Ajker Patrika

চার হাজার কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন

সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০: ৩৬
মো. আবদুর রহমান
মো. আবদুর রহমান

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মির্জা নাহিদা হোসেনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলা করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, বৈধ আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ৭২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭২ টাকার সম্পদ অর্জন ও নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৩ হাজার ৮৯১ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক এই মৎস্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।

আব্দুর রহমানের স্ত্রী ডা. মির্জা নাহিদা হোসেনের বিরুদ্ধে অন্য মামলাটি করা হয়েছে। আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬ কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮৭ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া ১৬টি ব্যাংক হিসাবে জমা ও উত্তোলনের মাধ্যমে মোট ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগ আনা হয়েছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহায়তা করায় আব্দুর রহমানকেও স্ত্রীর মামলায় আসামি করা হয়েছে।

দুদক সূত্রটি জানায়, সাবেক এই মৎস্যমন্ত্রী তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজ পরিবার ও স্বজনদের নামে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। নির্বাচনী আসন নিজের গ্রামের বাড়ি মধুখালীর কামালদিয়া এলাকায় স্ত্রী-কন্যাদের নামে কিনেছেন বিঘার বিঘা জমি। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাঁর একাধিক প্লট-ফ্ল্যাটসহ সম্পদের তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ আগস্ট সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমানসহ চার সাবেক এমপি ও মন্ত্রীর দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

গত ৬ অক্টোবর দুদকের অনুসন্ধান টিমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। তবে সর্বশেষ গত ৮ ডিসেম্বর সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল মিটিংয়ে লন্ডন থেকে সাবেক এই মন্ত্রীকে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া লন্ডনের রাস্তায় দলের কর্মসূচির লিফলেট বিতরণের ছবিও স্যোশাল মিডিয়ায় (অন্তর্জালে) এসেছে।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা মো. আব্দুর রহমান তাঁর পরিবারের চার সদস্যের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে সরকারি তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোতে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

চিঠিতে ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক ছাড়াও তাঁর স্ত্রী ডা. মির্জা নাহিদা হোসেন বন্যা, মেয়ে ইভানা রহমান, ইশরা রহমান ও ছেলে সামী রহমানের ব্যাংক হিসাবের সব লেনদেনের তথ্য দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আব্দুর রহমান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০২৪ তিন মেয়াদে ফরিদপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ আসনে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ-বাণিজ্য, কাবিখা-কাবিটার টাকা আত্মসাৎ, টেন্ডাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। ২০২৪ সালে আসনটি থেকে নির্বাচিত হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত