যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ে শেষ ধাপে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১৭: ১৮

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি সইয়ের শেষ ধাপে রয়েছে বাংলাদেশ। দুই দেশের এ চুক্তি সম্পন্ন হলে দেশটি থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র কিনতে পারবে বাংলাদেশ। করোনা দীর্ঘ বিরতির পর যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। মার্কিন পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনিস জেনকিনস।

বৈঠকে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্রে নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) ও অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্টের (এসিএসএ) নিয়ে আলোচনা, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, রোহিঙ্গা ইস্যু, জঙ্গিবাদ দমন, নাগরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করে দুই দেশ। 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন করলে বৈঠক শেষে সফররত সাংবাদিকদের মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘জিএসওএমআইএ একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ৪টি ধাপ পার হতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ তৃতীয় ধাপে রয়েছে। তারা যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা যাচাই বাছাই করে দেখছি। এরপর চতুর্থ ধাপে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি প্রতিনিধি দল এসে বাংলাদেশের ক্রয় সংক্রান্ত যে বিধিবিধানগুলো রয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখবে। আগামী নবম নিরাপত্তা সংলাপের আগে আমরা চেষ্টা করব বাংলাদেশের পক্ষের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে। সুতরাং ২০২৩ সালে জিএসওএমআইএ নিয়ে বসার সুযোগ পাবো।’

র‍্যাবের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি। তাঁদের ব্যবস্থায় যে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেটির মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হবে। এখানে কোন নির্বাহী আদেশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার মত সুযোগ নেই।’ 

আইপিএস নিয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল দেখতে চায়। সমৃদ্ধ অঞ্চলের জন্য যা যা দরকার সেই বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের আইপিএস নিয়ে অবস্থানে রয়েছে কি না তা আমরা পরীক্ষা করে দেখব। আর বাংলাদেশও ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে তার অবস্থান অচিরেই তুলে ধরবে।’ 

প্রসঙ্গত, এর আগে সাতটি বৈঠক দুই দেশের মহাপরিচালক পর্যায়ে হয়ে থাকলেও এবার বৈঠকটি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর দুই দেশের সপ্তম নিরাপত্তা সংলাপ ঢাকায় ২০১৯ সালের ২ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে প্রতিরক্ষা চুক্তির জিএসওএমআইএ এবং এসিএসএ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং আধুনিকায়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামরিক বা প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত। তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক অস্ত্রের দামের বিষয়টি বাংলাদেশ তুলে ধরে। এসব অস্ত্রে যেহেতু বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী সংযোজন ও বিয়োজন করা যাবে। তাই দামের বিষয়টিতেও বিবেচনা করার সুযোগ থাকছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়। 

বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সকল সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সামনের দিনে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বৈঠকে ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট দ্রুত চালু ও অ্যাভিয়েশন খাতের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করে দুই পক্ষ। আগামী নবম নিরাপত্তা সংলাপ ২০২৩ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হবে বলে বৈঠকে নির্ধারিত হয়। 

এদিকে একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন মার্কিন একাধিক আইন প্রণেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। এদের মধ্যে রয়েছে ডেমোক্র্যাট দলের জর্জিয়ার সিনেটর জন অসওফ এবং ডেমোক্রেটিক দলের ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর ও পররাষ্ট্র বিষয় এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে সাবকমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান আমি বেরা। বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন এ কে আবদুল মোমেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে রাজনৈতিক ও মানবিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদে রাখাইনে ফেরত যেতে পারে, তার জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে মার্কিন আইন প্রণেতাদের অনুরোধ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়ে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে এ কে আবদুল মোমেনকে জানান মার্কিন আইন প্রণেতারা। বৈঠকগুলোতে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানো বিষয়ে আইন প্রণেতাদের অনুরোধ করেন এ কে আবদুল মোমেন। 

একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে ভবিষ্যতে তা আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত