থানা–পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে করণীয়

সুলতান মাহমুদ
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ০৮

বেশির ভাগ ফৌজদারি মামলার কার্যক্রম শুরু হয় থানায় এজাহার দায়েরের মাধ্যমে। আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর কোনো নাগরিক থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে থানা–পুলিশকে কোনো টাকা–পয়সা দিতে হয় না। কোনো কারণে পুলিশ থানায় মামলা নিতে না চাইলে সংক্ষুব্ধ নাগরিক কী করতে পারেন? 

এ বিষয়ে ঢাকা জজ আদালতের আইনজীবী নির্মল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, থানা–পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। 

তবে ফৌজদারি মামলা নিয়ে আদালতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া মানতে হয়। থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে আদালতে যেতে চাইলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা
থানায় পুলিশ মামলা নিতে না চাইলে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরজি পেশের মাধ্যমে মামলা করা যেতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মামলা করলে আদালত সংশ্লিষ্ট থানাকে মামলাটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন বা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিতে পারেন। অথবা পুলিশের যেকোনো সংস্থাকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন আদালত। 

আইনজীবী নির্মল চন্দ্র চৌধুরী বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, থানা–পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। সে ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার জন্য বাদী আদালতে মামলা করতে পারেন। আদালত যদি মনে করেন মামলাটি আমলে নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তিনি মামলাটি এফআইআর হিসেবে গ্রহণের জন্য থানা–পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন বা পুলিশের কোনো সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।’ 

নালিশি মামলা করার পদ্ধতি
সাধারণত অভিযোগকারীকে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মামলা দায়ের ও পরিচালনা করতে হয়। তবে, অভিযোগকারী/বাদী নিজেও মামলা পরিচালনা করতে পারেন। এ ধরনের মামলা সাধারণত মহানগর এলাকায় মুখ্য মহানগর হাকিম (চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট– সিএমএম) এবং অন্যান্য এলাকায় মুখ্য বিচারিক হাকিম (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট– সিজেএম) আদালত বা তাঁর অধীনস্থ প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দায়ের করতে হয়। 

বিশেষ আইনের ক্ষেত্রে যদি বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালতে সেই মামলা করতে হয়। যেমন—নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলা সংশ্লিষ্ট সাইবার ট্রাইব্যুনালে করতে হয়। 

আদালতে করা মামলার অভিযোগকে আরজি বলা হয়। যিনি আরজি করেন তাঁকে ফরিয়াদি বা বাদী বা অভিযোগকারী এবং যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয় তাঁকে আসামি বা বিবাদী বলা হয়। 

আরজিতে আদালতের নাম, যে আইনে মামলা হবে সেই আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা, বাদী ও আসামির নাম–ঠিকানা, সাক্ষীদের নাম–ঠিকানা এবং ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করতে হয়। নালিশের ভিত্তিতে অপরাধ আমলে নেওয়া হলে ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় বাদী ও উপস্থিত সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করবেন। জবানবন্দির সারাংশ ম্যাজিস্ট্রেট লিপিবদ্ধ করবেন এবং তাতে বাদী বা সাক্ষীর সই নেবেন। 

মামলা খারিজ
ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৩ ধারা মোতাবেক ম্যাজিস্ট্রেট অনুসন্ধান বা তদন্তের ফলাফল (যদি থাকে) বিবেচনা করে অগ্রসর হওয়ার মতো কোনো কারণ না পেলে মামলাটি খারিজ করতে পারবেন। তবে, খারিজ করার কারণ লিপিবদ্ধ করতে হবে। 

নারাজি
অনুসন্ধান বা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলাটি খারিজ করা হলে বাদী বা ফরিয়াদি নারাজি দিতে পারেন। নারাজি বলতে বোঝায় যে, ‘আমি মানি না’। সাধারণত ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে নারাজি পিটিশন করা হয়। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ফৌজদারি মামলায় অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রাথমিক ধাপ হলো অপরাধটির তদন্ত করা। তদন্ত করার পর পুলিশ–প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই পুলিশ–প্রতিবেদন দুই ধরনের হয়: 
এক. অভিযোগপত্র (চার্জশিট)
দুই. চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট)

অপরাধীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়া না গেলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে। পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদী নারাজি পিটিশন করতে পারবেন। নারাজি পিটিশনকে নালিশি দরখাস্ত হিসেবেই গ্রহণ করা হয়। 

নারাজি অগ্রাহ্য হলে করণীয়
নারাজি দরখাস্ত অগ্রাহ্য হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির প্রতিকার পাওয়ার উপায় রয়েছে। নারাজি দরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট অগ্রাহ্য (নামঞ্জুর) করলে অসন্তুষ্ট পক্ষ আদেশের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে দায়রা জজ আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ (ক) ধারা মতে রিভিশনের (পুনর্বিবেচনা) দরখাস্ত করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত