হাইকোর্টের ৩ বিচারপতির পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ২১: ০২
Thumbnail image
বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক। ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ পাঁচ বছর বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্ট বিভাগের তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক।

গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার পর ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট থেকে এই তিন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিন বিচারপতি রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেছেন। রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ করেছেন।

এদিকে ‘আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট বিচারপতিদের পদত্যাগের’ দাবিতে ছাত্র নেতৃত্বের আন্দোলনের মুখে গত ১৬ অক্টোবর হাইকোর্টের ১২ বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়ার কথা জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল। এরপর থেকে ওই ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, পদত্যাগকারী তিন বিচারপতিকে ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট থেকে বেঞ্চ দেওয়া হয়নি। তবে তাঁরা বেতন–ভাতাসহ সব সুযোগ–সুবিধা ভোগ করেছেন। সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিষয়ে রিভিউ বিচারাধীন থাকার কথা বলে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাঁদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ২০০২ সালের ২৯ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। স্থায়ী হন ২০০৪ সালের ২৯ জুলাই। চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর ৬৭ বছর বয়সে তাঁর অবসরে যাওয়ার কথা ছিল।

বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। স্থায়ী হন ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ২৭ নভেম্বর। বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারি।

১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীতে এই ক্ষমতা যায় রাষ্ট্রপতির হাতে। ১৯৭৭ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বনাম ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মামলায় ২০০৫ সালে হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেন। ২০১০ সালে আপিল বিভাগ তা বহাল রাখেন। তবে অধিকতর স্বচ্ছতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বিবেচনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বলবৎ রাখেন আপিল বিভাগ।

২০১১ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান অপরিবর্তিত রেখে সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। তবে ২০১৪ সালে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আবার সংসদের হাতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে তা অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগে সর্বসম্মতিক্রমে খারিজ হয়। রিভিউ চেয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে। যা গত ২০ অক্টোবর নিষ্পত্তি হয়।

রিভিউ নিষ্পত্তি করে আদালত ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ থেকে ৮ উপ অনুচ্ছেদ পুনস্থাপন করতে বলেন। এই রায়ের ফলে কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসমর্থতা ও পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে জানান আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, রায়ের পর দুবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বৈঠক হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত