এক যুগে অবৈধপথে ইউরোপে গেছেন ৬২ হাজার বাংলাদেশি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২১, ২২: ২০

এক যুগে অবৈধপথে ইউরোপ গেছেন অন্তত ৬২ হাজার বাংলাদেশি। আর এ সময়ে করা মামলার পাঁচ হাজার এখনো ঝুলে আছে, সাজা হয়নি এক শতাংশ মামলাতেও।

এছাড়া ইদানীং মানবপাচারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করছে যে দেশগুলোর মানুষ, বাংলাদেশ এখন সেই তালিকায় সবার শীর্ষে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ৩ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশি এভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন।

মানব পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসকে কেন্দ্র করে ব্র্যাকের আয়োজিত ওয়েব সেমিনারে এ তথ্য উঠে এসেছে।

শুক্রবার (৩০ জুলাই) আন্তর্জাতিক মানব পাচার বিরোধী দিবস। ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ৩০ জুলাই দিনটিকে মানব পাচার বিরোধী দিবস ঘোষণা করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর পথ দেখায়’। এ উপলক্ষে ওয়েবে ‘মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নাছিমা বেগম।

এ ছাড়া জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিএসএম জাফরউল্লাহ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানবপাচার বিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমানসহ সরকারি বেসরকারি সংস্থার সংশ্লিষ্টরা সেমিনারে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ। 

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য বলছে, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর হয়ে যারা ইউরোপে যাচ্ছেন তাঁদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪০। অবশ্য শুধু ইউরোপ নয়, করোনা মহামারির মধ্যেও শ্রম অভিবাসনের নামে মানবপাচার কিংবা ভারতে নারী–কিশোরী পাচার থেমে নেই। বরং এসব ক্ষেত্রে এখন সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নাছিমা বেগম বলেন, মানব পাচার মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে সজাগ। দায়িত্বরত সবাইকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। 

সম্প্রতি ভারতে কিশোরী পাচারের ঘটনা উল্লেখ করে নাছিমা বেগম বলেন, কী করে তাঁরা ভারতীয় নানা ধরনের পরিচয় কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন? ভ্রমণ ভিসায় কী করে এত লোক চলে যাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। এত এত পাচারকারী কিন্তু মানবপাচার আইনে নয় বছরে ৩৬টি মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হলো কেন? অপরাধীদের বিচার করতে হবে। মামলার বিচার বাড়াতে হবে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম জেনে বুঝে দক্ষ হয়ে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিএসএম জাফরউল্লাহ পাচার রোধে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। 

মানব পাচার মামলা ঝুলে থাকার বিষয়ে সিআইডি মানবপাচার বিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরকার পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ, কারণ সব তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। আবার অনেক মামলার বাদী বা ভুক্তভোগীকেই পাওয়া যায় না। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যারা মানব পাচারের শিকার তাঁরা কোনো অভিযোগ করেন না। তবে পুলিশ দেশে–বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে।

অনুষ্ঠানে মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিভাবক বিষয়ক পরিস্থিতি তুলে মাইগ্রেশন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ আজ সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার দিক থেকে প্রথম, এটি আমাদের জন্য লজ্জার। বাংলাদেশের সঙ্গে এই তালিকায় আছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, সুদান কিংবা ইরিত্রিয়া। এই দেশগুলো যুদ্ধ বা দারিদ্র্য পীড়িত। বাংলাদেশের অবস্থা কিন্তু সেটি নয়। তারপরেও আমাদেরে লোকজন এভাবে ইউরোপে যাচ্ছে। আবার শ্রম অভিবাসনের নামে ভিজিট ভিসায় দুবাই যাচ্ছে লোকজন। ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে নারী ও কিশোরীরা। রোহিঙ্গারাও পাচার হয়ে যাচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত