Ajker Patrika

৪টি জাহাজ কিনতে বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৩২
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের নির্বাহী ভাইস-প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াং। ছবি: ফেসবুক
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের নির্বাহী ভাইস-প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াং। ছবি: ফেসবুক

চীন ও বাংলাদেশ দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে। বেইজিং বলেছে, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার জন্য অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। এ ছাড়াও আরও বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছে বেইজিং।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার চীনের নির্বাহী ভাইস-প্রিমিয়ার ডিং শুয়েশিয়াং হাইনান প্রদেশে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দুই নেতা দুই দেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে দুই দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও একমত হয়েছে। ডিং অধ্যাপক ইউনূসকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আপনার সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন।’ তিনি আরও বলেন, চীন আশা করে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধি ও উন্নতি লাভ করবে।

বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ‘এক চীন নীতির’ প্রতি দেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিতে পেরে ঢাকা গর্বিত। এ সময় ঢাকা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চীনের সমর্থন কামনা করে এবং চীনা ঋণের সুদহার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১-২ শতাংশ করার অনুরোধ জানিয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশে চীনা অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর কমিটমেন্ট ফি মওকুফেরও অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রধান উপদেষ্টা চীনের ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প, যার মধ্যে তৈরি পোশাক, বৈদ্যুতিক যান, হালকা যন্ত্রপাতি, হাই-টেক ইলেকট্রনিকস, চিপ উৎপাদন এবং সোলার প্যানেল শিল্প রয়েছে সেগুলোর স্থানান্তর সহজ করতে বেইজিংয়ের সাহায্য চেয়েছেন।

ডিং শুয়েশিয়াং বলেন, বেইজিং ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা সম্প্রসারিত করবে। অর্থাৎ ঢাকা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়ার দুই বছর পরও এই সুবিধা বহাল থাকবে। তিনি বলেন, বেইজিং ঢাকার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনায় আগ্রহী।

নির্বাহী ভাইস-প্রিমিয়ার বলেন, তাঁর দেশ মংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ এবং দাশেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিপিং করপোরেশনের জন্য চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কেনার জন্য চীনা অর্থায়নের আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, চীন গত বছর বাংলাদেশ থেকে আম আমদানির জন্য একটি প্রোটোকল স্বাক্ষর করেছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে চীনে আম রপ্তানি এই গ্রীষ্মেই শুরু হবে। তিনি বলেন, বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রচেষ্টায় বেইজিং বাংলাদেশ থেকে কাঁঠাল, পেয়ারা ও অন্যান্য জলজ পণ্যও আমদানি করবে।

তিনি আরও বলেন, চীনা সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বেশি বৃত্তি প্রদান করবে। কয়েক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেবে বলেও জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা চীনা নেতৃত্বকে তাদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠক ‘বাংলাদেশ-চীন অংশীদারত্বের ক্রমবর্ধমান গভীরতায় আরেকটি মাইলফলক।’ তিনি বলেন, ‘আসুন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে আরও জোরদার করে বন্ধুত্ব, সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের এক নতুন যুগের সূচনা করতে একসঙ্গে কাজ করার সংকল্প করি।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি, রেল ও সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত