কামরুল হাসান, ঢাকা
রংপুর শহর থেকে মিনিট দশেক চলার পর পাকা রাস্তাটা সরু হয়ে গেল। দুপাশে বিস্তীর্ণ ধানখেত, তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এর মাঝ দিয়ে সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ। সেই পথ ধরে বাইকে করে আমরা চলেছি নীলফামারীর দিকে। আমরা মানে, আমি আর রংপুরের নামকরা ফটোসাংবাদিক মঈনুল ইসলাম।
চৈত্রের দুপুরের গনগনে রোদ, সড়কের পিচ যেন গলছে; সেই সঙ্গে শরীরও। ঘামে জবজবে সারা গা। আমরা যাচ্ছি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দ্রুত বড়লোক হওয়া দুই যুবকের সন্ধানে।
এটা ২০১০ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। তখন একের পর এক সরকারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছিল। কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে জানা গেল, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সব হোতার বাড়ি রংপুর অঞ্চলে। রংপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি তখন এই চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জড়িতদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি আমরা।
আমি এই এলাকার পথঘাট কিছুই চিনি না; কিন্তু মঈনুলের কাছে সব হাতের রেখার মতো। ঝোড়ো গতিতে বাইক চালিয়ে মাঠের পর মাঠ পার করছেন মঈনুল। বাইকে সওয়ারির আসনে যিনি বসে থাকেন, বাইক চলার সময় তাঁর আসলে কোনো কাজ থাকে না। আমিও তাই পেছনে বসে দুপাশের নির্জন প্রকৃতি দেখছি।
ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলছি, কিন্তু পথ আর ফুরায় না। একটু পরে আল মাহমুদের কবিতার হঠাৎ ‘ভয়ের মতো ভেসে উঠবে আমাদের আটচালা’র মতো দূরে একটি ভবনের দেখা মিলল, অনেকটা স্কুলঘরের মতো। মঈনুল বললেন, এটা কিশোরগঞ্জ স্কুল। আরেকটু এগোতেই একটি মোড়, দেখি একদল কিশোরী সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে, পেছনে ক্যারিয়ারে বই বাঁধা। একটি-দুটি নয়, শত শত কিশোরী। রাস্তায় তাদের চলা দেখে মনে হচ্ছে, ম্যারাথন রেসের জন্য সবাই লাইন ধরে পথে নেমেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের এই দৃশ্য আমার শহুরে অনভ্যস্ত চোখে বড় বিস্ময় জাগাল।
মঈনুলকে বললাম, একটু দাঁড়ান। ততক্ষণে আমরা স্কুলের সামনে এসেছি। রাস্তার পাশেই স্কুল ভবন, পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। সামনে ঘাসের চাদর বিছানো সবুজ মাঠ। নানা বনজ ও ফলদ গাছ। দারুণ ছায়াময় পরিবেশ।
সকাল ঠিক ১০টা হবে, আমার সামনে এসে সাইকেল থেকে নামছে লাল জামা পরা ১২-১৩ বছরের এক কিশোরী। ক্যারিয়ারে রাখা বই-খাতা। রোদপোড়া মুখ বেয়ে নামছে ঘামের স্রোত। হাসতে হাসতে অনায়াসে ভারী সাইকেলটি দুই হাতে চ্যাংদোলা করে তুলে লোহার গেট পেরিয়ে ঢুকে গেল স্কুলে। তার পেছনে আরেকজন। তারপর একে একে আরও অনেকে। ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হলো সারি।
যে স্কুলের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে, সেটা নীলফামারী জেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে। যাকে বলে প্রত্যন্ত জনপদ। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একটিমাত্র সরু পাকা রাস্তা। কিন্তু অজপাড়াগাঁয়ে স্কুলের নামফলক দেখে খুব অবাক হলাম, এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩৯ সালে। নাম কিশোরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়।
আমার খুব ইচ্ছে কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলার। বলতে গিয়ে জানলাম, কারও বাড়ি পাঁচ কিলোমিটার, কারও-বা ৮ থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে। এমনকি ১৯ কিলোমিটার দূরে থেকেও আসে কেউ কেউ। এতটা পথ রোজ হেঁটে আসা অসম্ভব, তাই তারা সাইকেলে সওয়ার। তারপরও প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালানো সহজ নয়। মাটির এবড়োখেবড়ো পথে কষ্টের শেষ নেই। এসবের পরে আবার আছে সামাজিক কিছু বিড়ম্বনা, কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারে না ওদের।
একটু কথা বলতেই ফুটে উঠল অনেক বিড়ম্বনার কাহিনি। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিক বলল, ‘প্রথম প্রথম সাইকেলে এলে গ্রামের মুরব্বিরা বলতেন, মাইয়া মানুষ হইয়া ছেলেদের মতো সাইকেল চালাইতেছ!’
আমরা কথা বলছি দেখে এগিয়ে এলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম। পাশে ছিলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী। স্কুলের নির্মাণকাজ তদারকিতে এসেছিলেন। ছাত্রীদের সাইকেলে স্কুলে আসার কথা উঠতেই দুজনে বললেন, ‘নারীদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে রাজধানীতে বসে যাঁরা সভা-সেমিনার করেন, তাঁদের কাছে প্রত্যন্ত গ্রামের এই কিশোরীরা নিশ্চয় বিস্ময়ের!’
সেই লাল জামা পরা মেয়েটি—মাহফুজা আক্তার—পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বাবা আশরাফুল ইসলাম ঢাকায় নিটিং কারখানায় চাকরি করেন। স্কুল থেকে আট কিলোমিটার দূরে পূর্ব কালিকাপুরে ওদের বাড়ি। সেখান থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। মাহফুজা বলল, তার বড় দুই বোন সাথি-শম্পা পড়ে দশম ও সপ্তম শ্রেণিতে। তিন বোনই স্কুলে আসে সাইকেল চালিয়ে।
সাইকেলে আট কিলোমিটার আসতে মাহফুজার সময় লাগে ৪০ মিনিট। আসার সময় রোদে কষ্ট হয়। ফেরার সময় বেলা পড়ে এলে আরামেই যাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি হলেই মুশকিল। বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ। মাহফুজার কথায়, ‘ভিজতে ভিজতে এতটা পথ তো আর আসা যায় না।’
মাহফুজার সহপাঠী লতা রানির বাড়ি স্কুল থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে, গারাগ্রামের ভাইজানপাড়ায়। বাবা কৃষিকাজ করেন। লতা জানাল, সাইকেলে দেড় ঘণ্টা লাগে স্কুলে আসতে। গ্রামের তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকা, বাকিটুকু মাটির। বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে বেহাল হয়ে পড়ে। সাইকেল চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন হেঁটে আসতে হয়, নয়তো স্কুলে আসা সেদিনের মতো বন্ধ।
সাত কিলোমিটার দূরের নিতাইপাড়া থেকে স্কুলে আসে হাবিবা। তার মতো জান্নাতি আক্তার, কুলসুম, আমেনা, রেশমি, জাকিয়া, সুলতানা—সবাই আসে দূরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে, সাইকেল চালিয়ে।
সাইকেল চালানোর কিছু বাড়তি সুবিধাও আছে। হাবিবা বলল, ‘সাইকেলে এলে বখাটেরা উপদ্রব করতে পারে না। তবে রাস্তা দিয়ে চলার সময় কেউ কেউ টিটকারি মারে, শিস দেয়।’ তবে এসবে ওরা পাত্তা দেয় না।
এক কিশোরীর কাছে জানতে চাইলাম, আচ্ছা, মা, সাইকেল চালালে কী হয় বলো তো। সে ত্বরিত জবাব দিল, ‘যারা সাইকেল চালায়, তাদের কনফিডেন্স বাড়ে।’ আমি গ্রামের এই কিশোরীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, সেদিন কিছু বলতে পারিনি।
এদের ফলাফল কেমন প্রশ্ন করতেই প্রধান শিক্ষক বললেন, পাঁচ কিলোমিটার দূরের বাজেডুমুরিয়া গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসা নুসরাত জাহান সেবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার ছোট বোন শাহনাজ পারভিন এরপর বোনের সাইকেলে করে স্কুলে আসছে। সে-ও ভালো ছাত্রী।
১৯ কিলোমিটার দূরে মাগুরা থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়া ছাত্রীটিকে দেখার ইচ্ছা ছিল; কিন্তু সেদিন কেন জানি সে বিদ্যালয়ে আসেনি। ক্লাসে খোঁজ নিয়ে প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘আজ মেয়েটি আসেনি, ভাই।’ সেদিন আর কথা হলো না তার সঙ্গে। শিক্ষার বিশাল জগতে গ্রামের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার এই অদম্য কাহিনির একটি পার্শ্বচরিত্র আমার কাছে অজানাই থেকে গেল। খুব ইচ্ছে হয় একদিন মেয়েটিকে দেখতে যাব; কিন্তু ১২ বছরে সে কি আর আছে? হয়তো এগিয়ে গেছে অনেক দূরে, যে লক্ষ্যের জন্য লড়াইয়ে নেমেছিল মেয়েটি। যার গায়ে সকালের প্রথম আলো পড়ে, যাকে দেখে প্রথম ডেকে ওঠে ভোরের পাখি, কলাবতীর পাতার শিশির যার গা ভিজিয়ে দেয়, তাকে থামাবে এমন সাধ্য কার?
আরও পড়ুন:
রংপুর শহর থেকে মিনিট দশেক চলার পর পাকা রাস্তাটা সরু হয়ে গেল। দুপাশে বিস্তীর্ণ ধানখেত, তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যায়। এর মাঝ দিয়ে সাপের মতো আঁকাবাঁকা পথ। সেই পথ ধরে বাইকে করে আমরা চলেছি নীলফামারীর দিকে। আমরা মানে, আমি আর রংপুরের নামকরা ফটোসাংবাদিক মঈনুল ইসলাম।
চৈত্রের দুপুরের গনগনে রোদ, সড়কের পিচ যেন গলছে; সেই সঙ্গে শরীরও। ঘামে জবজবে সারা গা। আমরা যাচ্ছি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দ্রুত বড়লোক হওয়া দুই যুবকের সন্ধানে।
এটা ২০১০ সালের জুলাই মাসের ঘটনা। তখন একের পর এক সরকারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছিল। কোনোভাবেই তা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে জানা গেল, প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সব হোতার বাড়ি রংপুর অঞ্চলে। রংপুরের পুলিশ সুপার ছিলেন সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি তখন এই চক্রের অনেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জড়িতদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে গ্রামে গ্রামে যাচ্ছি আমরা।
আমি এই এলাকার পথঘাট কিছুই চিনি না; কিন্তু মঈনুলের কাছে সব হাতের রেখার মতো। ঝোড়ো গতিতে বাইক চালিয়ে মাঠের পর মাঠ পার করছেন মঈনুল। বাইকে সওয়ারির আসনে যিনি বসে থাকেন, বাইক চলার সময় তাঁর আসলে কোনো কাজ থাকে না। আমিও তাই পেছনে বসে দুপাশের নির্জন প্রকৃতি দেখছি।
ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলছি, কিন্তু পথ আর ফুরায় না। একটু পরে আল মাহমুদের কবিতার হঠাৎ ‘ভয়ের মতো ভেসে উঠবে আমাদের আটচালা’র মতো দূরে একটি ভবনের দেখা মিলল, অনেকটা স্কুলঘরের মতো। মঈনুল বললেন, এটা কিশোরগঞ্জ স্কুল। আরেকটু এগোতেই একটি মোড়, দেখি একদল কিশোরী সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে, পেছনে ক্যারিয়ারে বই বাঁধা। একটি-দুটি নয়, শত শত কিশোরী। রাস্তায় তাদের চলা দেখে মনে হচ্ছে, ম্যারাথন রেসের জন্য সবাই লাইন ধরে পথে নেমেছে। প্রত্যন্ত গ্রামের এই দৃশ্য আমার শহুরে অনভ্যস্ত চোখে বড় বিস্ময় জাগাল।
মঈনুলকে বললাম, একটু দাঁড়ান। ততক্ষণে আমরা স্কুলের সামনে এসেছি। রাস্তার পাশেই স্কুল ভবন, পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা। সামনে ঘাসের চাদর বিছানো সবুজ মাঠ। নানা বনজ ও ফলদ গাছ। দারুণ ছায়াময় পরিবেশ।
সকাল ঠিক ১০টা হবে, আমার সামনে এসে সাইকেল থেকে নামছে লাল জামা পরা ১২-১৩ বছরের এক কিশোরী। ক্যারিয়ারে রাখা বই-খাতা। রোদপোড়া মুখ বেয়ে নামছে ঘামের স্রোত। হাসতে হাসতে অনায়াসে ভারী সাইকেলটি দুই হাতে চ্যাংদোলা করে তুলে লোহার গেট পেরিয়ে ঢুকে গেল স্কুলে। তার পেছনে আরেকজন। তারপর একে একে আরও অনেকে। ক্রমে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হলো সারি।
যে স্কুলের সামনে আমরা দাঁড়িয়ে, সেটা নীলফামারী জেলা সদর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে। যাকে বলে প্রত্যন্ত জনপদ। উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একটিমাত্র সরু পাকা রাস্তা। কিন্তু অজপাড়াগাঁয়ে স্কুলের নামফলক দেখে খুব অবাক হলাম, এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩৯ সালে। নাম কিশোরগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়।
আমার খুব ইচ্ছে কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলার। বলতে গিয়ে জানলাম, কারও বাড়ি পাঁচ কিলোমিটার, কারও-বা ৮ থেকে ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে। এমনকি ১৯ কিলোমিটার দূরে থেকেও আসে কেউ কেউ। এতটা পথ রোজ হেঁটে আসা অসম্ভব, তাই তারা সাইকেলে সওয়ার। তারপরও প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালানো সহজ নয়। মাটির এবড়োখেবড়ো পথে কষ্টের শেষ নেই। এসবের পরে আবার আছে সামাজিক কিছু বিড়ম্বনা, কিন্তু কোনো কিছুই দমাতে পারে না ওদের।
একটু কথা বলতেই ফুটে উঠল অনেক বিড়ম্বনার কাহিনি। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিক বলল, ‘প্রথম প্রথম সাইকেলে এলে গ্রামের মুরব্বিরা বলতেন, মাইয়া মানুষ হইয়া ছেলেদের মতো সাইকেল চালাইতেছ!’
আমরা কথা বলছি দেখে এগিয়ে এলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম আজম। পাশে ছিলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক প্রকৌশলী। স্কুলের নির্মাণকাজ তদারকিতে এসেছিলেন। ছাত্রীদের সাইকেলে স্কুলে আসার কথা উঠতেই দুজনে বললেন, ‘নারীদের পিছিয়ে পড়া নিয়ে রাজধানীতে বসে যাঁরা সভা-সেমিনার করেন, তাঁদের কাছে প্রত্যন্ত গ্রামের এই কিশোরীরা নিশ্চয় বিস্ময়ের!’
সেই লাল জামা পরা মেয়েটি—মাহফুজা আক্তার—পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বাবা আশরাফুল ইসলাম ঢাকায় নিটিং কারখানায় চাকরি করেন। স্কুল থেকে আট কিলোমিটার দূরে পূর্ব কালিকাপুরে ওদের বাড়ি। সেখান থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। মাহফুজা বলল, তার বড় দুই বোন সাথি-শম্পা পড়ে দশম ও সপ্তম শ্রেণিতে। তিন বোনই স্কুলে আসে সাইকেল চালিয়ে।
সাইকেলে আট কিলোমিটার আসতে মাহফুজার সময় লাগে ৪০ মিনিট। আসার সময় রোদে কষ্ট হয়। ফেরার সময় বেলা পড়ে এলে আরামেই যাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি হলেই মুশকিল। বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ। মাহফুজার কথায়, ‘ভিজতে ভিজতে এতটা পথ তো আর আসা যায় না।’
মাহফুজার সহপাঠী লতা রানির বাড়ি স্কুল থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে, গারাগ্রামের ভাইজানপাড়ায়। বাবা কৃষিকাজ করেন। লতা জানাল, সাইকেলে দেড় ঘণ্টা লাগে স্কুলে আসতে। গ্রামের তিন কিলোমিটার রাস্তা পাকা, বাকিটুকু মাটির। বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে বেহাল হয়ে পড়ে। সাইকেল চালানোই মুশকিল হয়ে পড়ে। তখন হেঁটে আসতে হয়, নয়তো স্কুলে আসা সেদিনের মতো বন্ধ।
সাত কিলোমিটার দূরের নিতাইপাড়া থেকে স্কুলে আসে হাবিবা। তার মতো জান্নাতি আক্তার, কুলসুম, আমেনা, রেশমি, জাকিয়া, সুলতানা—সবাই আসে দূরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে, সাইকেল চালিয়ে।
সাইকেল চালানোর কিছু বাড়তি সুবিধাও আছে। হাবিবা বলল, ‘সাইকেলে এলে বখাটেরা উপদ্রব করতে পারে না। তবে রাস্তা দিয়ে চলার সময় কেউ কেউ টিটকারি মারে, শিস দেয়।’ তবে এসবে ওরা পাত্তা দেয় না।
এক কিশোরীর কাছে জানতে চাইলাম, আচ্ছা, মা, সাইকেল চালালে কী হয় বলো তো। সে ত্বরিত জবাব দিল, ‘যারা সাইকেল চালায়, তাদের কনফিডেন্স বাড়ে।’ আমি গ্রামের এই কিশোরীর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম, সেদিন কিছু বলতে পারিনি।
এদের ফলাফল কেমন প্রশ্ন করতেই প্রধান শিক্ষক বললেন, পাঁচ কিলোমিটার দূরের বাজেডুমুরিয়া গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসা নুসরাত জাহান সেবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। তার ছোট বোন শাহনাজ পারভিন এরপর বোনের সাইকেলে করে স্কুলে আসছে। সে-ও ভালো ছাত্রী।
১৯ কিলোমিটার দূরে মাগুরা থেকে সাইকেল চালিয়ে আসা-যাওয়া ছাত্রীটিকে দেখার ইচ্ছা ছিল; কিন্তু সেদিন কেন জানি সে বিদ্যালয়ে আসেনি। ক্লাসে খোঁজ নিয়ে প্রধান শিক্ষক বললেন, ‘আজ মেয়েটি আসেনি, ভাই।’ সেদিন আর কথা হলো না তার সঙ্গে। শিক্ষার বিশাল জগতে গ্রামের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার এই অদম্য কাহিনির একটি পার্শ্বচরিত্র আমার কাছে অজানাই থেকে গেল। খুব ইচ্ছে হয় একদিন মেয়েটিকে দেখতে যাব; কিন্তু ১২ বছরে সে কি আর আছে? হয়তো এগিয়ে গেছে অনেক দূরে, যে লক্ষ্যের জন্য লড়াইয়ে নেমেছিল মেয়েটি। যার গায়ে সকালের প্রথম আলো পড়ে, যাকে দেখে প্রথম ডেকে ওঠে ভোরের পাখি, কলাবতীর পাতার শিশির যার গা ভিজিয়ে দেয়, তাকে থামাবে এমন সাধ্য কার?
আরও পড়ুন:
দেশে বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখের মতো। তাদের সবাইকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। তবে এরপর প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জমা দিতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর এমনটাই জানানো হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেফরিদপুরের মল্লিকপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে খাগড়াছড়ি পরিবহন ও গ্রিন এক্সপ্রেস বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের দুর্ঘটনাস্থলকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা বারংবার দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতীয় তদন্ত কমিটি। মৃতুফাঁদে পরিণত ওই সড়কটির কাঠামোগত ত্রুটি সারানোসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করে জরুরি ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের
২ ঘণ্টা আগেদেশের সব টিভি চ্যানেল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দিনে কমপক্ষে দুবার প্রচার করতে হবে ‘জুলাই অনির্বাণ’ ভিডিওচিত্র। আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগ জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে তথ্য..
৩ ঘণ্টা আগেনতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও অপর চার নির্বাচন কমিশনারের শপথ আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রোববার বেলা দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাঁদের শপথ পাঠ করাবেন। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে এ কথা জানান।
৪ ঘণ্টা আগে