তোপের মুখে পুলিশের পাহারায় সচিবালয় ছাড়লেন সায়লা ফারজানা

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১১: ৪৩
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৪, ২১: ৫৮

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও সারা দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছিল উত্তপ্ত। পদোন্নতিবঞ্চিতরা দফায় দফায় মহড়া দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের বিভিন্ন কক্ষে ও বারান্দায়। 

বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন অভ্যন্তরীণ ও নবনিয়োগ অধিশাখা) সায়লা ফারজানা। পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা তাকে কক্ষে আটকে রাখেন। 

পরে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশি পাহারায় গাড়িতে তুলে দেন। এসময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আরও দুই অতিরিক্ত সচিবকে শেখ হাসিনার ‘দালাল’ বলে স্লোগান দেন বঞ্চিতরা।

বিসিএস ১৭ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা সায়লা ফারজানা বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব। অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ও বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম তাঁর স্বামী।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গতকাল সোমবারই প্রথম অফিসে এসেছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা। যিনি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের মহাসচিব। 

গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণকারী বিসিএস ১৭ ব্যাচের এই প্রভাবশালী কর্মকর্তা সকাল সাড়ে ১০টায় মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি ঊর্ধ্বতন নিয়োগ–১ শাখার কর্মকর্তা আলমগীর কবিরের কক্ষে যান। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নিজের কক্ষে প্রবেশ করেন। এ সময় বিগত দিনের পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের একটি দল তাঁর কক্ষে প্রবেশ করে তিনি কেন এসেছেন তা জানতে চান। 

জুনিয়র কিছু কর্মকর্তা তাঁকে তুই তোকারি করে বলেন, ‘তোর এতবড় সাহস! তুই কেন এসেছিস? তোর পায়ে ধরছি, পদোন্নতির জন্য। কিন্তু আমাদের বিএনপি–জামায়াতের ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। তুই বের হ।’

এ সময় তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন তাঁরই ব্যাচমেট ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শেখ মোমেনা মনি। পরিস্থিতি বুঝে তিনি চলে যান। সায়লা ফারজানাকে আটকে রেখে ক্ষোভ ঝারতে থাকেন বঞ্চিতরা। খবর পেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মাসুদুল হাসান কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে তাঁর কক্ষে যান এবং তাঁকে উদ্ধার করে নিজের দপ্তরে নিয়ে যান। বঞ্চিতরা তখন তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে না আসার জন্য হুঁশিয়ারি দেন। পরে তাঁকে পুলিশি পাহারায় গাড়িতে করে সচিবালয়ের বাইরে পাঠানো হয়। 

এদিকে নতুন সরকারের কাছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এও-পিওরা ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন। এগুলো বাস্তবায়নের দাবিতে তাঁরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তাঁরা সাংবাদিকদের কাছে ছয় দফা তুলে ধরেন। 

দাবির মধ্যে রয়েছে—সচিবালয়ে নিয়োজিত সব প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে ‘উপসহকারী সচিব’ পদনাম দিতে হবে। বিদ্যমান আইনানুযায়ী ৭ বছরে ফিডার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতি দিয়ে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ১১-১৬ গ্রেডের কর্মচারীদের পদনাম ‘অতিরিক্ত উপসহকারী সচিব’ করতে হবে। ১৭-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পদনাম ‘সাচিবিক সহায়ক’ করতে হবে।

আরও খবর পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত