জুন পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক সামলাবে শিক্ষার্থীরা

  • আটটি ট্রাফিক বিভাগে সড়কে শৃঙ্খলায় যুক্ত হচ্ছেন ৬০০ জন শিক্ষার্থী
  • ৪ নভেম্বর নেমেছেন ৩০০ জন, আজ রোববার নামবেন বাকি ৩০০ জন
  • দিনে দুই শিফটে থাকবেন শিক্ষার্থীরা, প্রতিজন পাবেন ৫০০ টাকা সম্মানী
 রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৪৩
ফাইল ছবি

গত ৫ আগস্টের পর রাজধানীসহ সারা দেশে সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ও সচেতনতার জন্য ৪ নভেম্বর থেকে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে যুক্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী এই কাজে যুক্ত হবেন। তাঁদের সম্মানী দেওয়া হবে। এতে সরকারের ব্যয় হতে পারে প্রায় ৭ কোটি টাকা।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চালক ও সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে সচেতন করা শিক্ষার্থীদের মূল কাজ। তাঁরা সেটা করছেন। আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করতে প্রস্তাব করা হয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজধানীতে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের তিন হাজারের বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। অতিরিক্ত রিকশা ও গাড়ির চাপে বিভিন্ন সড়কে যানজট লেগেই থাকে। হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের।

গত ২১ অক্টোবর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে ‘ট্রাফিক পক্ষ ২০২৪’ অনুষ্ঠানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। একই অনুষ্ঠানে এমন কথা জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত বুধবার সন্ধ্যায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার বিষয়ে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক ফটো পোস্ট দেন তিনি। এতে লেখা হয়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পার্টটাইম হিসেবে যুক্ত হলো শিক্ষার্থীরা, জনমনে স্বস্তি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের সঙ্গে যুক্ত হলেন শিক্ষার্থীরা। সুযোগ মিলবে ৪ ঘণ্টা করে দুই শিফটে কাজ করার।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সূত্র জানায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রথমে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর একটি তালিকা পায় ডিএমপি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে শারীরিক পরীক্ষা শেষে তালিকার ৩০০ জনকে চূড়ান্ত করা হয়। তাঁদের এক দিনের প্রশিক্ষণে ট্রাফিক আইন ও ট্রাফিক শৃঙ্খলার নানা বিষয়ে ধারণা দিয়ে সড়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আরও ৩০০ শিক্ষার্থীকে শারীরিক পরীক্ষা শেষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার তাঁরাও যুক্ত হবেন।

ডিএমপি জানায়, ৪ নভেম্বর থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে প্রতিদিন ৬০ জন শাহবাগ, বাংলামোটর, পান্থপথ, ফার্মগেট, মৎস্য ভবন মোড় ও মগবাজার মোড়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দুই শিফটে কাজ করছেন। প্রথম শিফটে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ জন এবং দ্বিতীয় শিফটে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৩০ শিক্ষার্থী কাজ করছেন। প্রতি শিফটের প্রত্যেক শিক্ষার্থী পাবেন ৫০০ টাকা। ৬০০ শিক্ষার্থী যুক্ত থাকবেন ডিএমপির ৮টি ট্রাফিক বিভাগে। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাফিক বিভাগে সকালের শিফটে ৪০ ও বিকেলের শিফটে ৩৫ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে। ৬০০ জনের জন্য দিনে খরচ হবে ৩ লাখ টাকা। সম্মানী দেওয়া হবে সপ্তাহে সপ্তাহে। আগামী জুন পর্যন্ত তাঁদের যুক্ত রাখতে মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দিয়েছে ডিএমপি।

৬০০ জনের সম্মানী বাবদ দিনে ৩ লাখ টাকা লাগবে। এ হিসেবে আগামী জুন পর্যন্ত তাঁদের প্রতিদিন সড়কের শৃঙ্খলার কাজে যুক্ত করলে সম্মানীতে ব্যয় হবে প্রায় ৭ কোটি টাকা।

ট্রাফিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব পাওয়া ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের শিক্ষার্থী সুমি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতার জন্য তাঁদের সংকেত, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন নিয়ে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, শাহবাগ, বাংলামোটর, ফার্মগেট মোড়ে ট্রাফিক শৃঙ্খলায় কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের পরনে ভেস্ট ও গলায় ঝুলছে বাঁশি। রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনকে আইন মেনে চলতে চালকদের এবং বাসচালকদের সহকারীদের বলছিলেন তাঁরা। পথচারীদের সড়ক পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং ও পদচারী-সেতু ব্যবহারের অনুরোধ করা হচ্ছে।

ট্রাফিক শৃঙ্খলায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামছুল হক বলেন, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতাসহ এ ধরনের পরিবেশে সড়কে শিক্ষার্থীদের কাজে দেওয়া ঠিক নয়। বর্তমানে পুলিশের অবস্থা ও মানুষের আইন না মানার প্রবণতার কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ঠিক হলেও তাঁদের নিরাপত্তা আগে দেখতে হবে। যত দ্রুত তাঁদের রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া যায়, তত ভালো হবে। তিনি বলেন, ‘পুরোনো ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা তৈরি করা যেখানে সবার লক্ষ্য, আমরা সেখানে বেশ পিছিয়ে আছি। আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষ কমানো, বাড়ানো নয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত