Ajker Patrika

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করবে বেইজিং

  • চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আজ ড. ইউনূসের বৈঠক
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি
  • মুক্ত বাণিজ্য আলোচনায় আগ্রহী বেইজিং
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। গতকাল চীনের হাইনান প্রদেশে বিএফএ বার্ষিক সম্মেলনে। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। গতকাল চীনের হাইনান প্রদেশে বিএফএ বার্ষিক সম্মেলনে। ছবি: পিআইডি

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। এ ছাড়া দেশটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব কথা জানান।

হাইনানে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পার্শ্ব বৈঠকে দেশটির এ সিদ্ধান্তের কথা জানান চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।

ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে চীনে আছেন। আজ শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বেইজিংয়ে তাঁর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াং প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আপনার সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করছেন।...চীন আশা করে, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধি অর্জন করবে।’

ডিং শুয়েশিয়াং বলেন, ২০২৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি পণ্য চীনে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এ ছাড়া চীন বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী। বাংলাদেশে মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও দাশেরকান্দি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের অর্থায়নে তাঁর দেশের আগ্রহের কথা জানান।

ডিং শুয়েশিং ইউনূসকে জানান, চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে চীন বাংলাদেশ থেকে আম আমদানি শুরু করবে। এর বাইরে কাঁঠাল, পেয়ারা ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি করতেও চীন আগ্রহী। এর মাধ্যমে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ভারসাম্যের বিশাল ব্যবধান কমানো যেতে পারে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

উপপ্রধানমন্ত্রী ডিং বলেন, হাজার হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। চীন সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য আরও বেশি বৃত্তি দেবে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে চারটি সমুদ্রগামী জাহাজ কিনতে চীন অর্থায়ন করবে, ডিং শুয়েশিয়াং প্রধান উপদেষ্টাকে এ আশ্বাস দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘এক চীন’ নীতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি অবকাঠামো উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন প্রকল্পে চীনের সহায়তা চান। বাংলাদেশকে দেওয়া চীনের ঋণের সুদের হার ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ থেকে ২ শতাংশে আনার জন্য অনুরোধ করেন। এর বাইরে চীনের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোর ‘অঙ্গীকার ফি’ মওকুফের আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা চীনের তৈরি পোশাক কারখানা, বৈদ্যুতিক যানবাহন, হালকা যন্ত্রপাতি, উচ্চ প্রযুক্তির ইলেকট্রনিকস, চিপ উৎপাদন ও সৌর বিদ্যুতের প্যানেল শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে দেশটির সরকারের সহায়তা চান। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানেও তিনি চীনের সহায়তা চান।

বোয়াও সম্মেলনে যা বললেন

বোয়াও সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে দেওয়া বক্তব্যে মুহাম্মদ ইউনূস বৈশ্বিক মহামারি চুক্তির চলমান আলোচনায় এশিয়ার ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার ওপর জোর দেন। তিনি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও প্রযুক্তিতে মানুষের সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, এশিয়ায় ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সক্ষমতা তৈরির ওপর জোর দেন।

নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ তাঁর বক্তৃতায় মুনাফার চেয়ে মানুষ ও পৃথিবীকে অগ্রাধিকার দিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক মডেল গড়ে তোলার দিকে অগ্রসর হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার চেয়ারম্যান বান কি মুন গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সেই ওভারচুক গতকাল হাইনানে বোয়াও সম্মেলনের পাশে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

ঢাকায় রাশিয়ার একটি (ব্যাংক) হিসাবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে, এমনটা জানিয়ে ইউনূস আশা প্রকাশ করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু হবে। রাশিয়ার জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করতে পারে কি না, সে বিষয়ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আলেক্সেই ওভারচুক বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশে আরও বেশি গম ও সার রপ্তানি করতে চায়।

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে এফএওর সহায়তার প্রতিশ্রুতি

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) মহাপরিচালক কু ডংগিউও গতকাল মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এফএও প্রধানকে ইউনূস চীনের আমদানিকারক ও বাংলাদেশের কৃষিপণ্য ও ফল উৎপাদনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে একটি ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার আহ্বান জানান। ইউনূস বলেন, ফল প্রক্রিয়াজাত করা, সবজি সংরক্ষণ, গুদামজাত করা ও প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে এফএওর সহায়তা প্রয়োজন।

বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কু ডংগিউও বলেন, এফএও চীনে বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সহায়তার জন্য একটি নতুন প্রকল্প নেবে।

ইউনূস বেইজিংয়ে

মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল চীনের হাইনানে আটটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পর রাতে সেখান থেকে দেশটির রাজধানী বেইজিং পৌঁছেছেন। আজ তিনি বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব পিপলসে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত