বর্জনকারীদের নিয়ে নির্বাচন করলেই কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, প্রশ্ন দীপু মনির 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ২১: ২৯

সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, প্রতি পাঁচ বছর পর একদিনের নির্বাচনের সন্তুষ্টি কি গণতন্ত্র নিশ্চিত করে? বিশেষত যারা নির্বাচনের জয়ের নিশ্চয়তা ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে পণ করেছেন, জনগণের রায়ের প্রতি আস্থাহীনতার কারণে নির্বাচন বর্জনের পথে বারবার হাঁটেন, তাঁদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করলেই কি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে? 

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

দীপু মনি বলেন, ‘যাদের দলেই গণতন্ত্র নেই, এই শুনছি সব নেতা পাল্টে যাচ্ছেন, কোনো সম্মেলনের কথা শোনেনি। তাহলে এ দলে গণতন্ত্র কোথায়? কী পদ্ধতিতে তাঁদের দল পুনর্গঠিত হয় সেটা বুঝতে পারি না।’ 

দীপু মনি আরও বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণসহ তাঁর উন্নততর, সচ্ছল জীবন যদি নিশ্চিত করা যায়, তাঁর যদি চলবার, বলবার, করবার, জানবার অবাধ স্বাধীনতা থাকে, তবে কি সে একদিনের নির্বাচন ব্যবস্থার ঘাটতিকে বড় করে দেখে নাকি সে তাঁর জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। সেই সন্তুষ্টিকে কি আমরা ছোট করে দেখতে পারি? এই মানুষকে কি একদিনের গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি দূর করার জন্য, তাও যে ঘাটতি নিজেরাই তৈরি করেছেন এই কয়েকটি দল, সেই ঘাটতি দূর করার আশায় পাঁচ বছরে যে স্বাচ্ছন্দ্য, যে সচ্ছলতা, যে সুন্দর জীবনের জলাঞ্জলি দিয়ে তাঁকে কি তথাকথিত আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করা যায়? যায় না। এর প্রমাণ বাংলাদেশের জনগণ বিএনপি-জামায়াতের তথাকথিত সরকার বিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পশ্চাৎপদতা যারা বিশ্বের কাছে চাউর করতে চান, তাঁদের বলব গণতন্ত্রের পশ্চাৎপদতা হয়নি, হচ্ছে না। বাংলাদেশে বিরোধীদের পশ্চাৎপদতা হয়েছে, আরও হবে।’ 

‘দ্যা কিউরিয়াস কেস অব ডেমোক্রেটিক ব্যাকস্লাইডিং ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যানালাইসিস অব পিপলস ফিন্যান্সিয়াল স্যাটিসফ্যাকশন’-শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নাগরিকদের সরকার ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের প্রতি ধারণাকে ইতিবাচক হিসাবে প্রভাবিত করে। এমনকি দেশে যদি নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থাকে, এটি সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আর্থিক সুরক্ষা মানুষের গণতান্ত্রিক ইতিবাচক চর্চার প্রতি বজায় রাখে। ড. শাহরিয়ার রহমান ও ড. মফিজুল ইসলামের গবেষণাটি মূলত অধ্যাপক আলী রীয়াজের ডেমোক্রেটিক ব্যাকস্লাইডিং ইন বাংলাদেশ গবেষণাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। 

তিনি বলেন, ড. রীয়াজ ও একই ঘরানার আরও কয়েকজন সাধারণত রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার বিষয়গুলোকে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছেন। তাঁদের তথ্য ও উপাত্ত সেকেন্ডারি সোর্স থেকে নেওয়া। কিন্তু মি. রহমান ও মি. ইসলামের গবেষণাটি জনগণের মতামতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যা ড. রীয়াজ ও অন্যান্যরা করেননি। তারা কেবল প্রাতিষ্ঠানিক ও একমাত্রিক গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপদতা ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। অর্থ হলো ড. রীয়াজ ও অন্যান্যদের গবেষণাতে জনগণের আচরণ ও বাস্তবতা বিবেচনা করেননি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর জন্য গবেষণাটি করেছে। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে মাদকের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এ দেশের জনগণকে। আমরা কিন্তু বসে নেই। আমাদের কারাগারগুলোতে প্রায় ৫০ ভাগ মাদক কারবারি আটক রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যেখানেই পাচ্ছে মাদক কারবারিদের সেইখানেই আটক করা হচ্ছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারাগারের ধারণ ক্ষমতা এখন ৪২ হাজার ৮৬৬। বিএনপি বিরোধী দলে ছিল যারা তারা নানান ধরনের কথা বলে। তাঁদের নাকি ২৬ হাজার, ২০ হাজার, ২২ হাজার আটক রয়েছে। এই মুহূর্তে আমাদের ৬৩ হাজার ৮৩০ জন বিভিন্ন কারাগারে রয়েছে। এটার সংখ্যা মাঝে মাঝে বাড়ে এটা সঠিক কিন্তু আমরা কাউকে কোনো রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার করিনি।’ 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, এক সময় মানুষ পুলিশ দেখলে ভয় পেত। এখন পুলিশ সাধারণ মানুষের আস্থা বিশ্বাসের জায়গায় চলে এসেছে। যেকোনো ব্যক্তি ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ হাজির হচ্ছে, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস হাজির হচ্ছে। পুলিশ এখন জনগণের সেবক হয়েছে। এখন জনগণ পুলিশের কাছে যায়। একইভাবে এলিট ফোর্স র‍্যাব তাঁদের দক্ষতা সক্ষমতার মাধ্যমে জনগণের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবের কারণে জঙ্গি দমন সম্ভব হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত