোর বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ আছে। 

নির্বাচন সামনে এ বিষয়টি ইইউর নজরে আছে জানিয়ে গিলমোর বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ। 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণ তাদের বিষয়। 

নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, ইইউ প্রতিনিধিকে এমনটি বলা হয়েছে জানিয়েছে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইইউ প্রতিনিধির কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। 

সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানায় বলেও প্রতিমন্ত্রী জানান। 

ছয় দিনের সফরে সোমবার ঢাকায় পৌঁছান ইইউ মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি। এর আগে দুই সপ্তাহের সফর শেষে রোববার ঢাকা ছেড়েছে সংস্থাটির একটি নির্বাচন প্রাক-পর্যবেক্ষণ মিশন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও তিনি বৈঠক করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঙ্গে। 
 
আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে ইমন গিলমোর সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বিগ্ন। বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আমাকে নিশ্চিত করেছেন, এ আইনটি সংশোধনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আমরা আইনটি প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। প্রকাশ হওয়ার পর আমরা আইনটি বিস্তারিতভাবে পরখ করে দেখব। 

এক প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রতিনিধি বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়েও কথা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল দুই সপ্তাহের বেশি এখানে ছিলেন। তারা প্রতিবেদন তৈরি করছেন। এখন হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ জোসেফ ব্যারেল সিদ্ধান্ত নেবেন, বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক পাঠাবেন কি না। এ নিয়ে কোনো আগাম মন্তব্য করতে চাই না। 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ডিএসএ সংশোধনের জন্য আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। আর তথ্য সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে সরকার আবার অংশীজনদের সঙ্গে বসবে। 
 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, তিনি ইইউর মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধিকে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মত ঘটনা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এ ধরনের ঘটনা বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। কমিশন এ বিষয়ে কাজ করছে। 

নির্বাচন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধির সঙ্গে তেমন কিছু আলোচনা হয়নি দাবি করেন কামাল উদ্দিন আহমেদ। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনে এমন কিছু করা যাবে না, যাতে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। 

ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলিসহ চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গিলমোরের সঙ্গে বৈঠকগুলোয় ছিলেন।