সরকারের শুধু ক্ষমা চাওয়ার সময় পার হয়ে গেছে: ড. সলিমুল্লাহ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪, ২৩: ৫৯
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০০: ২২

আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) শিক্ষকেরা। আজ বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁরা এ সমাবেশ করেন। 

মুখে লাল কাপড় বেঁধে তাঁরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিটি দাবির প্রতি সমর্থন জানান। এ সময় কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের গণহত্যা করা হয়েছে দাবি করে এর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান বক্তারা। সমাবেশে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন তাঁরা। 

সমাবেশে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘দেশের সিভিল সার্ভিস থেকে শুরু করে সমস্ত সরকারি চাকরিতে সকলের বৈধভাবে প্রতিযোগিতা করার অধিকার থাকবে কিনা থাকবে না, সেটি কোনো অরাজনৈতিক প্রশ্ন নয়, এটি রাজনৈতিক প্রশ্ন। কিন্তু এর রাজনৈতিক সমাধানের দিকে না গিয়ে দেশের সরকার প্রথমে উপেক্ষা করতে চেয়েছে, পরবর্তীতে দমননীতি অবলম্বন করেছে নিজের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে। সেটা থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের শুরু।’

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা প্রথমেই পরিষ্কার করে বলতে চাই এই, হত্যাকাণ্ড রাষ্ট্রীয় মদদে হয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা হয়েছে। যাদের আমরা বলতে পারি প্রাইভেট বাহিনী। এর বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে অবশ্যই আন্তর্জাতিক তদন্ত দরকার। আমরা আমাদের নিহত, আহত, গুম হওয়া এবং নির্যাতিত জনগণের পক্ষ থেকে সমর্থন জানাই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড অস্বীকার করার জন্য গতকাল শোক দিবসের নামে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সেখানে দেখবেন নিহত এবং আহতের জন্য কালো ব্যাজ পরিধান করতে বলেছেন, আমরা কিন্তু সেটা প্রত্যাখ্যান করে লাল ব্যাজ পরেছি। নিহতদের তাঁরা শহীদ বলতে রাজি নন। তাঁরা যদি শহীদ না হন, শুধু নিহত হন—তাহলে তাঁদের জন্য প্রার্থনার দরকার কী? শুধু এই একটা নয়। এমন অজস্র স্ববিরোধিতা আপনি পাবেন। সরকার এখন এই হত্যাকাণ্ডকে জায়েজ করবার জন্য মেট্রোরেল ও সেতু ভবনে হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন।’

জনগণ এই সরকারের উন্নয়নকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলেই বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হয়েছে জানিয়ে ড. সলিমুল্লাহ বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উন্নয়নের প্রতীকগুলো ধ্বংস করার জন্য রাজনৈতিক বিরোধীরা এই আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। কথাটা যদি সত্যি ধরে নেই, তবে দেশের মানুষ এটাকে মেনে নিল কেন? আমাদের দেশের ও ইউরোপের ইতিহাসের সঙ্গে যারা পরিচিত, অথবা যেকোনো ঔপনিবেশিক দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যারা পরিচিত, তাঁরা জানেন, মানুষ যেটাকে ক্ষমতার, দম্ভের প্রতীক মনে করে সেটিতে হামলা করে। এই সরকারের বৈধতার একমাত্র দাবি, তারা উন্নয়ন করেছে গত দেড় দশকে, আইয়ুব খানের এক দশক ছিল, শেখ হাসিনার দেড় দশক হয়েছে। এই শহরের মানুষ যে সরকারের উন্নয়নকে প্রত্যাখ্যান করেছে সেটা দেখা যায়। মানুষ যখন তথাকথিত উন্নয়নের প্রতীকে আক্রমণ করে তখন প্রথমে দেখে মনে হবে দুর্ঘটনা, কিন্তু না, এর পেছনে কারণ আছে।’ 

সরকারের শুধু ক্ষমা চাওয়ার সময় পার হয়ে গেছে উল্লেখ করে এই গণ বুদ্ধিজীবী আরও বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, এই সরকারকে ক্ষমা চাইতে হবে। এখন সেই পর্যায় পার হয়ে গেছে। এখন জনগণের পক্ষ থেকে ক্রমশ ধ্বনি উঠবে। আপনারা কি কেউ বিশ্বাস করেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাঁরা ন্যায়বিচার করতে পারবেন? তাঁরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন না, কারণ তাঁরা নিজেরাই হত্যাকারী। আপনি হত্যাকারীর কাছে কীভাবে হত্যার বিচার চাইবেন। যারা নিজেরাই রাজাকার, তারা অপরকে বলেন রাজাকার। পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় পরিহাস আর কী আছে!’ 

আজ ক্ষমতার চারদিকে রাজাকার বসে আছে দাবি করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ক্ষমতার সর্বোচ্চ কেন্দ্রের চারদিকে আজ রাজাকারেরা বসে আছে। ভবিষ্যৎ প্রগতির জন্য নয়, আজকের জন্যই আমাদের দাঁড়াতে হবে। যারা মারা গেছেন, তাঁরা আমাদের পথপ্রদর্শক। আমরাও মারা যেতে পারি, গ্রেপ্তার হতে পারি। 

নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা বিশাল জনস্রোতের সঙ্গে আছি। আমরা কিন্তু ভেসে যাওয়ার জন্য আসিনি। বুদ্ধিজীবী হিসেবে আমাদের এখানে আসা দরকার। আমাদের এই সমস্যার পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যাখ্যা করা দরকার। কিন্তু সরকার সেদিকে না গিয়ে বলে এই দল সেই দলকে নিষিদ্ধ করা দরকার। সেটা কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান নয়। শুধু সমস্যাকে আরও বাড়াবে। ক্যানসারের চাইতে আরও বাড়াবে। তাই বর্তমান সরকারকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে পদত্যাগ করতে হবে। এই পদত্যাগ ছাড়া নতুন কোনো ব্যবস্থা আমরা দিতে পারব না।’ 

শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা গ্রেপ্তার কেন, মুক্তি দাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি আসতে না পারে আমরা কাকে পড়াব, কী পড়াব?’ —প্রশ্ন রাখেন তিনি। 

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সুমন রহমান, নাদিয়া রহমান, আজফার হোসাইন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শারমিনুর নাহার, লাবনী আশরাফি, মো. দিদারুল ইসলাম, কাব্য কৃত্তিকাসহ আরও অনেকে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত