শহীদুল ইসলাম, ঢাকা
আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে লেখার কারণে বিসিএসের ২৫ ক্যাডারের ৯ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে তাঁদের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’—বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চাকরির শুরুতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) সব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ওই কর্মকর্তারা নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় থেকেই তাঁদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফেসবুকে লেখা ৯ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে। ২৫ ক্যাডারের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়ার পর এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজ উদ্যোগে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে মতামত দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর প্রতিবাদ জানাতে কলমবিরতি, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে শতভাগ কোটার দাবিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান এবং সমাবেশ করেন। প্রথম থেকেই নিজেদের অবস্থানের পক্ষে পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষ।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিপরীতে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পাল্টা অবস্থানের পর গত ৩১ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে সতর্ক করে কঠোর বার্তা দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলমবিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচির উল্লেখ করে বলা হয়, এতে সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করা হচ্ছে, যা আচরণ-সংক্রান্ত বিধিমালার পরিপন্থী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ কঠোর অবস্থানের পর উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা মাঠের কর্মসূচি থেকে সরে এলেও ফেসবুকে সরব থাকেন।
যেভাবে বরখাস্ত করা হয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা-১ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে কর্মকর্তাদের প্রকৃত নাম ব্যবহার না করে তাঁরা ফেসবুকে যে নামে লিখেছিলেন সেই নাম এবং স্ট্যাটাস তুলে ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
২ জানুয়ারি নেত্রকোনার সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন ফকির এবং বরিশালের সরকারি ফজলুল হক কলেজের শিক্ষক শাহাদাৎ উল্লাহ কায়সারকে বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ ডিসেম্বর এবং আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
১ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং মৎস্য অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে বরখাস্ত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৩ ও ২৯ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে পৃথক চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মো. এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় একই মন্ত্রণালয়।
২ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী সরকারি কলেজের শিক্ষক অসীম চন্দ্র সরকার, সিলেটের সরকারি কলেজের শিক্ষক তানভীর খান এবং মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আরেফীনকে বরখাস্ত করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তার বাইরে অসদাচরণের অভিযোগে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজকে গত ৩০ ডিসেম্বর বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন। তিনিও আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন। একটি সূত্র জানায়, সাদিকুর রহমান ফেসবুকে লেখার আগে থেকেই একটি মামলার আসামি হওয়ায় পর ওএসডি ছিলেন।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছিল, তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের একটি সিক্রেট গ্রুপের আলোচনার স্ক্রিনশট নিয়ে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকজন ওই গ্রুপে যুক্ত হয়ে এ কাজ করেছেন। আমার মতো আরও ২০ জনের তালিকা তৈরি করেছেন তাঁরা।’
জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরাসরি বরখাস্ত করার পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ বলে ৫ জানুয়ারি ই-মেইল পাঠানো হয়। সাধারণ ডাকে চিঠি পান ৯ জানুয়ারি। এতে ১০ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাতে বলা হয়।
বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনিয়ম বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে যদি চাকরি হারাতে হয়, তাহলে তো আর কেউ এসব নিয়ে কথা বলবে না। প্রশাসন ক্যাডারের অনেকেই তো ফেসবুকে প্রকাশ্যে লিখেছেন। তাঁদের কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি।’
অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে মন্ত্রণালয়টির ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা-১-এর উপসচিব জামিলা শবনম গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়গুলো যদি এগুলো খেয়াল করে নিজেরা ব্যবস্থা নিত, তাহলে আমাদের চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছিল না বলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাদের চিঠি দিতে হয়েছে।’
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তো ব্যবস্থা নিতে বলেছিল, তারা তো ফাঁসি দিতে বলেনি। পিঁপড়া মারার জন্য তো হাতি মারার সাজা দেওয়া যায় না। কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারত, ডেকে কথা বলতে পারত, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া যেত। এসবের কিছুই না করে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
মফিজুর রহমানের দাবি, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ইগোর (অহংবোধ) কারণেই ‘ছোট অপরাধে’ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের অন্তত ২২ জন কর্মকর্তা আজেবাজে ভাষায় ফেসবুকে লিখেছেন, সেই ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে; কিন্তু তাঁদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা থাকায় অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আইন উপদেষ্টার সাক্ষাতের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।’
আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে লেখার কারণে বিসিএসের ২৫ ক্যাডারের ৯ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁদের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে তাঁদের সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্তের প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘ক্যাডার যার মন্ত্রণালয় তার’—বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চাকরির শুরুতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) সব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ওই কর্মকর্তারা নিজ নিজ নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় থেকেই তাঁদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি এবং শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ফেসবুকে লেখা ৯ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে ‘অসদাচরণের’ অভিযোগে। ২৫ ক্যাডারের আরও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চিঠি দেওয়ার পর এখন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজ উদ্যোগে আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে মতামত দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে।
উপসচিব পুলের কোটা নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর প্রতিবাদ জানাতে কলমবিরতি, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে শতভাগ কোটার দাবিতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাও সচিবালয়ে নজিরবিহীন অবস্থান এবং সমাবেশ করেন। প্রথম থেকেই নিজেদের অবস্থানের পক্ষে পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে উভয় পক্ষ।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিপরীতে ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পাল্টা অবস্থানের পর গত ৩১ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে সবাইকে সতর্ক করে কঠোর বার্তা দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, কলমবিরতিসহ বিবিধ কর্মসূচির উল্লেখ করে বলা হয়, এতে সরকারি কর্মচারীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করা হচ্ছে, যা আচরণ-সংক্রান্ত বিধিমালার পরিপন্থী। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ কঠোর অবস্থানের পর উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা মাঠের কর্মসূচি থেকে সরে এলেও ফেসবুকে সরব থাকেন।
যেভাবে বরখাস্ত করা হয়
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা-১ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে কর্মকর্তাদের প্রকৃত নাম ব্যবহার না করে তাঁরা ফেসবুকে যে নামে লিখেছিলেন সেই নাম এবং স্ট্যাটাস তুলে ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
২ জানুয়ারি নেত্রকোনার সরকারি হাজী আব্দুল আজিজ খান ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন ফকির এবং বরিশালের সরকারি ফজলুল হক কলেজের শিক্ষক শাহাদাৎ উল্লাহ কায়সারকে বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৯ ডিসেম্বর এবং আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবকে চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
১ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের আটোয়ারীর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং মৎস্য অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলামকে বরখাস্ত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ২৩ ও ২৯ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে পৃথক চিঠি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মো. এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ৩০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে চিঠি দেয় একই মন্ত্রণালয়।
২ জানুয়ারি বগুড়ার গাবতলী সরকারি কলেজের শিক্ষক অসীম চন্দ্র সরকার, সিলেটের সরকারি কলেজের শিক্ষক তানভীর খান এবং মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলামকে বরখাস্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আরেফীনকে বরখাস্ত করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তার বাইরে অসদাচরণের অভিযোগে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজকে গত ৩০ ডিসেম্বর বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন। তিনিও আন্তক্যাডার দ্বন্দ্ব নিয়ে ফেসবুকে লিখেছিলেন। একটি সূত্র জানায়, সাদিকুর রহমান ফেসবুকে লেখার আগে থেকেই একটি মামলার আসামি হওয়ায় পর ওএসডি ছিলেন।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছিল, তাঁদের কারণ দর্শানোর নোটিশ না দিয়েই বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের একটি সিক্রেট গ্রুপের আলোচনার স্ক্রিনশট নিয়ে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকজন ওই গ্রুপে যুক্ত হয়ে এ কাজ করেছেন। আমার মতো আরও ২০ জনের তালিকা তৈরি করেছেন তাঁরা।’
জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরাসরি বরখাস্ত করার পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’ বলে ৫ জানুয়ারি ই-মেইল পাঠানো হয়। সাধারণ ডাকে চিঠি পান ৯ জানুয়ারি। এতে ১০ জানুয়ারির মধ্যে তাঁকে এ বিষয়ে নিজের বক্তব্য জানাতে বলা হয়।
বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনিয়ম বা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে যদি চাকরি হারাতে হয়, তাহলে তো আর কেউ এসব নিয়ে কথা বলবে না। প্রশাসন ক্যাডারের অনেকেই তো ফেসবুকে প্রকাশ্যে লিখেছেন। তাঁদের কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি।’
অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে মন্ত্রণালয়টির ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা-১-এর উপসচিব জামিলা শবনম গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়গুলো যদি এগুলো খেয়াল করে নিজেরা ব্যবস্থা নিত, তাহলে আমাদের চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছিল না বলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমাদের চিঠি দিতে হয়েছে।’
আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তো ব্যবস্থা নিতে বলেছিল, তারা তো ফাঁসি দিতে বলেনি। পিঁপড়া মারার জন্য তো হাতি মারার সাজা দেওয়া যায় না। কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারত, ডেকে কথা বলতে পারত, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া যেত। এসবের কিছুই না করে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
মফিজুর রহমানের দাবি, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ইগোর (অহংবোধ) কারণেই ‘ছোট অপরাধে’ অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ক্যাডারের অন্তত ২২ জন কর্মকর্তা আজেবাজে ভাষায় ফেসবুকে লিখেছেন, সেই ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে; কিন্তু তাঁদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা থাকায় অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে দাবি করেন মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আইন উপদেষ্টার সাক্ষাতের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।’
এশিয়াজুড়ে নরওয়ের পণ্য বিপণনের জন্য বাংলাদেশ হাব হিসেবে গড়ে তুলতে নরওয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হাকোন আরল্যান্ড গুলব্রান্ডসেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এই আহ্বান
১ ঘণ্টা আগেজাতীয় সংসদের সঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং একই সঙ্গে সব স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। আজ রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে এ কথা জানান তিনি...
২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য রেখার বিভিন্ন জায়গায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছিল, তাতে বাধা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এই তথ্য...
৩ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও সমন্বয়ক রাসেল আহমেদকে অবরুদ্ধ করে হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার বিকেলে নগরের ওয়াসা মোড়ে একটি অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
১৭ ঘণ্টা আগে