Ajker Patrika

সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐক্যে ধীর গতি, সময় নিচ্ছে দলগুলো

  • ৩৭টি দলের কাছে মতামত চেয়েছে কমিশন
  • গতকাল পর্যন্ত ৭ দল মতামত দিয়েছে। সময় চেয়েছে ১৬টি দল
  • টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত চাওয়ায় দলগুলোর অস্বস্তি
রেজা করিম, তানিম আহমেদ ও সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে মতামত প্রাপ্তির প্রত্যাশা করা হলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত মাত্র ৭টি দলের মতামত কমিশনে জমা পড়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ৩০টি দল মতামত জমা দেয়নি। মতামত দেওয়ার জন্য কিছু দল সময় চেয়েছে আর কিছু দলের সঙ্গে নিজে থেকেই যোগাযোগ করছে কমিশন।

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মতামত গ্রহণের পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি ও তাদের শরিক দলের নেতারা। তবে মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহের কমতি নেই বলে দাবি করেছেন কমিশনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫৪টি রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রায় ১০০ জন নেতার সঙ্গে প্রথম বৈঠক করে কমিশন। নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সংস্কার বিষয়ে মতামত চেয়ে ৬ মার্চ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠায় কমিশন। পাঁচটি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিপরীতে ছক আকারে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে ‘টিক চিহ্ন’ দিয়ে ১২০টি প্রশ্নের বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়। সঙ্গে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের হার্ড কপিও পাঠানো হয়। মতামত জানানোর শেষ দিন ছিল গতকাল বৃহস্পতিবার। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি।

গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৩৭টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চাওয়া হলেও গতকাল পর্যন্ত ৭টি রাজনৈতিক দল কমিশনে মতামত দিয়েছে। দলগুলো হচ্ছে—এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, এনডিএম ও আমজনতার দল। বিএনপিসহ ১৬টি দল মতামত দিতে অতিরিক্ত সময় দেওয়ার জন্য কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছে। অন্য দলগুলোর সঙ্গে কমিশন আবারও যোগাযোগ করছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার গতকাল বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দারুণ আগ্রহ দেখাচ্ছে। দলগুলো আমাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে। তারা বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইছে। মতামত দেওয়ার জন্য বড় দলগুলো সময় চেয়েছে, কেউ দুই দিন, কেউ চার দিন। বেশ কিছু দল দিয়ে গেছে (মতামত)।’

সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত দিতে কাজ করছে বিএনপি। গত সোমবার অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা করেছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। তবে ‘টিক চিহ্ন’ দিয়ে মতামত জানানোর বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে সমালোচনা করেছেন একাধিক নেতা। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে খানিকটা হেয় করা হয়েছে বলেও মত দিয়েছেন কেউ কেউ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুধু ছকে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে গেলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির আশঙ্কা আছে। তাই আমরা বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে মতামত জানাব।’

দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি মহাসচিব অসুস্থ থাকায় এ নিয়ে বৈঠক হচ্ছে না। তিনি সুস্থ হলে শিগগির এ বিষয়ে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকেই মতামত চূড়ান্ত করা হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করে মতামত জানাতে চায় বিএনপি। এ জন্য কমিশনের কাছে দলের পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হয়েছে।

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ নিয়েও প্রশ্ন আছে বিএনপিতে। সংলাপ শুধু নিবন্ধিত দল নাকি অনিবন্ধিত দলের সঙ্গেও হবে, এ বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।

জামায়াতে ইসলামীও এখনো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দেয়নি। জানতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘মতামত আমরা এখনো দিইনি। এ জন্য কয়েক দিন সময় চেয়েছি। যেসব বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে, প্রতিটি বিষয়েই আমরা আমাদের মতামত দেব। যত কমিশন হয়েছে, প্রতিটির বিষয়েই আমাদের মতামত থাকবে।’

আগামী সপ্তাহে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সংস্কার বিষয়ে মতামত জমা দেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘মতামত পাঠানোর জন্য আমরা আরও দু-এক দিন সময় নেব। সংবিধান, নির্বাচন ও জনপ্রশাসনের সংস্কারের বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’

বিএনপির মিত্র জোট ১২ দলীয় জোট মতামত পাঠায়নি এখনো। কমিশনে মতামত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জোট বৈঠক করেছে। সেখানে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানতে চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে অনীহা দেখিয়েছেন জোটের নেতারা।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘টিক চিহ্ন বিষয়টি আমাদের জোটের শরিকেরা ভালো চোখে দেখছেন না। রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে বিষয়টি আমাদের কাছে খুব একটা স্বস্তির মনে হয়নি। জোটের পক্ষ থেকে মতামত জানানোর জন্য আরও সাত দিন সময় চেয়েছি ঐকমত্য কমিশনের কাছে।’

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ জোটগতভাবে মতামত দিচ্ছে না বলে জানা গেছে। জোটের দলগুলো পৃথকভাবে তাদের মতামত কমিশনে দেবে বলে জানিয়েছেন জোটভুক্ত বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। মতামত দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর দল ছকে বাঁধা থাকতে চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ/না, আংশিক হ্যাঁ/আংশিক না পদ্ধতিতে না দিয়ে আমরা যা বলতে চাই, সেগুলো পাঠাব। আরও কয়েকটা দিন সময় নেব।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কার কথাও জানান সাইফুল হক।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত দেওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে আরও আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এ সমস্ত আলোচনা সংলাপের মধ্যে করা দরকার। কারণ এক একটা বক্তব্য আনা হচ্ছে কোন যুক্তিতে, কিসের পরিপ্রেক্ষিতে এটা বুঝলে আমাদের মতামত দিতে সুবিধা হবে। এ জন্য আমরা বলছি আমরা এখন দিতে পারছি না, আরও পরে দেব বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত