দুর্গাপূজার আজ মহাষষ্ঠী, মণ্ডপে বসবে আইপি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২: ১৯
Thumbnail image

আজ শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী। দেবী দুর্গার বোধনের দিন। ‘বোধন’ কথাটির অর্থ জাগ্রত করা। মর্ত্যে দুর্গার আবাহনে বোধনের রীতি প্রচলিত রয়েছে। বোধনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা।

পাঁচ দিনের এই ধর্মীয় উৎসব ১৩ অক্টোবর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে। ২ অক্টোবর দেবী দুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষের। 

পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গা
মর্ত্যে আসছেন দোলায় বা পালকিতে চড়ে; আর মর্ত্যলোক ছেড়ে যাবেন ঘোটক অর্থাৎ ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। প্রচলিত প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, দোলায় চড়ে দেবীর আগমন অশুভের ইঙ্গিতবাহী। মনে করা হয়, দেবী যদি দোলায় চড়ে মর্ত্যে আসেন, তাহলে দেশে মড়ক বা দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আর বিজয়া দশমীতে দেবীর ঘোটকে চড়ে মর্ত্য ছেড়ে যাওয়া সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। তবে প্রচলিত বিশ্বাসের এই আশঙ্কার দিক দূরে সরিয়ে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবে মেতে ওঠার অপেক্ষায়। বিপণিবিতানে বাড়তি ভিড় এবং পূজামণ্ডপের ব্যস্ততা সে ছবিই তুলে ধরে।

পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের হিসাবে দেশে এবার ৩১ হাজার ৪৬১ মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর ঢাকা মহানগরে পূজা হবে ২৫২টি মণ্ডপে। এদিকে রাজধানীর গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছর সেখানে দুর্গাপূজায় কুমারীপূজা হবে না। এর আগেও করোনা মহামারির সময় সেখানে কুমারীপূজা অনুষ্ঠিত হয়নি।

নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বাস
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এবারের পূজায় নিরাপত্তা নিয়ে অনেকের মনে শঙ্কা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপে এমনিতেই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের আশ্বস্ত করতে সচেষ্ট রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা পরিদর্শনের পর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উৎসবের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের পদক্ষেপের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষের নিজেদের আনন্দ-উৎসব উদ্‌যাপনের অধিকার আছে, তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। কঠিন চীবরদান উৎসবের (পার্বত্য এলাকার) ব্যাপারে খুব শিগগির এমন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব, যাতে তাঁরা তা সুন্দরভাবে উদ্‌যাপন করতে পারেন।...দুর্গাপূজার বিষয়ে সংশয় ও সন্দেহ দেখা গিয়েছিল; তবে আমরা এখানে এসেছি। আশা করি খুব আনন্দের সঙ্গে এই পূজা উদ্‌যাপিত হবে।’ 

বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি, উৎসবে বাড়তি আনন্দ
হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবির মুখে দুর্গাপূজার জন্য নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল এ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল ছুটি আগামী রোববার বিজয়া দশমীর দিন। বৃহস্পতিবার যোগ হওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটিসহ সব মিলিয়ে এবার পূজায় চার দিন ছুটি ভোগ করবেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সাধারণ ছুটির সময় সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা; যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, হাসপাতাল, চিকিৎসা, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট সেবাকাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবেন। ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। আদালতের কার্যক্রমের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।

মণ্ডপে বসবে আইপি ক্যামেরা
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সরকার কাজ করছে। মণ্ডপগুলোতে আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে ইউএনও অফিস এবং থানা থেকে মনিটরিং করা হবে। জরুরি সেবায় সার্বক্ষণিক বিশেষ টিম কাজ করবে। পুলিশ, র‍্যাবের টহল ও গোয়েন্দা সংস্থার টিম কাজ করবে।

গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।অপূর্ব জাহাঙ্গীর আরও বলেন, বৌদ্ধদের কঠিন চীবরদান অনুষ্ঠান যাতে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সে জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত