সুদান থেকে বাংলাদেশিদের সৌদি আরবে নেওয়া হবে: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ২০: ০৬
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ২২: ৫৫

সুদানে চলমান সংঘাতে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। দেশে ফিরতে আগ্রহী তালিকাভুক্ত ৭০০ বাংলাদেশিকে আগামী ৩ অথবা ৪ মের মধ্যে পোর্ট সুদান থেকে জেদ্দায় নেওয়া সম্ভব হবে। আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে এক বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এসব বলেন। এ সময় সুদানে থাকা সব প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিককে নিবন্ধন করে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ জানান তিনি। 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশিদের খার্তুমের উপকণ্ঠ থেকে বাসে করে ৮৫০ কিলোমিটার দূরে পোর্ট সুদানে নেওয়া হবে। সেখান থেকে সৌদি জাহাজ করে তাদের জেদ্দায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। প্রক্রিয়াটি তদারকি করার জন্য পোর্ট সুদানে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এবং তার সহকর্মীরা অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, জেদ্দায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশিদের সাধারণ ফ্লাইটে করে ফেরত আনা হবে। যদি প্রয়োজন হয় চার্টার্ড ফ্লাইটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ বিমান এবং বিমানবাহিনী উভয়ই প্রস্তুত আছে। 

মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমরা যখনই পারি যত জনকে পারি নিয়ে আসব। নির্দিষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশি না হলে পাঠাব না বিষয়টি সেরকম নয়। উড়োজাহাজের ব্যবস্থা সাপেক্ষে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত আনা হবে। সৌদি আরব বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য জাহাজ দিচ্ছে এবং জেদ্দায় বাংলাদেশিদের থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করবে।’

গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে সুদানে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বাংলাদেশি আছে। তাদের বেশির ভাগই দেশটিতে চাকরি ও ব্যবসা করেন। এরই মধ্যে ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসার জন্য নিবন্ধন করেছেন। 

এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, ‘যারা এখনো ফেরত আসার জন্য নিবন্ধন করেননি, তাদের অনুরোধ করছি নিবন্ধন করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সবাইকে নিরাপদে ফেরত আনার জন্য এবং সেই চেষ্টা করছি।’ 
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৩৫ জন বাংলাদেশি যারা সৌদি আরব বা অন্য দেশের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তারা কোম্পানিগুলোর উদ্যোগে নিরাপদ জায়গায় রয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৪ জন জেদ্দায় এবং একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছেন। 

খার্তুমের উপকণ্ঠ যেখান থেকে বাস ছাড়বে সেই জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গা থেকে বাংলাদেশিদের বাসে ওঠানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজ যে জায়গা নিরাপদ দুই দিন পরে সেটি নিরাপদ নাও থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’ 

সুদানের হটলাইনে সংযোগ না পাওয়া প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে আমরা ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যুক্ত হতে বলেছিলাম। কিন্তু তার সংযোগ বারবার বিঘ্নিত হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে যারা সংযোগ পাচ্ছে না তারা যেন তাদের ফোন নম্বরসহ একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে রাখে।’ 

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সুদানে অনেকে থাকতে চান তবে সেখানে থাকা এখন নিরাপদ নয়। ওখান থেকে চারপাশে মরুভূমি। তাই অন্যত্র যাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার। তাই তারা খার্তুমের নম্বরের পাশাপাশি সৌদি আরব, ইথিওপিয়া ও আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দূতাবাসে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের ফিরিয়ে আনব।’ 

সুদান থেকে দেশে ফেরাদের কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ডেটাবেইস তৈরি করবে বলে জানান শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ফিরে আসাদের জন্য ডেটাবেইস প্রস্তুত করা হবে। তারা যেহেতু অসময়ে ফেরত আসছেন, তাই তাদের কর্মস্থানের ব্যবস্থার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। 

খার্তুমে বাংলাদেশ মিশন রাখার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা সময়ই বলে দেবে। একজন বাংলাদেশি থাকা পর্যন্ত মিশন সেখানে কাজ করবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত