আ.লীগের রাজনৈতিক বিবেচনার প্রকল্প বাতিল করছে অন্তর্বর্তী সরকার

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল, ঢাকা
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ১৮
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ৩৮

আওয়ামী লীগের শাসনামলে মাদারীপুরের শিবচরে ৫ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মুজিব আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার’ নির্মাণের একটি প্রকল্প নিয়েছিল গণপূর্ত অধিদপ্তর। বিপুল ব্যয়ের এই প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু এটি নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্তের ৬টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। বাতিলের জন্য প্রস্তুত আছে ৯টি প্রকল্প। 

রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্প নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরগুলো এসব প্রকল্প বাতিলে উদ্যোগী হয়েছে। এরই মধ্যে বিগত সরকারের সময় হাতে নেওয়া বেশ কিছু প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আরও প্রকল্প বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করে এমন দপ্তরগুলো তালিকা তৈরি করে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্পের বিষয়ে আইনগত দিক পর্যালোচনা করছে বলে জানা গেছে। তবে যেসব প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি অর্থ ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে, সেসব প্রকল্প বাতিল করা হবে না। 

বাতিল হওয়া প্রকল্পের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের নিজ এলাকার নেওয়া প্রকল্পই বেশি। জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব মো. হামিদুর রহমান খান গতকাল নিজ দপ্তরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু প্রকল্প বাতিলও করা হয়েছে।’ 

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কমবেশি সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ৬টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। আর ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের নেওয়া ৯টি প্রকল্প বাতিলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। বাতিল হওয়া এসব প্রকল্প চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) আওতায় নেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পগুলো হলো গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ হাজার ৩২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদারীপুরের শিবচরের মুজিব আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার প্রকল্প; জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় শেখ ফাতেমা বেগম’ আবাসিক জোন প্লট উন্নয়ন প্রকল্প; ৫২ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দাদাভাই উপশহর আবাসিক জোন (৪র্থ পর্যায়), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয়ে তালাইমারী চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্কয়ার নির্মাণ প্রকল্প (২য় ফেজ), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫৫ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণ প্রকল্প এবং রাজউকের ২৪৮ কোটি ৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে শেখ রাসেল পার্ক নির্মাণ প্রকল্প।

পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট পূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিতে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং সংস্থাগুলোকে। প্রকল্পগুলো হলো গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে ২১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার বেলালাবাদ কলোনি এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলী রোডের পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প; ১১৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে গুলশান এবং বনানীর ৩টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ; ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পার্ক নির্মাণ; ২৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরায় অফিসার্স ক্লাব নির্মাণ; জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ৬০ কোটি ৫২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সাইট অ্যান্ড সার্ভিসেস আবাসিক প্লট উন্নয়ন; ১২২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ; খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৫৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাধীনতা স্কয়ার নির্মাণ এবং ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়ূরী-২ আবাসিক এলাকার উন্নয়ন প্রকল্প। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরই মধ্য প্রকল্পসংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানদের কাছে পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সরকারি প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এখন দাতা সংস্থাগুলো হাত খুলে সহায়তা দিতে চাচ্ছে। বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে।’ 

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক বিবেচনায় হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করে প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার জন্য। এরই মধ্যে ফরিদপুরের টেপাখোলা খাল উন্নয়ন প্রকল্পে এম্পি থিয়েটার ও ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি বাদ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের ব্যয়সংকোচ নীতির কারণে কিছু প্রকল্প বাতিল আর কিছু প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে সংশোধনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন এবং তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। তবে যেসব প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি ইতিমধ্যে ব্যয় হয়েছে, সেসব প্রকল্প বাতিল করার সুযোগ খুব একটা থাকছে না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত