ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
সরকারি তদারকি না থাকায় দেশের পোলট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রাকৃতিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। এই সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ এখন কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের (তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মসহ) মাধ্যমে থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে দিনে তাদের অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা মুরগি বিক্রির মাধ্যমে লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর এক দিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। দেশে প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। সেই বাচ্চা প্রতিটি এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেওয়ার কথা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।
আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এবার রমজানে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দোকানে সব ধরনের পণ্যও মিলছে। সারা দেশে সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও রোজার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। (‘পাত্তা দিচ্ছে না সিন্ডিকেট’, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ মার্চ ২০২৩)। চিনির শুল্ক কমানো হলেও পণ্যটির দাম এক টাকাও কমেনি। কারণ ছাড়াই পোলট্রি মুরগির দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিচ্ছে। তবে এসবে পাত্তা দিচ্ছে না বাজার সিন্ডিকেট।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনির দাম কমানোর জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করতে এনবিআরকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন এনবিআর থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন চিনির দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা যদি প্রতিশ্রুতি দিয়েও দাম না কমান, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে ভাবতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনি ব্যবসায়ীরা সাত দিনের সময় নিয়েছেন। কেজিপ্রতি ৫ টাকা করে দাম কমানোর বিষয়েও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তারপরও কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছে, তারা কারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করা তহবিলের উৎস, খাদ্যপণ্য আমদানির ব্যবস্থাপনা কাদের করায়ত্তে, সেই সিন্ডিকেট কেন সরকারকে পাত্তা দিচ্ছে না- বিষয়টি রাজনৈতিক অর্থনীতির ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে, যা খতিয়ে দেখা দরকার।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব জিনিসের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু গত বছরের চেয়ে কোনো কোনো জিনিসের দাম শতভাগ বেড়েছে। এর কারণ বা দোষ করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপানো কতটা সমীচিন হবে তা বিশ্লেষণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করা আবশ্যক।
কেননা পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ যারা কার্ড করতে পেরেছেন, তারা টিসিবি ডিলারের দোকানে লাইন দিচ্ছেন। যাদের কার্ড নেই, তারা প্রয়োজনের অর্ধেক বা তারও কম পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সন্ধ্যার খাবারের মূল্য সেহেরির সময় বারো আনা (৭৫ শতাংশ) বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের করুণ দুর্দশার কথা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়।
এফবিসিসিআইয়ের প্রধান প্রশ্ন রেখেছেন, দুবাইতে আমদানি করা গরুর মাংস ৫০০ টাকায় পাওয়া গেলে বাংলাদেশে উৎপাদিত মাংস ৭৫০ টাকায় কেন কিনতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবিসহ সরকারের সংস্থাগুলো নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও থেমে নেই বাজার কারসাজি। কিছু পণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও রোজার আগেই পরিকল্পনা করে বাড়ানো হয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম।
নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে কাঁচা সবজির দামও। এ ব্যাপারে (পণ্য বা সেবা মূল্য তদারকি ও ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য গঠিত) প্রতিযোগিতা কমিশনের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও ব্যবসায়ীদের যেমন দায়িত্ব আছে, একইভাবে ভোক্তাকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তারা যেন কৃচ্ছ্বতা সাধনের মাস রোজার সময় হুমড়ি খেয়ে পণ্য না কেনেন। কারণ হঠাৎ কোনো পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলে তার দাম বেড়ে যায়। তাই ভোক্তারা যদি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সহনীয় আচরণ করেন, বাজারও সহনীয় থাকবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র নয় মাস বাকি। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। রমজান মাসজুড়ে ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি চাঙা করার পাশাপাশি জনদৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই তারা নামি-দামি হোটেল, রেস্তোরাঁ ও কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দিয়ে ফেলেছে।
এবার ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তোড়জোড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমজমাট হচ্ছে ইফতার রাজনীতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ রমজান। তাই রমজান মাসজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার পার্টির আয়োজনের তোড়জোড়ও এবার অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী, বিভাগ-জেলা শহরে শুধু নয় , অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবার গ্রামপর্যায়ে ইফতার পার্টির আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মাধ্যমে নিজ নিজ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের রাজনীতিতে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে; পাশাপাশি গণসংযোগ জোরদার করাও। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ইফতার পার্টির আয়োজন করেনি। এবার ইতোমধ্যে সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার পার্টি নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
এবার রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ইফতার পার্টিতে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি, সমমনা রাজনৈতিক দল, সমমনা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের বেশি সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বিদেশী কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রাধান্য দিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা দলীয় পর্যায়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের পাশাপাশি প্রতিদিনই বিভিন্ন সমমনা দল ও সংগঠনের ইফতারে অংশ নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরার চেস্টা চলছে, সংযম ও আত্মশুদ্ধি সাধনার এই মাসে। কে কার চেয়ে বেশি দলকে কাছে টানতে পারে, এ নিয়ে প্রতিযোগিতায় মাহে রমজানের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। সিন্ডিকেটকে কেন কথা শুনানো যাচ্ছে না, জনগণকে ‘সেবা করার জন্য’ ক্ষমতায় থাকতে বা যেতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার এই পক্ষপাতিত্ব, এই বিড়ম্বনা জনগণকে সহ্য করতেই হচ্ছে। অথচ প্রত্যাশিত ছিল রাজনৈতিক অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে অপচয়-অপব্যয় বাঁচিয়ে গোত্র-গুষ্ঠি-দলমত নির্বিশেষে গণহারে ইফতারসামগ্রী বিতরণ, খাদ্য সহায়তা প্রদান, জামাকাপড় ও জাকাত বিতরণের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাড়ানো ।
রমজান মাস যেহেতু সংযমের, আত্মশুদ্ধির, সেক্ষেত্রে তথাকথিত তেলো মাথায় তেল দেয়ার ইফতার পার্টির আয়োজনের নামে ‘চাঁদাবাজি’ ব্যবসায়ী বা পণ্য সরবরাহকারীদের উৎপাদন ব্যয় বা ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে কিনা তাও মাথায় রাখতে হবে।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক; সরকারের সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান।
সরকারি তদারকি না থাকায় দেশের পোলট্রি খাতে হরিলুট চলছে বলে অভিযোগ করেছে প্রাকৃতিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন। এই সমিতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ এখন কেজিপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানের (তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মসহ) মাধ্যমে থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে দিনে তাদের অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে ৬২৪ কোটি টাকা মুরগি বিক্রির মাধ্যমে লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর এক দিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে তাদের মুনাফা ৩১২ কোটি টাকা। দেশে প্রতিদিন বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা। সেই বাচ্চা প্রতিটি এখন ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় দেওয়ার কথা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।
আগে থেকেই উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এবার রমজানে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। দোকানে সব ধরনের পণ্যও মিলছে। সারা দেশে সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে। তারপরও রোজার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের কিছু পণ্যের দাম বাড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। (‘পাত্তা দিচ্ছে না সিন্ডিকেট’, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৩ মার্চ ২০২৩)। চিনির শুল্ক কমানো হলেও পণ্যটির দাম এক টাকাও কমেনি। কারণ ছাড়াই পোলট্রি মুরগির দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিচ্ছে। তবে এসবে পাত্তা দিচ্ছে না বাজার সিন্ডিকেট।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনির দাম কমানোর জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করতে এনবিআরকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন এনবিআর থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন চিনির দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা যদি প্রতিশ্রুতি দিয়েও দাম না কমান, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে ভাবতে হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিনি ব্যবসায়ীরা সাত দিনের সময় নিয়েছেন। কেজিপ্রতি ৫ টাকা করে দাম কমানোর বিষয়েও প্রতিশ্রুতি রয়েছে। পণ্যের মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তারপরও কেউ কেউ সুযোগ নিচ্ছে, তারা কারা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ করা তহবিলের উৎস, খাদ্যপণ্য আমদানির ব্যবস্থাপনা কাদের করায়ত্তে, সেই সিন্ডিকেট কেন সরকারকে পাত্তা দিচ্ছে না- বিষয়টি রাজনৈতিক অর্থনীতির ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে, যা খতিয়ে দেখা দরকার।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রমজানকে কেন্দ্র করে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় সব জিনিসের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরন্তু গত বছরের চেয়ে কোনো কোনো জিনিসের দাম শতভাগ বেড়েছে। এর কারণ বা দোষ করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপানো কতটা সমীচিন হবে তা বিশ্লেষণ করতে হবে এবং জনগণকে তা অবহিত করা আবশ্যক।
কেননা পণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ যারা কার্ড করতে পেরেছেন, তারা টিসিবি ডিলারের দোকানে লাইন দিচ্ছেন। যাদের কার্ড নেই, তারা প্রয়োজনের অর্ধেক বা তারও কম পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সন্ধ্যার খাবারের মূল্য সেহেরির সময় বারো আনা (৭৫ শতাংশ) বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীদের করুণ দুর্দশার কথা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়।
এফবিসিসিআইয়ের প্রধান প্রশ্ন রেখেছেন, দুবাইতে আমদানি করা গরুর মাংস ৫০০ টাকায় পাওয়া গেলে বাংলাদেশে উৎপাদিত মাংস ৭৫০ টাকায় কেন কিনতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, রমজান মাসকে সামনে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর, টিসিবিসহ সরকারের সংস্থাগুলো নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এরপরও থেমে নেই বাজার কারসাজি। কিছু পণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও রোজার আগেই পরিকল্পনা করে বাড়ানো হয়েছে সুনির্দ্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম।
নিত্যপণ্যের পাশাপাশি বেড়েছে কাঁচা সবজির দামও। এ ব্যাপারে (পণ্য বা সেবা মূল্য তদারকি ও ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য গঠিত) প্রতিযোগিতা কমিশনের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ও ব্যবসায়ীদের যেমন দায়িত্ব আছে, একইভাবে ভোক্তাকেও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তারা যেন কৃচ্ছ্বতা সাধনের মাস রোজার সময় হুমড়ি খেয়ে পণ্য না কেনেন। কারণ হঠাৎ কোনো পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলে তার দাম বেড়ে যায়। তাই ভোক্তারা যদি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সহনীয় আচরণ করেন, বাজারও সহনীয় থাকবে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র নয় মাস বাকি। এরই মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। রমজান মাসজুড়ে ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি চাঙা করার পাশাপাশি জনদৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ইতোমধ্যেই তারা নামি-দামি হোটেল, রেস্তোরাঁ ও কমিউনিটি সেন্টার বুকিং দিয়ে ফেলেছে।
এবার ইফতার পার্টিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তোড়জোড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমজমাট হচ্ছে ইফতার রাজনীতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই শেষ রমজান। তাই রমজান মাসজুড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার পার্টির আয়োজনের তোড়জোড়ও এবার অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী, বিভাগ-জেলা শহরে শুধু নয় , অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবার গ্রামপর্যায়ে ইফতার পার্টির আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মাধ্যমে নিজ নিজ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের রাজনীতিতে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে; পাশাপাশি গণসংযোগ জোরদার করাও। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে রাজনৈতিক দলগুলো ইফতার পার্টির আয়োজন করেনি। এবার ইতোমধ্যে সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়ে যাওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর ইফতার পার্টি নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
এবার রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ইফতার পার্টিতে সম্পৃক্ত করার পাশাপাশি, সমমনা রাজনৈতিক দল, সমমনা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের বেশি সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে। এ ছাড়া বিদেশী কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রাধান্য দিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা দলীয় পর্যায়ে ইফতার পার্টি আয়োজনের পাশাপাশি প্রতিদিনই বিভিন্ন সমমনা দল ও সংগঠনের ইফতারে অংশ নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরার চেস্টা চলছে, সংযম ও আত্মশুদ্ধি সাধনার এই মাসে। কে কার চেয়ে বেশি দলকে কাছে টানতে পারে, এ নিয়ে প্রতিযোগিতায় মাহে রমজানের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। সিন্ডিকেটকে কেন কথা শুনানো যাচ্ছে না, জনগণকে ‘সেবা করার জন্য’ ক্ষমতায় থাকতে বা যেতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার এই পক্ষপাতিত্ব, এই বিড়ম্বনা জনগণকে সহ্য করতেই হচ্ছে। অথচ প্রত্যাশিত ছিল রাজনৈতিক অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে অপচয়-অপব্যয় বাঁচিয়ে গোত্র-গুষ্ঠি-দলমত নির্বিশেষে গণহারে ইফতারসামগ্রী বিতরণ, খাদ্য সহায়তা প্রদান, জামাকাপড় ও জাকাত বিতরণের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাড়ানো ।
রমজান মাস যেহেতু সংযমের, আত্মশুদ্ধির, সেক্ষেত্রে তথাকথিত তেলো মাথায় তেল দেয়ার ইফতার পার্টির আয়োজনের নামে ‘চাঁদাবাজি’ ব্যবসায়ী বা পণ্য সরবরাহকারীদের উৎপাদন ব্যয় বা ব্যবসার ব্যয় বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে কিনা তাও মাথায় রাখতে হবে।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক; সরকারের সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি পারবে না, তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি হবে না—এ নিয়ে গরম এখন রাজনীতির মাঠ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের নায়ক হিসেবে দাবিদার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবি তো আরও একধাপ বেশি। আওয়ামী লীগকে কেবল নির্বাচনের বাইরে রাখাই নয়, দাবি তাদের দেশের প্রাচী
৬ ঘণ্টা আগেহুমায়ূন আহমেদ ও মেহের আফরোজ শাওনের ছেলে নিষাদ হুমায়ূনের একটা ভাইরাল ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। বেশ মজা পেলাম। সত্যি বললে মজার চেয়েও ছোট্ট বাচ্চার কথায় ভাবনার উদ্রেক হলো। চিন্তার দুয়ার উন্মুক্ত হলো।
৭ ঘণ্টা আগেপরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সার্কুলার অর্থনীতি বা বৃত্তাকার অর্থনীতি এক নবদিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বাংলাদেশে স্বল্প সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে সার্কুলার অর্থনীতির বিকল্প নেই।
৭ ঘণ্টা আগেবগুড়ার শিবগঞ্জে ৪২০ টাকা কেজি দরে নতুন আলু বিক্রি হয়েছে। আজকের পত্রিকায় খবরটি দেখা গেছে ১৮ নভেম্বর। এই দামে বেচাকেনাও হচ্ছে। ক্রেতারাও নাকি এই দামে আলু কিনতে পেরে সন্তুষ্ট!
৭ ঘণ্টা আগে