Ajker Patrika

কোচিং-প্রাইভেট

সম্পাদকীয়
কোচিং-প্রাইভেট

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল বন্ধের দিন শনিবার প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক শিশু। স্কুলেরই একজন সহকারী শিক্ষক এই অনাচারটি ঘটিয়েছেন।

এরপর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নির্দেশ দিয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটির পর অথবা বন্ধের দিন শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিংসহ অন্য কোনো কাজ করা যাবে না।

একটি বিদ্যালয়ে যেভাবে পড়াশোনা করালে আর কোচিং করতে হয় না, এ রকম একটা শিক্ষাব্যবস্থাই তো গড়ে তোলা উচিত ছিল। বারবার মুখে বলা হয় মুখস্থ বিদ্যার অবসান হতে হবে এবং প্রাইভেট পড়া বাতিল করতে হবে। কিন্তু তাতে এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়েছে বলে মনে হয় না। এখনো স্কুল-কলেজের আশপাশে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের যেসব পোস্টার বা বিজ্ঞাপন দেখা যায়, তাতে আকৃষ্ট হয়ে কষ্টে রোজগার করা টাকাপয়সা খরচ করে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানকে সেসব কোচিং সেন্টারে পড়তে দেন। পড়াশোনাটা মূল লক্ষ্য না হয়ে জিপিএ ফাইভ পাওয়াটা মূল লক্ষ্য হয়ে যাওয়ায় সবাই যান্ত্রিক উপায়ে শুধু ফলাফলের ওপরই নির্ভর করে থাকেন। তাতে শিশুর মনোবিকাশ হলো কি না, সেদিকে কারও খেয়াল থাকে না। অথচ একজন ভালো মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার দায়িত্বটাই শিক্ষকের। শুধু শিক্ষকের কেন, অভিভাবকদেরও। কিন্তু শিক্ষাবলয়ের সর্বত্রই পড়াশোনার মানবিক দিকটি উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক দিকটি ঊর্ধ্বে তুলে ধরার যে প্রবণতা রয়েছে, তা একটি সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দেখা দেয়। লক্ষ্যের মধ্যে কেবল যেকোনো মূল্যে ওপরে ওঠার সিঁড়ি খোঁজার কারণে টিকে থাকে এইসব অমানবিক হওয়ার কারখানা।

যে শিক্ষক এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য টাকার বিনিময়ে আলাদা ক্লাস নিচ্ছেন, তিনি কেন ক্লাসেই সেই পড়াশোনা শেষ করে দিতে পারছেন না? স্কুলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যে আনন্দময় পরিবেশের জন্ম হওয়ার কথা, সেটা কেন হয় না?

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চৌকস মেধাবী শিক্ষকদের জন্য আকর্ষণীয় সম্মানীর ব্যবস্থা রাখিনি। এই পেশায় আকৃষ্ট করতে হলে যতটা আর্থিক সম্মানী দেওয়া উচিত, তার ব্যবস্থা কি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আছে? একজন প্রাথমিক শিক্ষক কি তাঁর বেতন দিয়ে সংসার চালাতে পারেন? এই অবহেলা থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি। শিক্ষককে আর্থিকভাবেও সম্মান দিতে হবে।

তাই বলে আর্থিকভাবে পঙ্গু শিক্ষক তাঁর ছাত্রীর ওপর হামলে পড়বেন, সেটাও কোনো কাজের কথা নয়। শিক্ষকতা পেশায় সততা এবং নৈতিকতা সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। এই সততা এবং নৈতিকতা না থাকলে কোনো মানুষই শিক্ষালয়ে পড়ানোর উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না।

ঠাকুরগাঁওয়ের এই শিক্ষকের বিচার দাবি করছি। এবং বিচারে যে সাজা হবে সেটা সব প্রাথমিক শিক্ষককে জানিয়ে দেওয়ার দাবি করছি। তাতে শিক্ষকেরা এ ধরনের অনৈতিক, পাশবিক আচরণ করার আগে অন্তত একবার ভাববেন, তাঁরা শিক্ষক, তাঁদের হাতেই শিশুদের ভবিষ্যতের ভার রক্ষিত থাকার কথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত