র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার যুক্তিটি হাস্যকর: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮: ৩৮

র‍্যাবকে কখনই বিরোধী দলকে দমনে ব্যবহার করা হয়নি। বরং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে সদস্য বা নেতৃত্বে ছিলেন এ রকম একাধিক ব্যক্তি মাদকের সঙ্গে জড়িত বা অন্য কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত, একাধিক ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে র‍্যাবের বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। ফলে র‍্যাবকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় এ যুক্তিটি হাস্যকর বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন এম শাহরিয়ার আলম।

র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বাংলাদেশের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশ অনেক কিছু করেছে এবং অনেক কিছু করছে। এটি নিশ্চিত যে এ বিষয়টিকে পুঁজি করে বাড়তি সুবিধা বা সস্তা রাজনীতি বন্ধ হয়ে গেছে। এটাকে কেন্দ্র করে বড় আকারের ষড়যন্ত্র এবং লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তা হালে পানি পায়নি। কারণ এর পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। ইউরোপের একজন সংসদ সদস্যকে দিয়ে চিঠি লিখিয়ে বিএনপির আরেক নেতা বলেছিলেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি পরিষ্কার করেছে যে এটি ব্যক্তিগত একজনের মতামত।’

বিষয়টি নিয়ে ইইউর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ইইউ সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কার্যকরী বৈঠক হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতে ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি। নিষেধাজ্ঞার অন্য কোথাও কোন ধরনের প্রভাব নেই। আমরা এ বিষয়ে গত এক দেড় মাস ধরে যে কাজ করেছি তাতে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও এ নিষেধাজ্ঞার কোন বিস্তার লাভের সম্ভাবনা নেই। বেশ কিছু উড়ো খবর বের হয়েছে বাড়তি মানুষকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। তবে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে র‍্যাবের ওপর, তাদের সুরক্ষা দেওয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সে জায়গা থেকে আইনি বিষয়গুলো দেখছি।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা জানতে চাচ্ছি ঠিক কি কারণে মার্কিন দুটি দপ্তর থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর এর ব্যাপ্তি কতটুকু। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। যার উত্তর একটু সময় নিয়ে দেবে মার্কিনিরা। আমরা আইনি প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপে রয়েছি। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে যে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।’

আগে কেন র‍্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মার্কিন চিঠি আমলে নেওয়া হয়নি? এর উত্তরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞায় বলা হয়েছে, র‍্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য। এ যুক্তিটি হাস্যকর। টেকনাফের যে ঘটনাটি ঘটেছিল, সে ভদ্রলোক আওয়ামী লীগ করত। এ ছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে সদস্য বা নেতৃত্বে ছিলেন এ রকম একাধিক ব্যক্তি মাদকের সঙ্গে জড়িত বা অন্য কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে র‍্যাবের বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশে বসেও বিরোধী দল দমনে র‍্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে কোন উদাহরণ নেই।’

জাতিসংঘের দেওয়া গুম হওয়া ব্যক্তির তালিকার বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৭০ / ৮০ জনের তালিকার কথা বলা হয়। এর মধ্যে অর্ধেকের রাজনৈতিক পরিচয় হচ্ছে সরকার দলীয় সমর্থক। র‍্যাব যদি বিরোধী দল দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে, তাহলে কেন সরকার দলীয় মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে কথিত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন একরামুল হক। একরামুল হককে গুলি করার সময়ে ফোনে তাঁর দুই মেয়ে তাহিয়াত হক ও নাহিয়ান হক। একরামুল হককে গুলি করার ঠিক আগ মুহূর্তে তাঁর মেয়ে বলছিলেন আব্বু তুমি কাদঁছো কেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মিশনগুলোর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন করলে এম শাহরিয়ার আলম বলেন, এখানে কারও দায়িত্বের কোন অবহেলা আছে বলে আমার মনে হয় না। এ সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ইইউর সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের বিষয়ে শাহরিয়ার বলেন, এপ্রিল মাসে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক আছে। সে সময়ে দুই দেশের বাণিজ্য সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। তবে নিয়মিত এজেন্ডার বাইরে বাড়তি এজেন্ডা যুক্ত হয়েছে। আর আমাদের জন্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সবচেয়ে অগ্রাধিকার বিষয়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত