Ajker Patrika

আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজ দেখতে চায় বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজ দেখতে চায় বাংলাদেশ

আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজ দেখতে চায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ মনে করে, আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক ও বহুত্ববাদী সমাজ প্রতিষ্ঠাই আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে পারে। আজ সোমবার বিকেলে ‘আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বাংলাদেশের অবস্থানের কথা তুলে ধরে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।

সোমবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন, এসআইপিজির প্রফেশনাল ফেলো শহিদুল হক, ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফারুক আহমেদসহ অন্যরা আলোচনায় অংশ নেন। ওয়েবিনারে এসআইপিজির সিনিয়র ফেলো সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। 

আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ের তিনটি জটিল মাত্রা রয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তালেবানরা আফগান সমাজের অংশ। তারা আফগানিস্তানেই থাকবে। আঞ্চলিক দায়িত্বশীলতা থেকে ‘তরিকা প্লাস ফরম্যাট’ তালেবান-আফগান সমঝোতার অংশ হিসেবে দোহায় আলোচনা চলতে পারে। তবে এ সমঝোতা ভেস্তে গেলে প্রতিবেশী দেশগুলো নিজ স্বার্থ রক্ষায় (নিজেদের মতো করে) সমাধানে এগিয়ে আসতে বাধ্য হবে। দেশটিতে সন্ত্রাসবাদ চলতে থাকলে তা আফগানিস্তান ও অঞ্চলে নতুন করে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি করবে।’ 

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতায় বিশ্বাসী। বাংলাদেশ নিজেকে আফগানিস্তানের সম্ভাব্য উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে। নারীর ক্ষমতায়ন, মৌলিক শিক্ষা, জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা, পয়োনিষ্কাশন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের মতো বাংলাদেশের ভালো কাজগুলো আফগানিস্তানের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজি ঢাকা। সামনের দিনগুলোতে অভিন্ন স্বার্থে একত্রে কাজ করে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরও ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হবে। 

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশি এনজিও আফগানিস্তানে ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য সামাজিক সেবা দিয়ে বিশ্ব সমাদৃত হয়েছে। ব্র্যাক বেশ লম্বা সময় ধরে আফগানিস্তানে কাজ করে আসছে। আফগানিস্তানের মানুষের সহযোগিতায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর আগ্রহ রয়েছে বাংলাদেশের। আর আফগানিস্তানের গঠন ও এর ভবিষ্যৎ দেশটির মানুষই ঠিক করবে বলে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশটিতে গণতান্ত্রিক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

দীর্ঘ দিন বিদেশি শক্তির দখলে থাকলেও আঞ্চলিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আফগানিস্তানের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, স্থলবেষ্টিত দেশ হলেও দেশটির অর্থনীতির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এর অবস্থান সিল্ক রোডের সংযোগস্থলে। আর চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি), রাশিয়ার টিএপিআইয়ের মতো উদ্যোগগুলো আফগানিস্তানের পাশ দিয়েই গেছে। এই প্রতিটি উদ্যোগেরই রয়েছে সেই সম্ভাবনা, যা আফগানিস্তানের অর্থনীতিকে আবারও সঠিক স্থানে নিয়ে আসতে পারে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার সংযোগ হিসেবে এগিয়ে এসে নিজেকে ঘুরিয়ে নিতে পারে আফগানিস্তান। তবে সার্বিক সম্ভাবনাগুলো নির্ভর করছে আগামী দিনগুলোতে আফগানিস্তান কতটা নিজেকে স্থিতিশীল রাখতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত