Ajker Patrika

বাংলাদেশকে উৎপাদন হাব করতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ১১: ১৬
চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: ফেসবুক
চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। ছবি: ফেসবুক

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস শীর্ষ চীনা কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি পশ্চিমা ও এশিয়ার দেশগুলোতে চীনা পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন হাব বা কেন্দ্রে পরিণত করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা চীনের শতাধিক শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে চারটি বৈঠকে বসেন এবং বাংলাদেশকে ব্যবসার জন্য কতটা উন্মুক্ত করা হয়েছে তা তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থানান্তরের সুবিধা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ কোনো ধরনের বাণিজ্য বাধার সম্মুখীন নয় এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকারীদের জন্য সেরা প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ও সুযোগগুলো নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে আপনাদের কারখানা স্থাপনের এটাই সেরা সময়।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অবস্থিত এবং এটি নেপাল ও ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশ এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের প্রবেশদ্বার।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বৈঠকগুলোতে নতুন বাংলাদেশ, দেশের বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ এবং বাংলাদেশি তরুণদের সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর স্বপ্ন তুলে ধরেন। তাঁর বক্তৃতার আগে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বেজার চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ‘বাংলাদেশ ২.০: প্রবৃদ্ধির প্রবেশদ্বার’ শিরোনামে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

আশিক চৌধুরী ডেটা, সেক্টরাল হিটম্যাপ, চাহিদার ল্যান্ডস্কেপ এবং উৎপাদন প্রতিযোগিতার কারণগুলো তুলে ধরেন। তিনি বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেন, “‘শিয়েনজাই জেং শি শিহৌ”,—যার অর্থ, এখনই সময়।’ বেজার তরফ থেকে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্পের সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানান তিনি। আশিক চৌধুরী আরও জানান, তিনি এরই মধ্যে বিডা ও বেজার মতো সংস্থাগুলোকে একীভূত করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট সমন্বয় দেখতে পাচ্ছেন।

চীনের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিপিআইটি) ভাইস চেয়ারপারসন লি কিং শুয়াংও বাংলাদেশ বিনিয়োগ সংলাপে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছেন এবং তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

লি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে চীনে আরও বিনিয়োগ ক্যাম্পেইন আয়োজন করার অনুরোধ জানান। কারণ, অনেক বিনিয়োগকারী এখনো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে কারখানা স্থাপনের সুবিধা সম্পর্কে অবগত নন। সিসিপিআইটির ভাইস চেয়ারপারসন বলেন, তাঁর সংস্থা বাংলাদেশে আরও চীনা বিনিয়োগের সুবিধা দেবে। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রচারের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করারও প্রতিশ্রুতি দেন।

বিনিয়োগ সংলাপের পর অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, প্রযুক্তি শিল্প এবং একাডেমিয়ার নেতাদের সঙ্গে তিনটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল উৎপাদনকারী কোম্পানি লঞ্জি, মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক অপ্পো, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, হিসেন্স ইন্টারন্যাশনাল, গাওটু এডুকেশন টেকনোলজি গ্রুপ, চায়না বায়োটেক অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস ভ্যালি, চায়না ইন্টারনেট, চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এবং চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের মতো শীর্ষ চীনা কোম্পানিগুলোর সিনিয়র কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাহীরা গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন।

আশিক চৌধুরী পরে বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে উৎসাহব্যঞ্জক অনুসন্ধানে উৎসাহ পাচ্ছি। চীনা প্রতিনিধিদল, যারা ইতিমধ্যেই দুই সপ্তাহ পর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিনিয়োগ সম্মেলনে বৃহত্তম, এটি আরও বড় হতে চলেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা সামাজিক ব্যবসা এবং থ্রি-জিরো বা তিন শূন্যের বিশ্ব নিয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকেও বক্তব্য রাখেন। অধ্যাপক ইউনূস একটি নতুন সভ্যতা তৈরির আহ্বান জানান যেখানে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, শূন্য নেট কার্বন নিঃসারণ, শূন্য দারিদ্র্য এবং শূন্য বেকারত্ব থাকবে।

বিশ্বের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম পিকিং, রেনমিন ও সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ অধ্যাপক ও ডিন এবং শীর্ষ চীনা যুব নেতারা বৈঠকে অংশ নেন। সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন লি দাওকুই অধ্যাপক ইউনূসের প্রশংসা করে বলেন, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে এবং উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।

তিনি চীনের অসাধারণ উন্নয়নের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য সিংহুয়াতে বাংলাদেশি আমলা ও নীতি নির্ধারকদের জন্য ‘দিনব্যাপী গভীর আলোচনা’ আয়োজনের প্রস্তাবও দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত