বদলে যাবে ইউনিফর্ম, দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে কর্মস্থলে ফিরছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৫৬
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ৩৩

পুলিশের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় কর্মস্থলে ফিরছে পুলিশ। আজ রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, মহাপুলিশ পরিদর্শক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই আশ্বাস দেওয়া হয়। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাংগীর আলম এই তথ্য আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন। পুলিশের পোশাকের রং পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে পুলিশদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ায় আজ রোববার থেকেই তাঁরা কর্মস্থলে যোগ দেবেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মন্ত্রণালয়ে প্রথম অফিস করতে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুলিশদের উদ্দেশে বলেন, ‘যাঁরা বৃহস্পতিবারের মধ্যে যোগদান করবেন না, তারা চাকরিতে যোগদানের আর কোনো ইচ্ছুক না।’ 
এ বিষয়ে আইজিপি, পুলিশ কমিশনার ও র‍্যাব মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুলিশ কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেন তিনি। 

স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের সমন্বয়কারী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসাদুজ্জামান জুয়েল আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের দাবিগুলো নীতিগতভাবে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রোববার থেকেই তাঁরা কাজে যোগদান করছেন। 

জুয়েল আরও বলেন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পাশাপাশি তাদের পোশাকের রং পরিবর্তন হচ্ছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে থেকে তারা কাজে যোগ দিতে রাজি। পুলিশ জনগণের পাশে সেবক হিসেবে থাকবে। 

পুলিশ বাহিনীতে অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের সমন্বয়ের সংস্কার কাজ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

সহিংস ঘটনায় দেশের প্রায় সবগুলো থানা ও পুলিশের স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও অস্ত্র লুট করা হয়। হামলায় র‍্যাব ও পুলিশের ৪৩ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। অনেকেই এখন হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। বেশির ভাগ পুলিশের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে।

বর্তমান পরিস্থিতে পুলিশ ১১ দফা দাবি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। জনমনে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
 
আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কোনো পোশাকে ছিলেন না। তাঁরা সিভিল পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য আজ সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের জীবন আগে। আমার জীবন না থাকলে পুরো পরিবার বিপর্যয়ে পড়বে। কর্মস্থলের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগদান করা হবে না।’ তবে তাঁরা অফিসেই আছেন, কিন্তু পোশাকে নেই। রাতে সচিবালয়ের বিভিন্ন স্থানে তাঁরা থাকছেন।  

পুলিশ কর্মস্থলে যোগদান না করায় সারা দেশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা। থানাগুলোয় এখনো রয়েছে ধ্বংসস্তূপ। রাস্তাঘাটে পুলিশের উপস্থিতি না থাকায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দেওয়ার পরও অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে না। 

১১ দফা দাবিতে যা আছে: (১) চলমান ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পুলিশ হত্যাসহ সব পুলিশি স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনা ।

(২) নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক ক্ষতিপূরণ, আজীবন পেনশন রেশন প্রাপ্তি এবং পরিবারের একজন সদস্যের সরকারি চাকরি নিশ্চিত করা। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা এবং গুরুতর আহত পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।

(৩) সাব–ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট নিয়োগ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে কনস্টেবল নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। 

(৪) সাব–ইন্সপেক্টর এবং সার্জেন্ট পদে বিদ্যমান পদোন্নতি–সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা। সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৩০ শতাংশ সরাসরি এবং ৭০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ এবং সেটি যথাসময়ে নিশ্চিত করা। 

(৫) আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুলিশের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আট ঘণ্টা করা এবং অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার জন্য ওভারটাইম প্রদানের ব্যবস্থা করা অথবা বছরের দুটি বেসিকের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা। 

(৬) পুলিশের ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধিকরণ, টিএ-ডিএ বিল প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে প্রদান এবং প্রযোজ্য সব সেক্টরে সোর্স মানি নিশ্চিত করতে হবে।

(৭) পুলিশ সদস্যদের বাৎসরিক ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি বৃদ্ধি করে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ৬০ দিন করতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়া সম্ভব না হলে অভোগকৃত ছুটির বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা প্রদান করতে হবে। 

(৮) পুলিশ বাহিনীর প্রচলিত পুলিশ আইন এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল সংস্কার করে যুগোপযোগী এবং কার্যকরী করতে হবে। যার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা এবং অধস্তন কর্মকর্তার কর্মচারীদের অধিকার নিশ্চিত হয়।

(৯) পুলিশ বাহিনীকে যেন কোনো দলীয় সরকার তার রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। 

(১০) পুলিশের সব থানা, ফাঁড়ি এবং ট্রাফিক বক্স আধুনিকায়ন করতে হবে এবং অধস্তন অফিসারদের জন্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

(১১) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের অধস্তন কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সব ব্যারাকে বিদ্যমান আবাসন–সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে ব্যারাকগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের রেকর্ড ভাঙল ১৪ বছর পর

৩ মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

যানজটে গুলি করে ফেঁসে গেলেন জাপার সাবেক এমপি, অস্ত্রসহ আটক

শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরীমনি, কী ঘটেছিল সেখানে

এয়ারক্র্যাফটে স্বর্ণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত