আহমেদ শমসের, সাংবাদিক
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম নির্মম রাত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ঢাকা শহরকে পরিণত করেছিল মৃত্যুপুরীতে। নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে তারা ভেবেছিল, এক রাতেই বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরতরে নিঃশেষ করে দেবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি কখনো মাথা নত করেনি। এই গণহত্যার মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে বাংলাদেশ আর কখনো পাকিস্তানের অংশ থাকবে না।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। গণতন্ত্রের রায়কে উপেক্ষা করে তারা নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা মিলিতভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে শক্তি প্রয়োগ ছাড়া বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ফলে ২৫ মার্চ রাতে তারা পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ পুরো বাঙালি জাতিকে দমন করার অপচেষ্টা চালায়।
সেই রাতের হত্যাযজ্ঞ ছিল সুসংগঠিত এবং পূর্বপরিকল্পিত। সন্ধ্যার পর থেকেই পাকিস্তানি সেনারা কৌশলগত জায়গাগুলোতে অবস্থান নেয়। রাত ১১টার পরপরই তারা একযোগে আক্রমণ শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ঢুকে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলে চলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, যেখানে শত শত ছাত্রকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়। শহীদ মিনার ধ্বংস করা হয়, যেন বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে মুছে ফেলা যায়। পিলখানায় ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসেও চলে একই ধরনের নৃশংস হামলা। ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়। পত্রিকা অফিস, সরকারি স্থাপনা, এমনকি সাধারণ মানুষের বসতবাড়িও পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
বুদ্ধিজীবীদের ওপর পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা চেয়েছিল বাঙালির নেতৃত্বের স্তম্ভকে ধ্বংস করতে। সাংবাদিক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক কেউই রক্ষা পাননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়, আহতদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়। সেনাদের লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগে রাতারাতি ঢাকা পরিণত হয় শ্মশানে। গেরিলা প্রতিরোধের ভয় পেয়ে সেনারা নির্বিচারে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে।
তবে পাকিস্তানি বাহিনীর এই পরিকল্পনার মাঝেও বাঙালির প্রতিরোধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের সদস্যরা আত্মসমর্পণ না করে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে প্রচারিত হয়। এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
২৫ মার্চের গণহত্যা ছিল এতটাই ভয়াবহ যে বিশ্বের ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রমাণ করেছিল, তারা বাঙালিদের দাস ছাড়া আর কিছু মনে করে না। তবে ইতিহাসের সত্য এটাই যে প্রতিটি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ একসময় জেগে ওঠে। ২৫ মার্চের রাতের হত্যাযজ্ঞই পরোক্ষভাবে নিশ্চিত করেছিল, পাকিস্তানের শাসনের অধীনে বাঙালির আর থাকা সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি থেকেই সারা দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়, যা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ে পরিণত হয়।
আজকের বাংলাদেশ ২৫ মার্চের সেই শহীদদের রক্তের ঋণে গড়া। তাই এটা কেবল এক রাতের ট্র্যাজেডি নয়, আমাদের জাতীয় চেতনার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, যা কখনো নিভে যাওয়ার নয়। ওই রাতের ভয়াবহতা শুধু শোকের বার্তা দেয় না, বরং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরও দৃঢ় করে। এই গণহত্যার বিচার হয়নি, পাকিস্তান আজও এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। কিন্তু আমাদের করণীয় হলো, ইতিহাসের এই নির্মম সত্যকে ভুলে না যাওয়া। একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হবে সেই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতটি শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম নির্মম রাত। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে ঢাকা শহরকে পরিণত করেছিল মৃত্যুপুরীতে। নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে তারা ভেবেছিল, এক রাতেই বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরতরে নিঃশেষ করে দেবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাঙালি কখনো মাথা নত করেনি। এই গণহত্যার মাধ্যমেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে বাংলাদেশ আর কখনো পাকিস্তানের অংশ থাকবে না।
পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় মেনে নিতে পারেনি। গণতন্ত্রের রায়কে উপেক্ষা করে তারা নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিল। ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা মিলিতভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় যে শক্তি প্রয়োগ ছাড়া বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। ফলে ২৫ মার্চ রাতে তারা পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগসহ পুরো বাঙালি জাতিকে দমন করার অপচেষ্টা চালায়।
সেই রাতের হত্যাযজ্ঞ ছিল সুসংগঠিত এবং পূর্বপরিকল্পিত। সন্ধ্যার পর থেকেই পাকিস্তানি সেনারা কৌশলগত জায়গাগুলোতে অবস্থান নেয়। রাত ১১টার পরপরই তারা একযোগে আক্রমণ শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ঢুকে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করা হয়। জগন্নাথ হল ও ইকবাল হলে চলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, যেখানে শত শত ছাত্রকে একসঙ্গে হত্যা করা হয়। শহীদ মিনার ধ্বংস করা হয়, যেন বাঙালির ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে মুছে ফেলা যায়। পিলখানায় ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইনসেও চলে একই ধরনের নৃশংস হামলা। ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিত গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়। পত্রিকা অফিস, সরকারি স্থাপনা, এমনকি সাধারণ মানুষের বসতবাড়িও পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
বুদ্ধিজীবীদের ওপর পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে তারা চেয়েছিল বাঙালির নেতৃত্বের স্তম্ভকে ধ্বংস করতে। সাংবাদিক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, কবি-সাহিত্যিক কেউই রক্ষা পাননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়, আহতদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়। সেনাদের লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগে রাতারাতি ঢাকা পরিণত হয় শ্মশানে। গেরিলা প্রতিরোধের ভয় পেয়ে সেনারা নির্বিচারে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ করে।
তবে পাকিস্তানি বাহিনীর এই পরিকল্পনার মাঝেও বাঙালির প্রতিরোধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের সদস্যরা আত্মসমর্পণ না করে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করেন। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে প্রচারিত হয়। এর মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
২৫ মার্চের গণহত্যা ছিল এতটাই ভয়াবহ যে বিশ্বের ইতিহাসে এটি অন্যতম বড় রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে পাকিস্তান প্রমাণ করেছিল, তারা বাঙালিদের দাস ছাড়া আর কিছু মনে করে না। তবে ইতিহাসের সত্য এটাই যে প্রতিটি দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে মানুষ একসময় জেগে ওঠে। ২৫ মার্চের রাতের হত্যাযজ্ঞই পরোক্ষভাবে নিশ্চিত করেছিল, পাকিস্তানের শাসনের অধীনে বাঙালির আর থাকা সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি থেকেই সারা দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়, যা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয়ে পরিণত হয়।
আজকের বাংলাদেশ ২৫ মার্চের সেই শহীদদের রক্তের ঋণে গড়া। তাই এটা কেবল এক রাতের ট্র্যাজেডি নয়, আমাদের জাতীয় চেতনার অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, যা কখনো নিভে যাওয়ার নয়। ওই রাতের ভয়াবহতা শুধু শোকের বার্তা দেয় না, বরং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আরও দৃঢ় করে। এই গণহত্যার বিচার হয়নি, পাকিস্তান আজও এ ঘটনায় ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। কিন্তু আমাদের করণীয় হলো, ইতিহাসের এই নির্মম সত্যকে ভুলে না যাওয়া। একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হবে সেই শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো।
এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামের নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের দু’জন প্রথম সারির সংগঠক তাসনিম জারা ও সারজিস আলমের মধ্যে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে কোনোভাবেই কেবল ব্যক্তি দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
২ ঘণ্টা আগেএকাত্তরের যুদ্ধ সম্পর্কে পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষদের আত্মকথনগুলো বেশ উপভোগ্য। এরা সবাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এবং দোষ চাপিয়েছেন অন্যের ঘাড়ে। হামিদুর রহমান কমিশন প্রধান অপরাধী হিসেবে ইয়াহিয়া খানকে চিহ্নিত করেছে বটে, তবে সর্বাধিক নিন্দা...
৮ ঘণ্টা আগেআমি এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে সব মানুষ সমান সুযোগ পাবে, অন্যায়-অবিচার থাকবে না, সবাই ন্যায্য অধিকার পাবে। ধনী-গরিবের মধ্যে বিশাল পার্থক্য থাকবে না, প্রত্যেকে তার প্রাপ্য সম্মান পাবে। উন্নত দেশ মানে শুধু বিল্ডিং, রাস্তা বা প্রযুক্তির
৮ ঘণ্টা আগে২৬ মার্চ বাংলাদেশের ৫৫তম স্বাধীনতা দিবস। দিনটি এক গৌরবময় অধ্যায়ের স্মারক, যেখানে বাঙালি জাতির বীরত্ব, সাহসিকতা, আত্মত্যাগ ও বিজয়ের অমর কাহিনি জড়িয়ে আছে। একাত্তরের রক্তঝরা পথ বেয়ে যে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল, তা আজ পাঁচ দশকের বেশি সময়...
৮ ঘণ্টা আগে