Ajker Patrika

সুশীলদের চোখ সুদূর পশ্চিমে: সংসদে আইনমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ৪৮
সুশীলদের চোখ সুদূর পশ্চিমে: সংসদে আইনমন্ত্রী

দেশের সুশীল সমাজের চোখ সুদূর পশ্চিমে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল-২০২৩’ বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় এ মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘কিছু মানুষ যাঁরা নিজেদের সুশীল বলে মনে করেন, তাঁরা নিজেদের জনগণের অভিভাবক মনে করেন। কিন্তু কতটুকু জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তারা নানা নির্দেশনা দেন। তাঁরা দেশের উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে তাকান না। তাঁরা তাকান সুদূর পশ্চিমে। সেখান থেকে যে বাণী আসে, সেভাবে তাঁরা এখানে ছবক দেওয়ার চেষ্টা করেন।’

এর আগে সংসদে দেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মতামত দেওয়া সুশীল সমাজের কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন দরকার। সে জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠান আছে। টিএন শেসনের (ভারতের সাবেক সিইসি) মতো একজন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন থাকবে—এটা আমরা আশা করি।

‘মেরুদণ্ড সোজা করে তারা নির্বাচন করবে। সরকার নির্বাচনের সময়ে রুটিন দায়িত্ব পালন করে। এটা নিয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ বারবার জোর করে সংসদকে অকার্যকর, সংসদ চলে না—নানা কথা বলেন। এটা হলে তো নির্বাচন লাগে না। ভারতের নির্বাচন নিয়ে তো কেউ কোনো দিন প্রশ্ন করে না। তাহলে আজকের বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্ন কেন?’

রুস্তম আলী ফরাজীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। এ দেশের জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক করবে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হলে সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ীই নির্বাচন হবে।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গত সপ্তাহে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে রিভিউ পিটিশন করা হয়েছে তার শুনানি হয়েছে। উচ্চ আদালতের অবকাশ শেষে আবার শুনানি হবে। সেই শুনানিতে এর সমাপ্তি ঘটবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ এখন বিচারকদের পদত্যাগের বিধানটি নেই।’

রুস্তম আলী ফরাজী আরও বলেন, ‘আমরা চাই ফ্রি, ফেয়ার ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে। নিরাপত্তা পাবে। প্রধানমন্ত্রী এটা চান। দেশবাসী চান। বিশ্ববাসীও এটা চায়। এর বাইরে আর কিছু হবে না। এটা সবাইকে মানতে হবে। কেউ যদি সিট না পায় জোর করে সিট দেওয়া যায় না।’ প্রার্থী হতে স্বতন্ত্র সদস্যের ভোটারদের সমর্থন থাকার বাধ্যবাধকতা সংবিধানের ব্যত্যয় উল্লেখ করে তা সংশোধনের দাবিও করেন ফরাজী।

বিলের আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন নিয়ে একটি মানসিক সমস্যা হয়। যাঁরা নির্বাচিত হন তাঁদের কোনো নির্বাচনী এলাকা আছে কি না? এই বিষয়টি তাঁরা বুঝতে পারেন না। এটা নিয়ে তাঁরা নিজেরাও বিব্রত বোধ করেন। নির্বাচনে মহিলাদের বেশিসংখ্যক নমিনেশন দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যবাধকতা করা যায় কি না সেই প্রস্তাব দেন এই এমপি।

মুজিবুল হক আরও বলেন, উচ্চ আদালতের তিনজন বিচারপতিকে দুর্নীতির অভিযোগে দায়িত্ব পালন থেকে অনেক দিন ধরে বিরত রাখা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা বেতন ভাতা পাচ্ছেন। এই বিষয়টির সুরাহা করা প্রয়োজন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘অনেকেই বলেন দীর্ঘদিন ধরে নারীরা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে নির্বাচন করে জনপ্রিয়, তাঁদের কি দরকার আছে সংরক্ষিত আসনের। তাঁদের দুর্বল বলা যায় না। নারীরা অনেক বছর ক্ষমতায় কিন্তু সবাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধুরী কিংবা শিরীন শারমিন চৌধুরী হতে পারবেন না। আরও এক যুগে হবে কি না জানি না। এ জন্য সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়ানোর আহ্বান জানাই।’

রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব, যদি সম্ভব হয় মহিলাদের সিট বাড়ানো হোক। মহিলারাই একমাত্র এ দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সৌন্দর্যের ধারক ও বাহক। তাঁরা কোথাও না থাকলে সৌন্দর্যহানি হয়। সংসদের অধিবেশন কক্ষ দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে যদি নারীরা না থাকত তাহলে এ সংসদ কি এত সুন্দর বা পরিপূর্ণ হতো?’

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি অস্পষ্টতা, আতঙ্ক ও হতাশা বিরাজ রয়েছে। অনেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কখন ও কীভাবে নির্বাচন হবে—এ বিষয়ে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করছে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন বিএনপি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিল। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার দাপটে নির্বাচন করেছে। সরকার গঠনের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার সেই সংখ্যক এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৮ সালে অধিকাংশ জায়গায় আগের রাতে ভোট হয়েছে। এই নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে মোকাব্বির খান আরও বলেন, ‘সংসদে বিল পাস হয়েছে দলিল যার জমি তাঁর। সংবিধান অনুযায়ী জনগণ দেশের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্রের এই মালিক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা দলিল নিয়ে বসে আছে কিন্তু মালিকানা তাদের হাতে নেই। সোনার বাংলার গণতন্ত্র আজ কোথায় যাচ্ছে?’

বিল পাস
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ বাড়িয়ে আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) বিল–২০২৩’ পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলে বলা হয়েছে, সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীদের জামানত হবে ২০ হাজার টাকা। বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসন শূন্য হলে ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান আছে। সেখানেও সংশোধনী আনা হয়েছে। বিলে আসন শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া নারী আসন বণ্টন পদ্ধতিতেও সংশোধন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত