কামরুল হাসান, ঢাকা
শুক্রবার মানেই ক্রাইম রিপোর্টারদের আরাম হারামের দিন। সেদিন কোনো না কোনো ঘটনা ঘটবেই। তা-ও সেটা ছোটখাটো কিছু নয়, রীতিমতো হইচই ফেলা ঘটনা। ২০০২ সালের ১০ মে, শুক্রবার সকালটাও সেভাবেই শুরু হয়েছিল দুরুদুরু মন নিয়ে। শেষ পর্যন্ত যা ভাবা, তা-ই হলো। জুমার আগেই খবর এল, ধানমন্ডিতে বড় মার্ডার হয়েছে।
মিরপুর রোডে গিয়ে দেখি, অর্কিড প্লাজার সামনে পুলিশের অনেক গাড়ি রাস্তার ওপর দাঁড় করানো। মার্কেটের সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ। গুলিতে কাচ ঝাঁঝরা হওয়া নীল রঙের একটি মাইক্রোবাস ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অনেক লোক। পুলিশ সদস্যরা মার্কেটের ভেতরে যাচ্ছেন আর আসছেন। সবাই তটস্থ, একটু পরে সেখানে কমিশনার আসবেন।
কে খুন হয়েছেন? এক পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, নিউটন। কোন নিউটন? তিনি আর বলতে পারলেন না। পাশ থেকে এক সাংবাদিক সহকর্মী বলে উঠলেন, মিরপুরের কাউন্সিলর নিউটন। এক ক্রাইম রিপোর্টার বন্ধু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি খিস্তি করে বললেন, ‘আরে ব্যাটা, তুই কয় দিন আগে যারে নিয়ে নিউজ করলি, হেই ব্যাটা।’ তাঁর কথায় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক স্মার্ট, সুদর্শন যুবকের মুখ। তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মাসখানেক আগে একটি রিপোর্ট করেছিলাম। সেই রিপোর্টের জন্য তাঁর সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ কথাও বলেছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করেছিলেন। রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর তিনি আমাকে ফোন করে কিছু অংশের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বেশ বিনয় ছিল। সেই যুবক এভাবে খুন হওয়ায় একটু খারাপ লাগল।
ততক্ষণে অর্কিড প্লাজার সামনে মানুষের ভিড় জমে গেছে। পুলিশ রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে দিয়েছে। সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক সেখানে হামলে পড়েছেন।
সাধারণত কোনো ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় বেশি হলে নানা ধরনের কথা আসতে থাকে। তাতে ঘটনার সঙ্গে রটনাও মিশে যায়। তখন আসল-নকল খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এখানেও সেটা হয়েছে। একজনের কাছে জানতে চাইলাম, মিরপুরের নিউটন এখানে কী করছিলেন? একেকজন একেক কথা বলেন। পরে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গেল আসল খবর।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, নিউটনের ছোট ভাই তপনের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সাতমসজিদ রোডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মিরপুরের বাসা থেকে সকালে ধানমন্ডি আসেন নিউটন। অর্কিড প্লাজার দোতলার কোনার দিকে শীতল নামের একটি সেলুন ছিল। চুল-দাড়ি কাটাতে সেখানে এসেছিলেন।
শীতল সেলুনের মালিক আলাউদ্দিন আমাকে বললেন, নিউটন এসেছিলেন বেলা ১১টার দিকে। ঠিক দুপুর ১২টার সময় তিনি নিচে নেমে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ইসমাইল নামের একজন দেহরক্ষী ছিলেন। তিনি নিচে নেমে গাড়িতে ওঠার সময় তিন যুবক তাঁকে অনুসরণ করে গাড়ির দরজা পর্যন্ত চলে যান। তিনি যখন গাড়িতে উঠবেন, ঠিক তখনই যুবকদের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করেন নিউটন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নিউটনের গাড়িচালক মিজান এগিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। সন্ত্রাসীরা তাঁকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে।
অর্কিড প্লাজার দারোয়ান সাইদ আমাকে বললেন, গুলি করার পর তিন যুবক রাস্তা পার হয়ে উল্টো দিকে চলে যান। সেখানে সাদা রঙের একটি গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। যুবকের দল সেই গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়।
নিউটন কেন খুন হলেন, সেটা বলার আগে তাঁর ফিরিস্তিটা একটু বলে নিই। ছায়েদুর রহমান নিউটনের বাবার নাম ওয়ালিউর রহমান। মিরপুর ১ নম্বরের জি ব্লকে তাঁদের আদি নিবাস। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর পরিবারের সবাই লন্ডনপ্রবাসী। ’৮৯ সালে তেজগাঁও কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। তখন মিরপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হন। কলেজের পর্ব শেষ করে লন্ডনে চলে যান। ’৯২ সালে ফিরে এসে মিরপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হন। ’৯৬ সালে মহানগর কমিটিতে আসেন। সে সময় ছাত্রনেতা নাসির উদ্দীন পিন্টুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। লাল্টু-পিন্টুর কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতিও হন নিউটন। পরে নাসির উদ্দীন পিন্টু তাঁর ছোট বোন ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টির সঙ্গে বিয়ে দেন। নিউটন দম্পতির চমক নামের একটি মেয়েও আছে।
নাসির উদ্দীন পিন্টুর সঙ্গে সখ্যর সুবাদে নিউটন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি মিরপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। একটি ধর্ষণ মামলায় জেলও খাটেন। সে সময় পুলিশ আমাকে বলেছিল, নিউটনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা আছে। এগুলোর মধ্যে একটি খুনের মামলাও ছিল। তবে নিউটন বলেছিলেন, এসব মামলা ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছিল। যা হোক, তার পরও তিনি ২০০২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে চারদলীয় জোট সরকারের মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। নিহত হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে ৭ মে কাউন্সিলর হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। এমনিতে নিউটন সব সময় চলতেন পুলিশি পাহারায়। তেজগাঁও কলেজে এমএ পরীক্ষা দেওয়ার সময়ও পুলিশ পাহারায় ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর তিনি পুলিশের পাহারা ছেড়ে নিজস্ব লোকজন নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। যত দূর শুনেছিলাম, পুলিশ সঙ্গে নিয়ে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়াতেন। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এর পরই পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশ ও বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, নিউটন কেন খুন হলেন। মনে হয়েছিল, হয় নির্বাচনী কোনো কারণে অথবা পুরোনো কোনো বিরোধে তিনি খুন হয়েছেন। কিন্তু দুটোর কোনোটাই সত্যি হলো না। তিনি খুন হয়েছিলেন মিরপুর ১ নম্বর এলাকার কো-অপারেটিভ হকার্স মার্কেটের দখল নিয়ে বিরোধের জেরে। সে সময় মার্কেটটি দখলে নিতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী ও তাঁর দলের লোকেরা। তাঁরা এই দখল কবজায় রাখতে কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। কালা জাহাঙ্গীর তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর কিলার আব্বাসকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। নিউটন খুনের পর ২৭ মে কালা জাহাঙ্গীরের সহযোগী ভুট্টো পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ভুট্টো বলেছিলেন, নিউটন হত্যাকাণ্ডে কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
নিউটন খুনের ঘটনায় তাঁর মা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রিপন হেরে যাওয়ার আক্রোশে আগা খান মিন্টু, রাহাত খান, মোশাররফ হোসেন মশুদের সহযোগিতায় নিউটনকে হত্যা করা হয়। পুলিশ এই মামলা তদন্ত করে ১৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। আসামি শওকত, রুবেল ও আইয়ুব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। ২০০৬ সালের ২৪ মে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১৮ জনের মধ্যে দুজনকে খালাস দিয়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্ট ফাঁসি ও যাবজ্জীবন থেকে ছয় আসামিকে অব্যাহতি দেন। মজার বিষয় হলো, শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরেরও মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।
আজকের আষাঢ়ে নয় লিখতে গিয়ে মনে পড়ল নিউটনের সঙ্গে আমার সেই সাক্ষাতের কথা। তিনি বলছিলেন, যেকোনো সময় তিনি খুন হতে পারেন। তাঁর পেছনে বুলেট ঘুরছে। আমি তাঁকে বলেছিলাম, এসব ছেড়ে দেন, তাহলে ঝামেলা থাকবে না। তিনি বলেছিলেন, এটা একমুখী পথ, শুধু ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। নিউটন খুন হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল, তাঁর কথাই সত্যি হলো। তিনি আর বের হতে পারলেন না।
আরও পড়ুন:
শুক্রবার মানেই ক্রাইম রিপোর্টারদের আরাম হারামের দিন। সেদিন কোনো না কোনো ঘটনা ঘটবেই। তা-ও সেটা ছোটখাটো কিছু নয়, রীতিমতো হইচই ফেলা ঘটনা। ২০০২ সালের ১০ মে, শুক্রবার সকালটাও সেভাবেই শুরু হয়েছিল দুরুদুরু মন নিয়ে। শেষ পর্যন্ত যা ভাবা, তা-ই হলো। জুমার আগেই খবর এল, ধানমন্ডিতে বড় মার্ডার হয়েছে।
মিরপুর রোডে গিয়ে দেখি, অর্কিড প্লাজার সামনে পুলিশের অনেক গাড়ি রাস্তার ওপর দাঁড় করানো। মার্কেটের সামনের রাস্তায় রক্তের দাগ। গুলিতে কাচ ঝাঁঝরা হওয়া নীল রঙের একটি মাইক্রোবাস ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে অনেক লোক। পুলিশ সদস্যরা মার্কেটের ভেতরে যাচ্ছেন আর আসছেন। সবাই তটস্থ, একটু পরে সেখানে কমিশনার আসবেন।
কে খুন হয়েছেন? এক পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, নিউটন। কোন নিউটন? তিনি আর বলতে পারলেন না। পাশ থেকে এক সাংবাদিক সহকর্মী বলে উঠলেন, মিরপুরের কাউন্সিলর নিউটন। এক ক্রাইম রিপোর্টার বন্ধু পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি খিস্তি করে বললেন, ‘আরে ব্যাটা, তুই কয় দিন আগে যারে নিয়ে নিউজ করলি, হেই ব্যাটা।’ তাঁর কথায় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল এক স্মার্ট, সুদর্শন যুবকের মুখ। তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে মাসখানেক আগে একটি রিপোর্ট করেছিলাম। সেই রিপোর্টের জন্য তাঁর সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ কথাও বলেছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করেছিলেন। রিপোর্ট ছাপা হওয়ার পর তিনি আমাকে ফোন করে কিছু অংশের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বেশ বিনয় ছিল। সেই যুবক এভাবে খুন হওয়ায় একটু খারাপ লাগল।
ততক্ষণে অর্কিড প্লাজার সামনে মানুষের ভিড় জমে গেছে। পুলিশ রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে দিয়েছে। সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক সেখানে হামলে পড়েছেন।
সাধারণত কোনো ঘটনাস্থলে মানুষের ভিড় বেশি হলে নানা ধরনের কথা আসতে থাকে। তাতে ঘটনার সঙ্গে রটনাও মিশে যায়। তখন আসল-নকল খুঁজে বের করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এখানেও সেটা হয়েছে। একজনের কাছে জানতে চাইলাম, মিরপুরের নিউটন এখানে কী করছিলেন? একেকজন একেক কথা বলেন। পরে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া গেল আসল খবর।
সেই পুলিশ কর্মকর্তা বললেন, নিউটনের ছোট ভাই তপনের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল সাতমসজিদ রোডের একটি কমিউনিটি সেন্টারে। সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মিরপুরের বাসা থেকে সকালে ধানমন্ডি আসেন নিউটন। অর্কিড প্লাজার দোতলার কোনার দিকে শীতল নামের একটি সেলুন ছিল। চুল-দাড়ি কাটাতে সেখানে এসেছিলেন।
শীতল সেলুনের মালিক আলাউদ্দিন আমাকে বললেন, নিউটন এসেছিলেন বেলা ১১টার দিকে। ঠিক দুপুর ১২টার সময় তিনি নিচে নেমে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ইসমাইল নামের একজন দেহরক্ষী ছিলেন। তিনি নিচে নেমে গাড়িতে ওঠার সময় তিন যুবক তাঁকে অনুসরণ করে গাড়ির দরজা পর্যন্ত চলে যান। তিনি যখন গাড়িতে উঠবেন, ঠিক তখনই যুবকদের একজন তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি গুলি ছোড়েন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করেন নিউটন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নিউটনের গাড়িচালক মিজান এগিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। সন্ত্রাসীরা তাঁকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে।
অর্কিড প্লাজার দারোয়ান সাইদ আমাকে বললেন, গুলি করার পর তিন যুবক রাস্তা পার হয়ে উল্টো দিকে চলে যান। সেখানে সাদা রঙের একটি গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। যুবকের দল সেই গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায়।
নিউটন কেন খুন হলেন, সেটা বলার আগে তাঁর ফিরিস্তিটা একটু বলে নিই। ছায়েদুর রহমান নিউটনের বাবার নাম ওয়ালিউর রহমান। মিরপুর ১ নম্বরের জি ব্লকে তাঁদের আদি নিবাস। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাঁর পরিবারের সবাই লন্ডনপ্রবাসী। ’৮৯ সালে তেজগাঁও কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্রদলে যোগ দেন। তখন মিরপুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হন। কলেজের পর্ব শেষ করে লন্ডনে চলে যান। ’৯২ সালে ফিরে এসে মিরপুর থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হন। ’৯৬ সালে মহানগর কমিটিতে আসেন। সে সময় ছাত্রনেতা নাসির উদ্দীন পিন্টুর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। লাল্টু-পিন্টুর কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতিও হন নিউটন। পরে নাসির উদ্দীন পিন্টু তাঁর ছোট বোন ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টির সঙ্গে বিয়ে দেন। নিউটন দম্পতির চমক নামের একটি মেয়েও আছে।
নাসির উদ্দীন পিন্টুর সঙ্গে সখ্যর সুবাদে নিউটন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি মিরপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। একটি ধর্ষণ মামলায় জেলও খাটেন। সে সময় পুলিশ আমাকে বলেছিল, নিউটনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা আছে। এগুলোর মধ্যে একটি খুনের মামলাও ছিল। তবে নিউটন বলেছিলেন, এসব মামলা ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছিল। যা হোক, তার পরও তিনি ২০০২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে চারদলীয় জোট সরকারের মনোনয়ন পান। সেই নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। নিহত হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে ৭ মে কাউন্সিলর হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। এমনিতে নিউটন সব সময় চলতেন পুলিশি পাহারায়। তেজগাঁও কলেজে এমএ পরীক্ষা দেওয়ার সময়ও পুলিশ পাহারায় ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর তিনি পুলিশের পাহারা ছেড়ে নিজস্ব লোকজন নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। যত দূর শুনেছিলাম, পুলিশ সঙ্গে নিয়ে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়াতেন। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এর পরই পুলিশ প্রত্যাহার করা হয়।
পুলিশ ও বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছিলাম, নিউটন কেন খুন হলেন। মনে হয়েছিল, হয় নির্বাচনী কোনো কারণে অথবা পুরোনো কোনো বিরোধে তিনি খুন হয়েছেন। কিন্তু দুটোর কোনোটাই সত্যি হলো না। তিনি খুন হয়েছিলেন মিরপুর ১ নম্বর এলাকার কো-অপারেটিভ হকার্স মার্কেটের দখল নিয়ে বিরোধের জেরে। সে সময় মার্কেটটি দখলে নিতে চেয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী ও তাঁর দলের লোকেরা। তাঁরা এই দখল কবজায় রাখতে কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। কালা জাহাঙ্গীর তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর কিলার আব্বাসকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। নিউটন খুনের পর ২৭ মে কালা জাহাঙ্গীরের সহযোগী ভুট্টো পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে ভুট্টো বলেছিলেন, নিউটন হত্যাকাণ্ডে কালা জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তিনি নিজেও উপস্থিত ছিলেন।
নিউটন খুনের ঘটনায় তাঁর মা রাবেয়া বেগম বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনী প্রতিপক্ষ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রিপন হেরে যাওয়ার আক্রোশে আগা খান মিন্টু, রাহাত খান, মোশাররফ হোসেন মশুদের সহযোগিতায় নিউটনকে হত্যা করা হয়। পুলিশ এই মামলা তদন্ত করে ১৮ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়। আসামি শওকত, রুবেল ও আইয়ুব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। ২০০৬ সালের ২৪ মে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১৮ জনের মধ্যে দুজনকে খালাস দিয়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। পরে হাইকোর্ট ফাঁসি ও যাবজ্জীবন থেকে ছয় আসামিকে অব্যাহতি দেন। মজার বিষয় হলো, শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরেরও মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।
আজকের আষাঢ়ে নয় লিখতে গিয়ে মনে পড়ল নিউটনের সঙ্গে আমার সেই সাক্ষাতের কথা। তিনি বলছিলেন, যেকোনো সময় তিনি খুন হতে পারেন। তাঁর পেছনে বুলেট ঘুরছে। আমি তাঁকে বলেছিলাম, এসব ছেড়ে দেন, তাহলে ঝামেলা থাকবে না। তিনি বলেছিলেন, এটা একমুখী পথ, শুধু ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। নিউটন খুন হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল, তাঁর কথাই সত্যি হলো। তিনি আর বের হতে পারলেন না।
আরও পড়ুন:
দেশে বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখের মতো। তাদের সবাইকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিতে হবে। তবে এরপর প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা জমা দিতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর এমনটাই জানানো হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেফরিদপুরের মল্লিকপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে খাগড়াছড়ি পরিবহন ও গ্রিন এক্সপ্রেস বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের দুর্ঘটনাস্থলকে ‘ব্ল্যাক স্পট’ বা বারংবার দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতীয় তদন্ত কমিটি। মৃতুফাঁদে পরিণত ওই সড়কটির কাঠামোগত ত্রুটি সারানোসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করে জরুরি ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের
১০ ঘণ্টা আগেদেশের সব টিভি চ্যানেল ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় দিনে কমপক্ষে দুবার প্রচার করতে হবে ‘জুলাই অনির্বাণ’ ভিডিওচিত্র। আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কথা জানায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগ জনগণকে অবহিত করার লক্ষ্যে তথ্য..
১১ ঘণ্টা আগেনতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও অপর চার নির্বাচন কমিশনারের শপথ আগামী রোববার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রোববার বেলা দেড়টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাঁদের শপথ পাঠ করাবেন। সুপ্রিম কোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে এ কথা জানান।
১২ ঘণ্টা আগে