বয়ানে দুর্নীতি, মাদক ও জঙ্গিবাদের বিপক্ষে বলুন: ইমামদের প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ২২

মসজিদের ইমাম-খতিবসহ আলেমদের বয়ানে দুর্নীতি, মাদক, জঙ্গিবাদ, নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে আরও বেশি করে আলোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চতুর্থ পর্যায়ে নবনির্মিত আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, অহেতুক মিথ্যা কথা গুজব ছড়ানো, গৃহকর্মী বা অধীনস্থদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা, দুর্নীতি ইত্যাদি সমস্যা সমাজ থেকে দূর করার জন্য মসজিদে যখন আপনারা খুতবা দেন তখন যদি আপনারা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি করে বলেন, বোঝান তাহলে কিন্তু মানুষ এটা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে জুমার নামাজের পূর্বে যে খুতবা দেওয়া হয় সেখানে এই বিষয়গুলো মানুষের সামনে ভালোভাবে তুলে ধরা দরকার।

মসজিদের ইমাম-খতিব, আলেম-ওলামাগণকে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তাই তাঁদের কথার গুরুত্ব রয়েছে বলেও জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের যে সমস্ত সমস্যাগুলো দেখা দিচ্ছে—যেমন মাদকাসক্তি, একটা মাদকাসক্ত ছেলে–মেয়ে যদি পরিবারে থাকে তবে সেই পরিবারটা একেবারে ধ্বংসের পথে চলে যায়। যাতে কেউ এই মাদকাসক্ত না হয়।’ 

ইমামদের বয়ানে জঙ্গিবাদ বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি অনুরোধ করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাদের কোমলমতি ছেলেদের বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যায়। এদিকে যাতে তাদের নিয়ে যেতে না পারে, তারা যাতে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। ইসলাম ধর্ম যে শান্তির ধর্ম আর মানুষ খুন করলে কখনো বেহেশতে যাওয়া যায় না, নিরীহ মানুষকে খুন করলে বরং দোজখের আগুনে পুড়তে হয়। কাজেই মানুষের মাঝে এই বিষয়টা সচেতন করতে হবে।’ 

প্রত্যেক পরিবারে ছেলে–মেয়েরা যেন সৎ পথে থাকে, ভালোভাবে চলে, লেখাপড়া শেখে মানুষের মতো মানুষ হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের সঙ্গে যাতে কেউ জড়িত হতে না পারে সেদিকে আপনারা যদি একটু বিশেষভাবে দৃষ্টি দেন। আমি মনে করি আমরা জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি ভবিষ্যতে এটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারব।’ 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্ম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ আমাদের। ইসলাম ধর্মও আমাদের সেটাই শেখায়-অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের সহনশীল আচরণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ভূখণ্ডের বিভিন্ন জাতি ধর্ম–বর্ণ যারা বসবাস করে। সবারই সমান অধিকার আছে যার যার ধর্ম পালন করার। অন্যের ধর্মে আঘাত দেওয়া—এটা মোটেই সমীচীন নয়, ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষা দেয় না। কারণ ইসলাম হচ্ছে মানবতার ধর্ম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম ধর্ম, সেই কথাটাই আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।’ 

যে ব্যক্তি কোনো সংখ্যালঘুকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না মহানবী (সাঃ)–এর এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য মাঝে মাঝে আমরা দেখি আমাদের কিছু মানুষ হয়তো কোনো ধর্ম বা আমাদের ইসলাম ধর্মেই হয়তো কেউ অন্য মতাবলম্বী আছে তাদের ওপর আঘাত হানে যেটা সম্পূর্ণভাবে নবী করিম (সাঃ) এর চিন্তা-চেতনা, আদর্শ এবং আমাদের কোরআন শরিফে যে নির্দেশনা দেওয়া আছে তার পরিপন্থী।’ 

ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রচার ইসলামি শিক্ষা আরও যাতে উন্নত ধরনের হয় সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাকে অনেকে অবহেলার চোখে দেখত। আমরা এটার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা ডিজিটাল কোরআন শরিফ করে দিয়েছি। ইন্টারনেটে মানুষ এটা শুনতে পারবে।’ 

হাওর অঞ্চলে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ইমামদের খুতবা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে বলেও শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন। এ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আমরা এখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখানে দীর্ঘদিন এই ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।’ 

নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে সরকার। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি, চলতি বছরে ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে ৫০টি এবং গত ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। চার ধাপে এখন পর্যন্ত মোট ২০০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা। বাকি মসজিদগুলোর নির্মাণকাজও শেষের দিকে। 

উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং সিলেটের বিশ্বনাথের মডেল মসজিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমাম, মুসল্লিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান। গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। 

এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ উপলক্ষে প্রকাশিত মডেল মসজিদের লোগো সংবলিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্তকরণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত