Ajker Patrika

সবার মতামত নিয়ে ধর্ষণবিষয়ক আইন সংস্কারের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৫, ২০: ৪২
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন: আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন: আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করা উচিত, সময় নেওয়া উচিত। শুধু আইন করলেই হবে না, এটি প্রয়োগের বিষয় আছে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নিয়ে ‘সম্মতি’ ও ‘পেনিট্রেশন’ শব্দের বিস্তৃত ব্যাখ্যাসহ পরিবর্তন আনা জরুরি। এ ছাড়া ধর্ষণ মামলার যথাযথ নিষ্পত্তির জন্য পুলিশ প্রশাসন, আইনজীবী ও বিচার বিভাগের সমন্বয় করতে হবে।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘ধর্ষণ ও নির্যাতন: আইনগত সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। ধর্ষণ আইন সংস্কার জোটের পক্ষে জোটের সচিবালয় ব্লাস্ট এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।

মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় কেবল ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে এবং পেনিট্রেশন শব্দের বিস্তৃত ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে এর পরিবর্তন আনা জরুরি। পাশাপাশি যৌন সম্মতির জন্য একটি নির্দিষ্ট বয়সকে মানদণ্ড নির্ণয় করাও আবশ্যক।

আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ধর্ষণের মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে নিরপেক্ষ বিচার পরিচালনার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যাধি। এখন বিচারকেরা সাদা-কালো কাগজ দেখেন না। দেখেন সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে। বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। বিচারকেরা সঠিকভাবে কাজ করলে এবং আইনের মৌলিক ধারাগুলো ব্যবহারের মাধ্যমেও সুষ্ঠুভাবে বিচার করা যায়।’

বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ বলেন, ‘কোনো ঘটনা ঘটলেই আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। এর থেকে বের হতে হবে। ন্যায়বিচার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, নিরপেক্ষ বিচার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয়—সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারকে বলব, তাড়াহুড়ো না করে সব সংগঠনের সঙ্গে বসে ব্যবস্থা নিন। বিচার বিভাগ সচেষ্ট হলে সুদিন আসবেই।’

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য মাহীন সুলতান বলেন, ‘আইনের সংশোধনের পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চা, শিক্ষার উন্নয়নও জরুরি। আমাদের দেশে “সম্মতি”কে সংজ্ঞায়িত করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে জোরপূর্বক যৌন হয়রানিকেও সম্মতি বলে ব্যাখ্যা করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের আবেগকে সংবরণ করা উচিত। আবেগের বশে আইনে এমন অবাস্তব কোনো বিধান রাখা উচিত হবে না, যা পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নে বেগ পেতে হয়। এটা নিয়ে আমাদের সকলের মতামত নেওয়া উচিত। যারা দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করে আসছেন—তাঁদের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন এ আইনে আনা জরুরি।’

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, ‘দণ্ডবিধিতে উল্লিখিত ধর্ষণের সংজ্ঞার সংশোধন করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে বাল্যকামিতাকে সহজভাবে গ্রহণ করা হয়েছে বলে এই ধরনের ধর্ষণকে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। সেই সঙ্গে ডিএনএ রিপোর্টের কথা আইনে উল্লেখ থাকলেও দেশে কেবল একটি ডিএনএ পরীক্ষা ল্যাব রয়েছে।’

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির উপদেষ্টা সালমা আলী বলেন, ‘পুলিশ, বিচারক ও পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয় লাগবে বিচারের ক্ষেত্রে। আমরা চাই, স্বচ্ছ বিচার। আসামি যাতে আইনের আওতায় আসে, অপরাধ যাতে কমে যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত