গরিবদের জন্য কাজের পর এখন আদালতে হাজির হতে হচ্ছে: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১৭: ০৫
Thumbnail image

শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের আপিল গ্রহণ করা হয়েছে। আজ রোববার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল গ্রহণ করে চারজনকে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছেন আদালত।

জামিন পাওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য। গরিবদের জন্য কাজ করার পর এখন আদালতে হাজির হতে হচ্ছে।’

মামলার আরেক আসামি গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক নুরজাহান বেগমকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘নুরজাহান বেগম যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, আমি তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা যখন হয়, তখন থেকেই তিনি সঙ্গে আছেন। গ্রামীণ নারীদের স্বাবলম্বী করা ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের একটি সিদ্ধান্ত। যৌতুক প্রথার বিরোধিতা, নুরজাহানের নেতৃত্বে শুরু হয়। ছোট শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় রাতকানা রোগ নির্মূলে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল তাঁর হাত দিয়ে আনা হয়। সেই নুরজাহানকে আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। তিনি কাপড়চোপড় ও জায়নামাজ নিয়ে আসেন, তাঁকে জেলে যেতে হয় কি না, সেই ভয়ে। এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।’

আরেক আসামি গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক পরিচালক মো. শাহজাহান সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, শাহজাহান হাঁটতে পারেন না, চলাফেরা করতে পারেন না, তাঁকে ছয়তলায় কোলে করে তুলতে হয়। তিনিও গ্রামীণ ব্যাংকের শুরু থেকে ছিলেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘মামলা করেছে সরকার। অথচ সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে মামলা করেছেন শ্রমিকেরা। শ্রমিকেরা এই মামলা করেননি’। ইউনূস প্রশ্ন রাখেন, ‘কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর মামলা করেছে। এটা কার প্রতিষ্ঠান?’

গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক এমডি আশরাফুল হাসান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সদ্য বুয়েট থেকে পাস করা এই লোকটাকে গ্রামীণ ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গ্রামের লোকজন পাটখড়ির ঘরে বসবাস করত। গরু-ছাগলের সঙ্গে ঘুমাত। আশরাফুল হাসানকে বলা হয় একটা পরিকল্পনা করেন, কম খরচে গ্রামের লোকজন কীভাবে একটু ভালো ঘরে বসবাস করতে পারে। আশরাফুল চার খুঁটির এক টিনের চালের ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক পাঁচ-সাত হাজার টাকার ঋণ দেওয়া শুরু করল। এই আশরাফুলকেও আদালতে হাজির হতে হচ্ছে। এসব আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’

ইউনূস বলেন, ‘বর্তমানে সম্পদ একদিকে ছুটছে, তা হচ্ছে বড় লোকের পেছনে। আমরা চাই এ দেশের তরুণেরা এগিয়ে আসুক, সম্পদের সমতা ফিরিয়ে আনতে। আমরা যে কয়দিন আছি, সে কয়দিন দেশের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করে যাব। তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যদি কোনো দিক-নির্দেশনা দিতে পারি, সেটা দিয়ে যাব।’

উল্লেখ্য, মামলায় ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সাজাপ্রাপ্ত অপর তিনজন হলেন—গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান।

রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকেই এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।

২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের নামে এ মামলা করেন।

মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনে অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি ২০২১ সালে দায়ের হওয়ার পর এটা বাতিলের জন্য ড. ইউনূস হাইকোর্টে আবেদন করেন। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে মামলা বাতিলে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০২২ সালের ১৭ আগস্ট হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলা বাতিলে ইউনূসের আবেদনে জারি করা রুল খারিজ করে রায় দেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিল বিভাগ গত বছরের ৮ মে ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত