স্বপ্না রেজা
ব্যক্তির একটি অন্যতম আচরণ অ্যাটিচিউড বা মনোভাব। ব্যক্তির ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতার জন্য প্রয়োজন তাঁর পজিটিভ অ্যাটিচিউড বা ইতিবাচক মনোভাব। সাধারণত দেখা যায়, অনেকেই একজন আরেকজনের অ্যাটিচিউড নিয়ে কথা বলছে, কথা বলতে ভালোবাসছে। অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। হয়তো তারা জানেই না যে একজন ব্যক্তির অ্যাটিচিউড আসলে কী ধরনের আচরণ। কথায় কথায় এমন বলতে শোনা যায় যে অমুকের অ্যাটিচিউড ভালো, তমুকের অ্যাটিচিউড ভালো নয়। অ্যাটিচিউড যে একজন ব্যক্তির আচরণের একটা অংশমাত্র এবং যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে দৃশ্যমান করতে একটি অন্যতম সহায়ক, সেই অন্তর্নিহিত সত্য অনেকেই জানে না। জানার আগ্রহও থাকে না। তার কারণ, জ্ঞানে জানার চেয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিই প্রভাব, প্রতাপ আর আবেগে জানতে ভালোবাসতে শিখেছে। পোশাক-আশাকে যে যাকে যেমনভাবে দেখছে এবং যেটা বাইরে থেকে কেবল দেখা সম্ভব, সেই আলোকে তাকে চিনছে, জানছে, যা কিনা মস্ত ভুল ধারণা বা সিদ্ধান্ত। বলা যায়, অসম্পূর্ণ দেখা এবং প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি তাকে সেইভাবে অভ্যস্ত হতে সহায়তা করেছে। এর নেপথ্যে কিন্তু স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে।
অ্যাটিচিউড বা মনোভাব কী? এটা ব্যক্তির সেই আচরণ, যা ব্যক্তির বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা, জ্ঞান, মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তারই আলোকে কোনো কিছুকে দেখা, তার মূল্যায়ন করা। যেমন কে কাকে কীভাবে দেখে বা দেখছে বা দেখবে সেটা নির্ভর করে তার চিন্তাচেতনা, জ্ঞান, মেধা ও বিশ্বাসের ওপর এবং সর্বোপরি তার অভিজ্ঞতার ওপর। এককথায়, তার অর্জিত শিক্ষার ওপর। যদি তার অর্জিত জ্ঞান, চেতনা ও বিশ্বাস দুর্বল বা নেতিবাচক হয়, তাহলে সে ইতিবাচকভাবে কোনো কিছুই দেখবে না। হাজার চেষ্টায়ও তা দেখবে না। আবার উন্নত তথা ইতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিরা সবকিছুকেই ইতিবাচক দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং সেটা হয় তার অর্জিত জ্ঞান, মেধা, চেতনা ও বিশ্বাসের আলোকেই। এই বিবেচনায় একজন মন্দ ব্যক্তির যেমন অ্যাটিচিউড থাকে, তেমনই থাকে একজন উত্তম ব্যক্তির। পাথর্ক্য হলো, কারোটা মন্দ ও কারোটা উত্তম মনোভাব।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সমাজে এমন অসংখ্য ব্যক্তি রয়েছে, যারা একটুতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে, চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকে। যে প্রতিক্রিয়ায় হয়তো বিশ্লেষণের গুণগত মান ও যৌক্তিকতা থাকে না। সোজা কথায়, হুজুগে চলা ব্যক্তি এরা। অন্যের বুদ্ধিতে, চেতনা ও জ্ঞানে এরা চলতে ভালোবাসে। অনেকটা পরজীবী প্রাণীর মতো। ফলে অনুসরণীয় ব্যক্তির চিন্তাচেতনা পরিবর্তিত হলে এরাও রাতারাতি বদলে যায়। এ-জাতীয় ব্যক্তির নৈতিক বোধ বা আদর্শ বলতে মূলত কিছু থাকে না। যখন যে পাত্রে থাকে, তখন তারা সেই পাত্রের আকার ধারণ করে থাকে। নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শের প্রশ্নে এরা ভাড়া খাটে, অনেকটা খেপ মারার মতো! ফলে এদের মনোভাব কখনোই উন্নত বা ইতিবাচক হয় না। ভালো হোক বা মন্দ হোক, সব বিষয়কেই এরা একই মানদণ্ডে বিচার করে থাকে। মূল্যবোধ বা বিবেচনার দৌড়ে এরা অনেক পেছনে থাকে।
একটা বিষয় লক্ষণীয়, যেকোনো দেশের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিক মূল্যবোধ সেই দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার গুণগত দিকের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সরকারদলীয় রাজনীতির স্বার্থসংশ্লিষ্টতায় পরিচালিত হয়। এমন সরকার জনগণের প্রত্যাশার চেয়ে দলীয় স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনি অধিকার বিষয়ে তারা খুব মনোযোগ দেয় না। ফলে বিষয়গুলো যেনতেনভাবে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। ফলে রাজনৈতিক দলের দর্শন ও আদর্শ ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, তা সংক্রমিত হয় গোটা সমাজে, রাষ্ট্রে। সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রিয়তা, দুর্নীতির মতো অপরাধ আর অনিয়মের বাম্পার ফলন হয়। এটা না বললেই নয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রিক আচরণ দেশকে যেমন ঝুঁকিতে ফেলেছে বারবার, ঠিক তেমনই জনগণের ভেতর দেশপ্রেম ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এককথায় ব্যর্থ হয়েছে। সব রাজনৈতিক সরকার আমলে তাই দেখা গেছে ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ঘৃণ্য ছেলেখেলা। শিক্ষিত হয়েছে কিংবা শিক্ষিত হতে চেয়েছে শুধু কাগজের তৈরি একটা সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য, এমন প্রবণতার শিক্ষার্থী বেশি। আবার ছাত্ররাজনীতি করে অগাধ ধনসম্পদের মালিক বনে যাওয়ার সুযোগ, ব্যাংক-ব্যালান্স গড়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাবিমুখ করেছে, কথাটা মিথ্যে নয়। চারপাশে এমন হাজারও দৃষ্টান্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি এমন হওয়ার পেছনকার অন্যতম কারণ হলো প্রচলিত রাজনৈতিক দর্শন ও রাজনৈতিক নেতারা।
প্রচলিত রাজনীতি যেমন ব্যক্তি, গোষ্ঠীর অ্যাটিচিউড তার মতো করে তৈরিতে সহায়তা করেছে, তদ্রূপ প্রচলিত অপসংস্কৃতি চর্চা ব্যক্তি, গোষ্ঠীর চিন্তাচেতনাকে সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হতে বাধা দিয়েছে। ব্যক্তি হারিয়েছে তার কৃষ্টি, ঐতিহ্য, নিজস্বতা, নিজস্ব গুণাগুণ। সুস্থ ও সঠিক মনোভাব তৈরি হতে আদতে এমন কোনো উপযুক্ত উদ্যোগ ও সেক্টরের কথা কাউকেই ভাবতে দেখা যায়নি। ব্যক্তির ইতিবাচক মনোভাব যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা সুস্থ সমাজ গঠনে, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে অপরিহার্য, তা অনুধাবন করবার কেউ যেন নেই, এমনকি জন্মায়ও না। ধরুন, একজন শাসক, প্রশাসক কিংবা নিয়ন্ত্রক যদি উন্নত চিন্তার ও চেতনার মানুষ না হন, তাহলে তিনি যা করবেন তা কখনোই কারোর কল্যাণে আসবে না। ভুলভ্রান্তি ও অনিয়মকে অবলম্বন করেই তিনি তাঁর কর্মসম্পাদন করবেন। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে চাইবেন, যেটা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটতে দেখা যায়।
আমরা অনেক সময় অনেক ধরনের মতবাদ, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করি পরিবর্তনের জন্য। যেমন দুর্নীতি রোধে দুর্নীতিবাজদের ধরে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়, দায়িত্ব থেকে দায়িত্বশীলকে অপসারণ করা হয়, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের সংযোজন ঘটে। কিন্তু এতে কি সমস্যার সমাধান হয়, নাকি হবে যদি না ব্যক্তি, গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে। অপসারণ করা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত করা অতিসহজ একটি কাজ। কঠিন কাজ সম্ভবত একজন দায়িত্বপ্রাপ্তকে ন্যায়সংগতভাবে উন্নত বা ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন হতে সহায়তা করা। আর এই কাজটি সাধারণত হতে দেখা যায় না। কেউ করে না। কারণ, তাঁরাও উন্নত মনোভাবসম্পন্ন নন। পরিশেষে বলব, গায়ের জোরে ক্ষমতার দাপটে কল্যাণকর পরিবর্তন হয় না, কখনো কোথাও হয়নি। পরিবর্তন আনতে হয় প্রথম তাঁর চিন্তাচেতনায়, যিনি পরিবর্তন আনতে চাইছেন এবং অবশ্যই সেটা তাঁর অ্যাটিচিউডে।
লেখক: স্বপ্না রেজা
কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ব্যক্তির একটি অন্যতম আচরণ অ্যাটিচিউড বা মনোভাব। ব্যক্তির ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতার জন্য প্রয়োজন তাঁর পজিটিভ অ্যাটিচিউড বা ইতিবাচক মনোভাব। সাধারণত দেখা যায়, অনেকেই একজন আরেকজনের অ্যাটিচিউড নিয়ে কথা বলছে, কথা বলতে ভালোবাসছে। অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। হয়তো তারা জানেই না যে একজন ব্যক্তির অ্যাটিচিউড আসলে কী ধরনের আচরণ। কথায় কথায় এমন বলতে শোনা যায় যে অমুকের অ্যাটিচিউড ভালো, তমুকের অ্যাটিচিউড ভালো নয়। অ্যাটিচিউড যে একজন ব্যক্তির আচরণের একটা অংশমাত্র এবং যা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে দৃশ্যমান করতে একটি অন্যতম সহায়ক, সেই অন্তর্নিহিত সত্য অনেকেই জানে না। জানার আগ্রহও থাকে না। তার কারণ, জ্ঞানে জানার চেয়ে অধিকাংশ ব্যক্তিই প্রভাব, প্রতাপ আর আবেগে জানতে ভালোবাসতে শিখেছে। পোশাক-আশাকে যে যাকে যেমনভাবে দেখছে এবং যেটা বাইরে থেকে কেবল দেখা সম্ভব, সেই আলোকে তাকে চিনছে, জানছে, যা কিনা মস্ত ভুল ধারণা বা সিদ্ধান্ত। বলা যায়, অসম্পূর্ণ দেখা এবং প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি তাকে সেইভাবে অভ্যস্ত হতে সহায়তা করেছে। এর নেপথ্যে কিন্তু স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় থাকে।
অ্যাটিচিউড বা মনোভাব কী? এটা ব্যক্তির সেই আচরণ, যা ব্যক্তির বিশ্বাস, চিন্তাচেতনা, জ্ঞান, মেধার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তারই আলোকে কোনো কিছুকে দেখা, তার মূল্যায়ন করা। যেমন কে কাকে কীভাবে দেখে বা দেখছে বা দেখবে সেটা নির্ভর করে তার চিন্তাচেতনা, জ্ঞান, মেধা ও বিশ্বাসের ওপর এবং সর্বোপরি তার অভিজ্ঞতার ওপর। এককথায়, তার অর্জিত শিক্ষার ওপর। যদি তার অর্জিত জ্ঞান, চেতনা ও বিশ্বাস দুর্বল বা নেতিবাচক হয়, তাহলে সে ইতিবাচকভাবে কোনো কিছুই দেখবে না। হাজার চেষ্টায়ও তা দেখবে না। আবার উন্নত তথা ইতিবাচক মনোভাবের ব্যক্তিরা সবকিছুকেই ইতিবাচক দেখতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং সেটা হয় তার অর্জিত জ্ঞান, মেধা, চেতনা ও বিশ্বাসের আলোকেই। এই বিবেচনায় একজন মন্দ ব্যক্তির যেমন অ্যাটিচিউড থাকে, তেমনই থাকে একজন উত্তম ব্যক্তির। পাথর্ক্য হলো, কারোটা মন্দ ও কারোটা উত্তম মনোভাব।
একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে যে সমাজে এমন অসংখ্য ব্যক্তি রয়েছে, যারা একটুতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠে, চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে থাকে। যে প্রতিক্রিয়ায় হয়তো বিশ্লেষণের গুণগত মান ও যৌক্তিকতা থাকে না। সোজা কথায়, হুজুগে চলা ব্যক্তি এরা। অন্যের বুদ্ধিতে, চেতনা ও জ্ঞানে এরা চলতে ভালোবাসে। অনেকটা পরজীবী প্রাণীর মতো। ফলে অনুসরণীয় ব্যক্তির চিন্তাচেতনা পরিবর্তিত হলে এরাও রাতারাতি বদলে যায়। এ-জাতীয় ব্যক্তির নৈতিক বোধ বা আদর্শ বলতে মূলত কিছু থাকে না। যখন যে পাত্রে থাকে, তখন তারা সেই পাত্রের আকার ধারণ করে থাকে। নৈতিক মূল্যবোধ, আদর্শের প্রশ্নে এরা ভাড়া খাটে, অনেকটা খেপ মারার মতো! ফলে এদের মনোভাব কখনোই উন্নত বা ইতিবাচক হয় না। ভালো হোক বা মন্দ হোক, সব বিষয়কেই এরা একই মানদণ্ডে বিচার করে থাকে। মূল্যবোধ বা বিবেচনার দৌড়ে এরা অনেক পেছনে থাকে।
একটা বিষয় লক্ষণীয়, যেকোনো দেশের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি, নৈতিক মূল্যবোধ সেই দেশের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার গুণগত দিকের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সরকারদলীয় রাজনীতির স্বার্থসংশ্লিষ্টতায় পরিচালিত হয়। এমন সরকার জনগণের প্রত্যাশার চেয়ে দলীয় স্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইনি অধিকার বিষয়ে তারা খুব মনোযোগ দেয় না। ফলে বিষয়গুলো যেনতেনভাবে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। ফলে রাজনৈতিক দলের দর্শন ও আদর্শ ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক, তা সংক্রমিত হয় গোটা সমাজে, রাষ্ট্রে। সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রিয়তা, দুর্নীতির মতো অপরাধ আর অনিয়মের বাম্পার ফলন হয়। এটা না বললেই নয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতাকেন্দ্রিক আচরণ দেশকে যেমন ঝুঁকিতে ফেলেছে বারবার, ঠিক তেমনই জনগণের ভেতর দেশপ্রেম ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে চরম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এককথায় ব্যর্থ হয়েছে। সব রাজনৈতিক সরকার আমলে তাই দেখা গেছে ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ঘৃণ্য ছেলেখেলা। শিক্ষিত হয়েছে কিংবা শিক্ষিত হতে চেয়েছে শুধু কাগজের তৈরি একটা সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য, এমন প্রবণতার শিক্ষার্থী বেশি। আবার ছাত্ররাজনীতি করে অগাধ ধনসম্পদের মালিক বনে যাওয়ার সুযোগ, ব্যাংক-ব্যালান্স গড়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাবিমুখ করেছে, কথাটা মিথ্যে নয়। চারপাশে এমন হাজারও দৃষ্টান্ত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি এমন হওয়ার পেছনকার অন্যতম কারণ হলো প্রচলিত রাজনৈতিক দর্শন ও রাজনৈতিক নেতারা।
প্রচলিত রাজনীতি যেমন ব্যক্তি, গোষ্ঠীর অ্যাটিচিউড তার মতো করে তৈরিতে সহায়তা করেছে, তদ্রূপ প্রচলিত অপসংস্কৃতি চর্চা ব্যক্তি, গোষ্ঠীর চিন্তাচেতনাকে সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হতে বাধা দিয়েছে। ব্যক্তি হারিয়েছে তার কৃষ্টি, ঐতিহ্য, নিজস্বতা, নিজস্ব গুণাগুণ। সুস্থ ও সঠিক মনোভাব তৈরি হতে আদতে এমন কোনো উপযুক্ত উদ্যোগ ও সেক্টরের কথা কাউকেই ভাবতে দেখা যায়নি। ব্যক্তির ইতিবাচক মনোভাব যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা সুস্থ সমাজ গঠনে, নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে অপরিহার্য, তা অনুধাবন করবার কেউ যেন নেই, এমনকি জন্মায়ও না। ধরুন, একজন শাসক, প্রশাসক কিংবা নিয়ন্ত্রক যদি উন্নত চিন্তার ও চেতনার মানুষ না হন, তাহলে তিনি যা করবেন তা কখনোই কারোর কল্যাণে আসবে না। ভুলভ্রান্তি ও অনিয়মকে অবলম্বন করেই তিনি তাঁর কর্মসম্পাদন করবেন। ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে চাইবেন, যেটা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটতে দেখা যায়।
আমরা অনেক সময় অনেক ধরনের মতবাদ, প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করি পরিবর্তনের জন্য। যেমন দুর্নীতি রোধে দুর্নীতিবাজদের ধরে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়, দায়িত্ব থেকে দায়িত্বশীলকে অপসারণ করা হয়, নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের সংযোজন ঘটে। কিন্তু এতে কি সমস্যার সমাধান হয়, নাকি হবে যদি না ব্যক্তি, গোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি বা মনোভাবের পরিবর্তন ঘটে। অপসারণ করা কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত করা অতিসহজ একটি কাজ। কঠিন কাজ সম্ভবত একজন দায়িত্বপ্রাপ্তকে ন্যায়সংগতভাবে উন্নত বা ইতিবাচক মনোভাবসম্পন্ন হতে সহায়তা করা। আর এই কাজটি সাধারণত হতে দেখা যায় না। কেউ করে না। কারণ, তাঁরাও উন্নত মনোভাবসম্পন্ন নন। পরিশেষে বলব, গায়ের জোরে ক্ষমতার দাপটে কল্যাণকর পরিবর্তন হয় না, কখনো কোথাও হয়নি। পরিবর্তন আনতে হয় প্রথম তাঁর চিন্তাচেতনায়, যিনি পরিবর্তন আনতে চাইছেন এবং অবশ্যই সেটা তাঁর অ্যাটিচিউডে।
লেখক: স্বপ্না রেজা
কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়
১৬ ঘণ্টা আগেসামরিক সরকার বোঝেওনি, তাদের পরামর্শগুলো হাস্যকর। জুলাই থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় চলছিল বোমা হামলা। ভীত পাকিস্তানি বাহিনীকে নৈতিক সাহায্য দেওয়ার জন্য রাজাকার কিংবা শান্তি কমিটির লোকেরা থাকত বটে, কিন্তু তাদের অবস্থাও পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়ে কোনো অংশে ভালো ছিল না।
১৬ ঘণ্টা আগেক্ষমতার পালাবদলের পর কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন কি দেখা যাচ্ছে—এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। নাগরিক জীবনে যে সমস্যাগুলো ছিল, তার কতটা কেটেছে, এ রকম প্রশ্ন করা হলে ভুক্তভোগী মানুষ নীরবই থাকবেন।
১৬ ঘণ্টা আগেআমার এক বন্ধুর স্ত্রী অকস্মাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। স্ত্রীটি জাপানের, তাঁর নাম কাজুকো। আমার বন্ধু জাপানে লেখাপড়া করতে যান এবং সেখানেই তাঁদের পরিচয়, বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক তৈরি হয়। পরিচয়ের কারণ, আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ত্রাণ কার্যক্রমে তরুণী কাজুকো অংশ নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে মুক্তি
২ দিন আগে