সড়কে জনস্রোত, কয়েক কিলোমিটার হেঁটে সমাবেশে মানুষ

নাজমুল হাসান সাগর, শিবচর (মাদারীপুর) থেকে
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২২, ১১: ৩৯
আপডেট : ২৫ জুন ২০২২, ১৩: ০২

মাদারীপুরসহ পদ্মার এপারের জনপদে গতকাল রাত নেমেছিল শুধুই প্রকৃতির নিয়মে। ভোরের আলো ফোটার আগেই রাতজাগা পাখির মতো প্রতিটি সড়কে নামে মানুষের কোলাহল। বাস, ট্রাকসহ নানা পরিবহনে সমাবেশে যোগ দিতে এসে গাড়িগুলো জড়ো হতে থাকে। সকাল ৬টা বাজতেই এই অঞ্চলের সড়কগুলো ভরে যায় সেতু উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করতে আসা যানবাহনে। একপর্যায়ে অচল হয় যায় সড়ক, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল যানবাহনগুলো। অগত্যা পায়ে হেঁটেই সমাবেশস্থলে রওনা করে হাজার হাজার মানুষ। সড়কগুলো রূপ নেয় জনসমুদ্রে।

পায়ে হেঁটে সমাবেশের দিকে এগিয়ে চলা উৎফুল্ল কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। ভোর ৫টায় মাদারীপুরের কালকিনি থেকে বাসযোগে সমাবেশস্থলে রওনা হন সোহাগ। থেমে থেমে বাস পাচ্চর বাজার পর্যন্ত এলেও এরপর আর কোনোভাবেই আগানো যাচ্ছিল না। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলের কাছাকাছি চলে এসেছেন তিনি। সোহাগ বলেন, ‘এসব কোনো বিষয় না। আজ আমাগো উৎসব। উৎসবের দিন কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়। আমার কাছেও আইজ সবকিছুই আনন্দের।’ 

অলিবা অলি নামে মধ্যবয়সী ব্যক্তিটি এসেছেন রাজৈর থেকে। তাঁর অভিজ্ঞতাও অনেকটা একই রকম। তবে তিনি হেঁটে এসেছেন শিবচর থেকে। কাওড়াকান্দি এলাকায় সড়কের ধারে যখন তাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছে, তখন তিনি নিজের ঘামে ভিজে আছেন। তবু আনন্দের কমতি নেই তাঁর অভিব্যক্তিতে। অলি বলেন, ‘এই সেতু আমাগো স্বপ্নের সেতু। সেতু উদ্বোধনের দিন কোনো কষ্ট নাই। সেতু না থাকায় আমাগো যে কষ্ট হইছে, তার কাছে আইজকার কষ্ট কিছুই না।’ 

অগত্যা পায়ে হেঁটেই সমাবেশস্থলে রওনা করে হাজারো মানুষশুধু মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী বা ফরিদপুর নয়; জলপথে অন্তত ৫০টি লঞ্চ নিয়ে বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী আর চাঁদপুর থেকেও এসেছে হাজার হাজার মানুষ। কোনো কষ্টকেই তারা কষ্ট মনে করছে না। বরগুনার পাথরঘাটা থেকে এসেছেন মেহেদি। তিনি বলেন, ‘ভোরে আইস্যা নামছি। সারা দিন থাকমু। ম্যালা মানুষ একলগে আইছি আনন্দ করতে করতে। উদ্বোধন হইলে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ হুইন্যা হেরপর লঞ্চে কইর‍্যা যামুগা।’ 

এদিকে সকাল ১০টার দিকে একপশলা বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকায়। এ সময় কলাপাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটতে দেখা যায় হাজার হাজার মানুষকে। এমন একজন জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি একটু পর থাইমা যাইব। তাই খাড়ায়া সময় নষ্ট করা যাইব না। যত আগে যামু, তত কাছে থাইকা সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনতে পারমু।’ 

রোদ, বৃষ্টি, তীব্র গরম কিংবা পরিবহনের সমস্যা—কোনোটা যেন রুখতে পারছে না এই অঞ্চলের মানুষদের। নারী, পুরুষ কিংবা শিশু সবার মনে এক অন্যরকম উদ্দীপনা, উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে। আজ এই জনপদের ঘরে ঘরে যেন ঈদের আনন্দ। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত